নিজস্ব সংবাদদাতা- এবছরের গঙ্গাসাগর মেলা শুরু হচ্ছে ১৩ জানুয়ারি। ১৪ জানুয়ারি ভোরবেলায় মকর সংক্রান্তির স্নান এবং ১৫ জানুয়ারি ভোরবেলায় আক্ষিণের স্নান আছে। মহামারী পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা প্রশাসন যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার জেলাশাসক পি উল্গানাথন জানিয়েছেন পূণ্যার্থীদের মধ্যে যাতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় সেই দিকে নজর দেখেই তারা কাজ করছেন।
তবে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতির বিষয় মাথায় রেখে এখনো পর্যন্ত কোনো জায়গায় ২০০ জনের বেশি মানুষের জমায়েত করার অনুমতি নেই। দুর্গা পুজোর সময় এবং বড়দিনের উৎসবেও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, যার মূল উদ্দেশ্য মানুষ যাতে ভিড় করতে না পারে। আবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতিতে কিভাবে গঙ্গাসাগর মেলার অনুমতি দিল? মামলাকারী হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছেন করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে আদালত যেন রাজ্য সরকারকে এই বছরের জন্য গঙ্গাসাগর মেলা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়।
কলকাতা হাইকোর্ট এই মামলা নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট রায় না দিলেও রাজ্য সরকারের প্রস্তুতি থেমে নেই। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তারা বাফার জোনের সংখ্যা এই বছর বাড়াবে। ইতিমধ্যেই গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের জন্য হোগলা ঘাসের ছাউনি বানানো শুরু হয়ে গিয়েছে। একাধিক মেডিকেল ক্যাম্পের পাশাপাশি দু’টি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রাখা হচ্ছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন করোনা পরিস্থিতির জন্য তিনি এবার গঙ্গাসাগর মেলায় যাবেন না। ভার্চুয়ালি ব্যবস্থার মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী কপিল মুনির আশ্রম পুজো দেবেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন গঙ্গাসাগর মেলায় যেহেতু ভিন রাজ্যের অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন তাই করোনা সংক্রমণ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেতে পারে। তাদের বক্তব্য রাজ্য প্রশাসন যতই চেষ্টা করুক না কেন লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর ভিড় সামলে পরস্পরের মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা যথেষ্ট কঠিন।
গঙ্গাসাগরের স্থানীয় বাসিন্দারা চাইছেন এই মেলা যেন সফলভাবে হয়। তারা এটিকে অবলম্বন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন। করোনা লকডাউন এবং আম্ফান ঘূর্ণিঝড়ের ফলে গঙ্গাসাগর দ্বীপসহ আশেপাশের সমস্ত অঞ্চলের মানুষজনের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। লকডাউনের কারণে তাদের বেশিরভাগই রুটি রুজি হারিয়ে প্রায় পথে বসেছেন, এই অবস্থায় যদি মেলা হয় তাহলে তারা দুটো পয়সা রোজগারের মুখ দেখবেন বলেই অনেকে জানিয়েছেন। যদিও এবারের গঙ্গাসাগর মেলায় যথেষ্ট পুণ্যার্থী সমাগম হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে তাদের মধ্যেই।
সাধু-সন্ন্যাসী সমাগম অন্যবারের মতো না হলেও অল্প অল্প করে বেশকিছু সন্ন্যাসী ইতিমধ্যেই গঙ্গাসাগরে পৌঁছে গিয়েছেন। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা প্রশাসন এবং রাজ্য সরকার পক্ষ থেকে এই মেলার জন্য গঠন করা স্টিয়ারিং কমিটি বর্তমানে সফলভাবে মেলা সংগঠন কাজেই ব্যস্ত। তারা জানিয়েছে হাইকোর্টের রায় হাতে আসার পর তা নিয়ে পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্বন্ধে ভাবা যাবে।