আমরা যখন পৃথিবীর ইতিহাস পড়ি, সমস্ত দেশের সমস্ত যুগের বেশিরভাগ রাজত্বের ইতিহাসেই দেখতে পাই হত্যাকাণ্ডের নানান রোমাঞ্চকর ঘটনা। ভাবলে ভীষন অবাক লাগে যে মানবসভ্যতার শুরুর সময় থেকেই একদিকে যেমন মানুষের প্রতি মানুষের স্নেহ, মায়া, মনুষ্যত্ববোধ বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা হয়ে চলেছে, তেমনই আবার একই সঙ্গে মানুষ মারার নানান ফাঁদ তৈরির চেষ্টাও করছে এই মানুষই। পৃথিবীর ইতিহাসে তাই বিখ্যাত সমস্ত মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে বারবার, শয়ে শয়ে মানুষ মরেছে, এই সমস্ত ফাঁদ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য আবার মানুষ তৈরি করেছে অভিনব সমস্ত রাস্তা।
https://www.youtube.com/watch?v=HPuurjfb_Bo

গিলোটিন এর ইতিহাস
https://banglakhabor.in/2020/11/18/%e0%a6%aa%e0%a7%83%e0%a6%a5%e0%a6%bf%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%b0-%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a6%95%e0%a6%bf%e0%a6%9b%e0%a7%81-%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a6%a8/
পৃথিবীর সবচাইতে কুখ্যাত যে মারণযন্ত্র আজ অব্দি মানুষকে বাকরুদ্ধ করে রেখেছে তার নাম গিলোটিন। ভাবতে ভীষন অবাক লাগে যে এই যন্ত্রের আবিষ্কর্তা আবার একজন ডাক্তার। ডা. জোশেফ ইগনেস গিলোটিন এই মারণ যন্ত্রের প্রবর্তক। কতটা সহজে মৃত্যুদণ্ড দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে তা ভেবেই ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন এই যন্ত্রের প্রবর্তন করেন হৃদয়হীন এই মানুষটি।
সতেরোশ’ ঊননব্বই-এর ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ দখলের মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের সূচনা হয়। সমাজের সর্বস্তরে সমতার দাবী ফরাসি বিপ্লবের একটি অংশ। এই সময়েই অপরাধীদের জন্য অভিনব এবং দ্রুত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দাবী জানানো হয়। ডাক্তার জোসেফ ইগ্নেস গিলোটিন ফরাসি জাতীয় পরিষদ কাছে নাকি লম্বা লম্বা ৬টি প্রবন্ধ পেশ করেন তাঁর ডিজাইন করা এই মরণফাঁদ কার্যকর করবার সপক্ষে । আজকে ভাবলে শিউরে উঠতে হয় যে মৃত্যুদণ্ডকে ঢেলে সাজানোর বিশদ বিবরণ ছিল এই প্রবন্ধগুলোতে। Approval পাবার পর ১৭৯২ সালের ২৫ এপ্রিল ডি গ্রিভ শহরে এই যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়।

তার তিন বছরের মধ্যে স্বয়ং ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইকেই ধরে গিলোটিনে চালান করে দেওয়া হয়। মুহূর্তের মধ্যেই মাটিতে গড়িয়ে পড়ে রাজার মুণ্ড। এরপর বহু বহু তাবড় বিপ্লবী, অভিজাত আর সাধারণ মানুষের মুণ্ডচ্ছেদ এভাবে হয়েছে তার কোনও হিসেব নেই। কাঠের সুদৃশ্য বেঞ্চের ওপর উপুড় করে শুইয়ে গোল করে কাটা হাড়িকাঠের মধ্যে আটকে, মাথার ওপর উঁচু থেকে একটা ভারি তির্যক ধারালো ছুরির পাত ছেড়ে দেওয়া হত আর তাতেই নিমেষে জ্যান্ত একটি মানুষ কবন্ধ হয়ে পড়ে।
ডাঃ গিলোটিনের নামে এই যন্ত্রের নামকরন হলেও অভিশপ্ত এই যন্ত্রের কবলে পড়ে প্রাণ হারান স্বয়ং এর আবিষ্কর্তাও। ফ্রান্সে বহুদিন পর্যন্ত এই মরণ ফাঁদ ব্যবহৃত করা হয়েছে মানুষ মারার জন্য, এই 1977 সাল পর্যন্তও। আজও এই যন্ত্রের ব্যবহার আছে বটে। তবে তা আর মুণ্ডু কাটার কাজে ব্যবহার হয় না, তা কাজে লাগে কাগজ কাটতে। তবে আজ অব্দি মানুষ মারার যত কল মানুষের হাতে তৈরি হয়েছে, পরমাণু বোমার আগে পর্যন্ত গিলোটিনের বীভৎসতা সব্বাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে, একথা ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।