ইতিহাস থেকে নেওয়া সাক্ষী কি বাঁচাতে পারবে নুসরতকে এইবার…?
পারিবারিক জীবনের ছায়া এমনভাবে গ্রাস করেছে, সংসদ তথা অভিনেত্রী, টলিউডের হার্ট থ্রব শ্রীমতি নুসরত জাহান কে । যেখানে দেখা যাচ্ছে নিখিল জৈন এর সাথে তার বিবাহ, যা কিনা ভেঙে গেছিলো অনেকদিন আগেই… কিন্তু নতুন করে রহস্যের দানা বাঁধে যখন কোন একটি সূত্র ধরে বেশ কতগুলি নিউজ চ্যানেল এটি দাবি করতে থাকে যে নুসরত এখন সন্তানসম্ভবা। এরপর তার দিকে চলে আসতে থাকে একের পর এক প্রশ্ন যা কাঠ গড়ায় তোলে তার বন্ধু যশ কে।
এরপর দাবি, বাদ-প্রতিবাদ সবকিছু শুরু হয় নিখিল এবং নুসরাত দুদিকেই…. যা বেশ ব্যক্তিগত তথ্য কে জনসমক্ষে আনে, সে ক্ষেত্রে দর্শক এবং তৃণমূল বিরোধীরা বিষয়টিকে বেশ হাতিয়ার করেই এগিয়েছে। প্রশ্ন ওঠে নিখিল-নুসরতের বিবাহের বৈধতা নিয়েও। জানিয়ে সাধারণ জনগণ থেকে বড় বড় নেতা কেউই কটাক্ষ করতে ছাড়েনি, কারণ বিষয়টি ব্যক্তিগত হলেও সে একজন পাবলিক ফিগার। আর আমাদের মতন মিডিয়া তো খুঁজে পেলে ছাড়ার উপায় নেই।


কিন্তু সবথেকে চিন্তার বিষয় হল দেশ কতগুলি, যা থেকে যে প্রশ্নগুলো উঠে আসছে তা হল ঃ-
১. যদি সত্যিই নুসরাত মাতৃ সম্ভবা হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে তার পিতৃপরিচয় নিয়ে কেন এত টানাটানি ?


বিষয়টি কটু হলেও বাস্তব। এ জিনিসের কোন অমান্য তা নেই যা আজও আমরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করি যেখানে পিতার পরিচয় শিশুর ক্ষেত্রে আগে গ্রহণযোগ্য হয়। সেখানে সন্তানের পিতাকে হবে প্রশ্নটিই এইজন্য করা হয় না যে, আদৌ সন্তানের পিতা কে বরঞ্চ এটি জানার উৎসুকতা জনগণের বেশি থাকে যে সন্তানের জেনেটিক্যাল পিতা কে? কারণ তা থেকে কোন এক নারীর প্রতি আঙ্গুল তুলে এটি বোঝানোর সহজ হয় যে সে এখনো নিকৃষ্টতমা পুরুষ জাতি থেকে।
কারণ যদি সত্যি পিতার পরিচয় এই কারণে জানার হয়ে থাকত যে সন্তান লালন-পালন কিভাবে হবে সে ক্ষেত্রে এটি নিশ্চিত যে অর্থনৈতিক দিক থেকে বর্তমানে নুসরাত যে পরিমাণে সচ্ছল তাতে একজন সন্তান লালন-পালন করা তার পক্ষে যথেষ্ট সহজসাধ্য এবং পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী 90 শতাংশের অধিক পুরুষের মাসিক আয় থেকে তার মাসিক আয় গড়ে অধিক। সে ক্ষেত্রে এটি বলা উচিত যে রিতা যেই হোক না কেন সেটি নিয়ে তোলপাড় করা কখনই উচিত নয় কারণ একটি নারীর ইচ্ছা হলে হতেও পারে যে সে তার পছন্দের সন্তান তার পছন্দের পুরুষের থেকে নিতে পারে।
২. এই সন্তানের প্রকৃত পিতা কে ?
প্রথমত বলা উচিত যে সন্তান নিয়ে এখানে আলোচনা হচ্ছে তার এখনও জন্ম হয় নি, বা তার অস্তিত্বের প্রকৃত প্রমাণ পাওয়া যায়নি সে ক্ষেত্রে। এই প্রশ্নটি কেন্দ্র করে যে মার্কেটিং সৃষ্টি করা হয়েছে , সেটি নিতান্তই সৃষ্টি করা হয়েছে কারণ আজও সমাজ সুযোগ পাচ্ছে কোন নারীকে তার সামাজিক অবস্থান বা বলা ভাল “অওকাদ” বোঝাতে। ভাবুন যদি এটি একটি পুরুষের সন্তান হতো সেক্ষেত্রেও কি তার মাতৃ পরিচয় নিয়ে এত প্রশ্ন সমাজের থাকতো? ভাবুন ভাবুন সময় আছে…
৩. কেন সকল প্রশ্নের উত্তর দিলেও এই প্রশ্নটি কে নুসরাত এড়িয়ে চলছেন ?
কে কি বলল জানিনা, এবং গ্যারান্টি দিচ্ছি এই লেখা টি অবশ্যই কোন পেইড প্রমোশন নয় কিন্তু আশাকরি নুসরাত সমাজের যে জায়গায় অবস্থান করে সেক্ষেত্রে যথেষ্ট অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েই এই ধরনের অহেতুক বিষয়গুলিকে পাত্তা না দেওয়ায় তার পক্ষে কাম্য মনে হয়ে হয়ত সে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।
৪. এক্ষেত্রে যশের বক্তব্য কী ?
এক্ষেত্রে অবশ্যই বলব যশের বক্তব্য ছিল যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং সে টুইটারে সেটি শেয়ার করেছে আগে থেকেই…
‘একজন চালাক মানুষ বিষয়টিকে নিয়ে উত্তেজিত হয়না, এবং একজন বুদ্ধিমান মানুষ বিষয়টি মিটিয়ে নেয়’
৫. এক্ষেত্রে নিখিল জৈন এর বক্তব্য কী ?
এক্ষেত্রে নিখিল যে বক্তব্য পেশ করেছে সেই হিসাবে বিগত কয়েক মাস ধরেই নুসরাত তার সঙ্গে থাকছেন না, এবং তিনি এই যে সন্তানের আলোচনা হচ্ছে তার পিতৃপরিচয় এর দাবিকেও নিজের কাছ থেকে ঝেড়ে ফেলা সহ নুসরাতের ওপরে অর্থনৈতিক দাবী দাওয়া করেছে…
৬. রাজনৈতিক রঙ কেন লাগছে বিষয়টিতে ?
কারণ খুবই সহজ নুসরাত একজন রাজনৈতিক মুখ এবং যেহেতু সম্পর্ক নিয়ে এই বিবাদ মীমাংসা সেটি একজন মুসলিমের সাথে হিন্দুর বিবাহ এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু-মুসলিমের নাম করে ইংরেজ শাসন কালে মত নতুন করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চলেছেন রাজনৈতিক নেতারা এবং সেই কথাগুলি কানে নিলে আপনার আমার মত সাধারন জনগণের ক্ষতি হবে নিশ্চিত
৭. কেন বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে সমস্যা এবং আদৌ কি তারা ( নুসরাত এবং নিখিল জৈন) বিবাহিত ছিল ?
এই বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এখানে কোনরকম আলোচনা করো বেশ তর্কসাপেক্ষ কারণ বিষয়টি নিয়ে অলরেডি কোর্টে মামলা চলছে। কিন্তু যদি আমরা বাস্তবতাকে সামনে রাখি সে ক্ষেত্রে যেহেতু এই বিবাহ ভারতের বাইরে হয়েছিল এবং তার বিবাহ বিচ্ছেদ করতে গেলে সরকারি নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করতে হয় সে ক্ষেত্রে দেশের বাইরে হওয়া যেকোনো বিয়ে তখনই বৈধ বলে ধরা হয় যদি সেটি স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট এর মাধ্যমে ম্যারেজ বা বিবাহ রূপে আগে গণ্য হয়ে থাকে। যদিও বর্তমানে এক বছরের অধিক লিভ ইন করলেও তাকে বিবাহ সমতুল্য ধরা হয় অনেক সময় আইনগতভাবে। এখানে আরো একটি প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যেটি নিখিল দাবি করেছে যখনই তিনি নুসরাতকে বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে জানিয়েছিলেন নুসরাত নানা অজুহাতে দিকে ঠেলে দিয়েছে, এখন দেখার বিষয় আদালতে বিচারটি কোন দিকে যায়
৮. এসব থেকে কি এই বোঝা যাচ্ছে যে টলিউডে আজকাল বহুবিবাহ প্রথার প্রচলন হয়েছে?
এই কথাটা কিন্তু বেশ সত্যি হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকের সময় এ। যেখানে অধিকাংশ টলিউডের এমনকি বলিউডেও দেখা যাচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের বাঁধন খুব দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং সংসার বেশিদিন টিকে না। এখানে আমরা এমন একটি দেশে বাস করি যাদের কাছে সিনেমা হল দেবতার আরাধনা মতোই পবিত্র এবং দেবতার আরাধনা যতটা মন দিয়ে করা হয় ভারতীয় জনগণ নিজেদের এতটাই সিনেমাপ্রেমী মনে করেন যে বিষয়টি তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ থাকে সিনেমা এবং সিনেমায় অভিনয় করা সকলের জীবনযাপন প্রণালী গুলিও। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে রচনা ব্যানার্জী, শ্রাবন্তী, প্রসেনজিৎ, মিঠুন চক্রবর্তী, সকলেই একের অধিক বিবাহে আবদ্ধ হয়েছেন। এমনকি অন্যান্যরাও এখনো সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি যে তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া উচিত কি উচিত নয়।
৯. এসবের মধ্যে আমাদের কি লাভ বা ক্ষতি?
বিষয়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ, ভেবে দেখুন যেখানে সিনেমা এবং সিনেমায় অভিনয় করা প্রত্যেকের জীবন যাপন আমাদের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ সেখানে তাদের জীবনের এই ধরনের বিষয়গুলি যা কিনা আমাদের বাস্তব জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে এমনকি ফেলছে আর আমরা আমাদের মূল্যবান সময় এসবের প্রতি প্রদান করে এই জিনিস গুলির মজা কৌতূহলবশত উৎসুখতা দেখাচ্ছি, তাদের কাছে এটি অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে এই ঘটনাগুলি আমাদের উপরেও এমনটি প্রভাব ফেলছে যে আমাদেরকে মনে হতে শুরু হয়েছে বহুবিবাহ, লিভ ইন, এবং দেরিতে বিবাহ করা হতো বিবাহ না করা সাধারণ বিষয়। আমি বলছি না বিষয়টি ভালো বা খারাপ কিন্তু যখন এই বিষয়গুলি সাধারন হতে লাগে এবং যেটি আগে সাধারন ছিলনা তখন লাভ বা ক্ষতি তো বুঝিনা কিন্তু আমরা যে এর থেকে বিশেষভাবে প্রভাবিত তার কোন দ্বিমত নেই।
১০. নুসরাতের এখন কি করা উচিত ?
একটি ঘটনা বলি, কারো সাথে কারো তুলনা নয়, বরঞ্চ নিছকই একটি উদাহরণ হিসাবে নিকৃষ্টতম বিষয় কেই টানলাম। কয়েকদিন আগে অনলাইনের মাধ্যমে কেশব দে নামের একজনের বেশকিছু কারসাজি ধরা পড়ে, এখন বিষয় হল কেশব দে ছোট হলেও পরিমাণে এত ছোট নয় যে তার সাথে তুলনা করা যায় না নুসরাতের। যদিও এসবের কাজটি ছিল যথেষ্ট জঘন্য কিন্তু সে যদি নিজের ভুল স্বীকার করে হাত জোড় করে মাফ চেয়ে পুনরায় নিজের জীবন শুরু করতে পারে…
সে ক্ষেত্রে এটি সত্য যে নুসরাত তো এখনো পর্যন্ত কোন অন্যায় করেনি তবে তাকে এসব নিয়ে না ভেবে যেমনটি চলছে এই মিডিয়া এবং সমস্ত জনগণ কে নিজের ব্যক্তিগত জীবন থেকে আপাতত ভাবে কোন তথ্য প্রদান না করে সাধারণ কাজে মনোনিবেশ করলেই হবে…
( মতামত সম্পুর্ণ ব্যক্তিগত…পুনরায় স্বীকার করছি কেশব দের সাথে তুলনা করা কোনোমতেই সাজে না কিন্তু যদি ওই ঘটনাটি মানুষ এই কদিনের মধ্যেই ভুলে যায় তো আশাকরি এই সামান্য বিষয়টি ভুলতে মানুষের খুব বেশি সময় লাগবে না)