অমিত শাহ হোন বা নরেন্দ্র মোদী, নতুন বছরের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গের ভোট উপলক্ষ্যে গেরুয়া শিবিরের তৎপরতা কিন্তু চোখে পড়ার মতো। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক বাদানুবাদে ততই উত্তপ্ত হচ্ছে বাংলার পরিস্থিতি। একদিকে যেমন লোকসভা নির্বাচনের সাফল্যকে হাতিয়ার করে মসনদ দখলের লড়াইয়ে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি, অন্যদিকে তেমনই ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূলও। এহেন পরিস্থিতিতে ভোটের আগে দলবদলের কালো মেঘ দেখা দিয়েছে শাসক শিবিরের আকাশে। বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে কোণঠাসা করতে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে।
গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার বাংলায় ঝটিকা রাজ্য সফরে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রতিবারই তাঁকে মধ্যাহ্নভোজন সারতে দেখা গেছে আদিবাসী, বাউল কিংবা অন্যান্য কোনো সম্প্রদায়ের বাড়িতে। বাংলায় জনসংযোগ বৃদ্ধির জন্য তৎপর হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। ভার্চুয়াল মাধ্যমে একাধিক বার তিনি রাজ্যের বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সফরের বার্তাও দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গত মাসেই পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসেছিলেন। শান্তিনিকেতনে রোড শোয়ের পর দুপুরের খাওয়া সেরেছিলেন স্থানীয় বাসুদেব বাউলের বাড়িতে। ২০২১-এর শুরুতে ফের একবার বাংলায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর নিয়ে শোনা যাচ্ছে গুঞ্জন।
বিশেষ সূত্রের খবরে জানা যাচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর আগামী সফরে আসতে চলেছেন বনগাঁ অঞ্চলে। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ঠাকুরনগরে আসতে চলেছেন তিনি, সম্প্রতি এমনটাই জানিয়েছেন বনগাঁর বিজেপির সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।
অমিত শাহের পরবর্তী সফরের দিনক্ষণ এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত হয় নি। তবে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে আসতে পারেন তিনি, শোনা গেছে গুঞ্জন। শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন জানুয়ারি মাসের ১৯ বা ২০ তারিখ বনগাঁর ঠাকুরনগরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসার কথা হয়েছে। তাঁর দাবি, কলকাতায় ডেকে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
ঠাকুরনগরে অমিত শাহের আসার কারণ স্পষ্ট ভাবে জানা যায় নি। কিন্তু সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে চোখ বোলালে তা অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না মোটেই।
পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া ক্ষোভের আঁচ ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে দিল্লিতেও। নিজেদের হতাশার কথা প্রকাশ্যেই জানিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। বনগাঁর বিজেপি সাংসদের পাশাপাশি তিনি অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতিও বটে। তিনি বলেন, “আমাকে জানানো হয়েছে সম্ভবত জানুয়ারি মাসের ১৯ অথবা ২০ তারিখ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠাকুরনগরে শ্রীধাম ঠাকুরবাড়িতে আসছেন।” মতুয়া সম্প্রদায়ের মানভঞ্জনের জন্যেই যে ফের একবার রাজ্যে পা রাখতে চলেছেন অমিত শাহ, তা বলাই বাহুল্য।
জানা গেছে, কিছুদিন আগেই কলকাতায় শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় সহ বঙ্গ বিজেপির প্রথমসারির নেতারা। কেন্দ্রীয় সরকারের সিএএ আইন কার্যকরকে কেন্দ্র করেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে রাজ্যের মতুয়াদের মধ্যে। শান্তনু ঠাকুর জানিয়েছেন, “এখানে এসে উনি (অমিত শাহ) সিএএ কার্যকর করা নিয়ে বক্তব্য জানাবেন।’’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ পাশ হয়েছিল আগেই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই আইন কার্যকর করা যায় নি। এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্যই সিএএ এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয় নি। অতিমারী পরিস্থিতি মিটলেই আইন কার্যকর করার কাজ শুরু করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে করোনা ভ্যাকসিন বাজারে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছে কেন্দ্র জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।