গতকাল পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা বর্ধমানের কাটোয়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক মুঠো করে চাল ভিক্ষা করেন। এমনকি সন্ধ্যাবেলায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি জানান বিজেপির রাজ্য নেতারা প্রায় ৪০ হাজার গ্রামে গিয়ে এক মুঠো করে চাল ভিক্ষা করবে, তার বদলে পরিবারগুলিকে বিজেপির পক্ষ থেকে সবজি আনাজ দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।বিজেপির দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে এই ভিক্ষা করা চাল দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে গরীব ও দুঃস্থ মানুষদের খাওয়ানো হবে।

এই কর্মসূচীর বেশ একটা গাল ভরা নাম দেওয়া হয়েছে বিজেপির পক্ষ থেকে- ‘মুষ্টি ভিক্ষা কর্মসূচি’।প্রকাশ্যে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে তারা এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলবে, তাদের কি দাবি-দাওয়া সুবিধা-অসুবিধা আছে তা নিয়েও আলোচনা করা হবে। কিন্তু সর্বভারতীয় বিজেপির অন্দরে কান পাতলে অন্য কথা উঠে আসছে।

নাড্ডা পশ্চিমবঙ্গ সফরে আসার আগে গুজরাটে গিয়ে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসেন। সেই আলোচনায় আরও বেশকিছু বিজেপি শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন। অভ্যন্তরীণ সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে মোহন ভাগবত সরাসরি বিজেপি সভাপতিকে প্রশ্ন করেন কেন দেশের কৃষকরা এতটা ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে? ঘটনা হল এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি জেপি নাড্ডা। এরপর মোহন ভাগবত নির্দেশ দেন কৃষকদের ক্ষোভ দূর করার উদ্দেশ্যে বিজেপির পক্ষ থেকে যেন সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়।

স্বাভাবিকভাবেই আরএসএসের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ আসার পর তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি বিজেপির পক্ষে। সেই সঙ্গে সামনেই পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা ভোট আছে। তাই বিজেপি এমন একটি কর্মসূচি তৈরি করে যার মাধ্যমে ভোট মুখী রাজ্যগুলিতে নিবিড় জনসংযোগ যেমন গড়ে তোলা যাবে তেমনি কৃষক আন্দোলনের ফলে তাদের গায়ে কৃষক বিরোধী যে লেবেল সেঁটে গিয়েছে সেটাও তুলে ফেলা সম্ভব হবে। তারই ফলশ্রুতি মুষ্টি ভিক্ষা কর্মসূচি।

যদিও বিজেপির এই উদ্দেশ্য আদৌ কতটা সফল হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে। কারণ বিজেপি যতই দেখানোর চেষ্টা করুক পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকরাই কেবলমাত্র কৃষক আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, আসল বিষয়টি কিন্তু মোটেও তা নয়। দেশের সব অঞ্চলের কৃষকরা এই আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা এই আন্দোলনের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এই অবস্থায় মুষ্টিভিক্ষা কর্মসূচি চালাতে গিয়ে বিজেপি নেতাদের অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হতে পারে বলেও অনেকে মনে করছেন।

তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় বিজেপি যে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গকে তা এই রাজ্য থেকে মুষ্টি ভিক্ষা কর্মসূচি শুরু করার ঘটনার মধ্য দিয়েই পরিস্কার। গতকাল কাটোয়া থেকেই এই কর্মসূচি শুরু করেন জেপি নাড্ডা। স্বাভাবিকভাবেই তিনি প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি কর্মসূচি রাজ্যে চালু না করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং তৃণমূলকে নিশানা করেছেন। এখন দেখার মোহন ভাগবতের নির্দেশের পর এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিজেপি কৃষকদের উদ্বেগ নিরসন করে তাদের মন ছুঁতে পারে কিনা।