আর দু’মাস বাদেই পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ফের একবার রাজ্য রাজনীতিতে জ্বলন্ত ইস্যু হয়ে উঠেছে নন্দীগ্রাম। বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা হলে প্রথম অধ্যায়েই হয়ত এই জায়গার নাম লেখা থাকবে। আর থাকবে একটা তারিখ- ১৪.০৩.২০০৭। কারণ, লাল পার্টির জমানায় ঠিক এই দিনেই লাল হয়ে গিয়েছিল নন্দীগ্রামের পথ-ঘাট। সামান্য এক কৃষক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গোটা বিশ্বের নজরে চলে এসেছিল আজকের তৎকালীন অখ্যাত অপরিচিত বাংলার এই গ্রামটি।

নন্দীগ্রাম
kolkata 24×7

২০০৭ সালের মার্চের সেই ১৪ তারিখে ১৪ জন জলজ্যান্ত মানুষের মৃতদেহ আর অসংখ্য মহিলার ধর্ষিতা শরীর সাক্ষী ছিল নন্দীগ্রাম-সহ গোটা রাজ্য। রাজ্যের রাজনৈতিক মসনদে পরিবর্তন হয়তো ঘটেছিল ২০১১-তে। কিন্তু বীজ বপন হয়ে গিয়েছিল সেই দিনই। ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি। সেদিন তৃণমূল সমর্থিত কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সদস্যদের সাথে সিপিএম ক্যাডারদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে ও নিহত হয় ৬ জন।

এরপর সেই এলাকা দখলমুক্ত করতে ১৪ মার্চ বিশাল পুলিশ বাহিনী দুদিক থেকে নন্দীগ্রামের দিকে অগ্রসর হয় ও আন্দোলনকারীদের বাধার মুখে পরে। তারপরই চলে নির্বিচারে গুলি। পুলিশের আড়ালে সিপিএমের হার্মাদ বাহিনীও আক্রমণ চালায় বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর। প্রাণ দিয়ে সেই আক্রমণ প্রতিহত করেন নন্দীগ্রামের মানুষ। অনেক জীবনের বিনিময়ে সেশ অবধি ব্যর্থ হয় পুলিশি অভিযান।

12 51 32 images
frontline

নারকীয় সেই হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এই নৃশংসতার তুলনা টানেন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে। এরপর থেকে শুধু নন্দীগ্রাম কেন, সারা বাংলা জুড়েই বর্তমান সময়ে সিপিএমের যে কোমরভাঙা অবস্থা, তার ললাটলিখন বোধহয় সেই দিনই লেখা হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আজও ঘরোয়া আলোচনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে ওঠেন, নন্দীগ্রামের সেই দিনগুলির কথা বড্ড মনে পড়ে। স্বাভাবিক। তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ারে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম নাম দুটোর গুরুত্ব তাঁর চেয়ে ভালো আর কেই বা জানে।

12 51 42 images
Outlook india

তবে, পরিশেষে একটাই কথা। সবই হয়েছে। নন্দীগ্রাম দিবস হিসেবে আলাদা দিন চিহ্নিত হয়েছে। বিরাট শহীদ বেদি হয়েছে। এদিকে, তৎকালীন অনেক কর্মীর (অধুনা নেতাদের) বিশাল অট্টালিকার মতো বাড়িও হয়েছে (যা ক্রুদ্ধ করেছে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকেও), কিন্তু নন্দীগ্রাম ক্ষতে কি প্রলেপ পড়েছে? প্রাণ আর মৃত্যুর ব্যবধান কতটা, কে জানে। সামনে আবার একটা বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে আবার উত্তপ্ত হচ্ছে নন্দীগ্রাম। তা দেখে স্বজনহারা মানুষগুলোর কি আর মনের মধ্যে উঁকি দেয় না সেইদিন? কে জানে!