নেটফ্লিক্স নিঃসন্দেহে আজ পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত এক ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ এই প্ল্যাটফর্মে দিনের অনেকখানি সময় কাটান। বিশেষ করে আজ এই ঘরবন্দি অবস্থায় এই ধরনের মাধ্যমই আমাদের বিনোদনের একমাত্র উপায় হয়ে উঠেছে। একাধিক সিনেমা, ডকুমেন্টারি, ওয়েব সিরিজ এখানে পাওয়া যায়, বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ভাষার, বিভিন্ন সংস্কৃতির নানান দৃশ্যগ্রাহ্য বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডের সন্ধান এইখানে আমরা পেয়ে থাকি। এই লেখায় বিশেষ করে উল্লেখ করতে পারা যায় এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে ট্রেন্ডিং একটি বিশেষ ওয়েব সিরিজের কথা। যার চতুর্থ সিজন এই মুহূর্তে নেটফ্লিক্সে দেখতে পাচ্ছি আমরা।
ইংল্যান্ডের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ আজ পৃথিবীর সবচাইতে দীর্ঘস্থায়ী শাসকদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর এই চলার পথ কিন্তু খুব সুগম নয়। সিংহাসনে নিজের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য, পরিবারের বিভিন্ন সদস্যদের মধ্যের সমস্যা সমাধানের জন্য, দেশকে নানান বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য তাঁকে দিতে হয়েছে নানান মুল্য। একইভাবে নানান মুল্য দিয়েছেন রাজপরিবারের নানান সদস্যও । এই গল্প প্রায় সত্যি সমস্ত আকর্ষণীয় ঘটনাবলীর মোড়কে উপস্থাপন করছেন পিটার মর্গান, পরিচালক। এই গোটা ওয়েব সিরিজের পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে নানান আকর্ষণীয় তথ্য। একটু নজর দেব তাঁদের দিকে—
https://www.oprahmag.com/entertainment/tv-movies/a29777089/does-queen-elizabeth-watch-the-crown/
নেটফ্লিক্সের The Crown
- এতদিন পর্যন্ত যে কটি ওয়েব সিরিজ বানানো হয়েছে, এই সিরিজটি এখনও পর্যন্ত তাদের মধ্যে অন্যতম মূল্যবান। এর সঠিক বাজেট নিয়ে প্রোডিউসারেরা মুখ খুলতে রাজি না হলেও এযাবৎ বানানো সমস্ত ওয়েব সিরিজকে বাজেটে ছাড়িয়ে গিয়েছে “the crown”। প্রথম সিজন তৈরিতে প্রায় ১৩০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়।
- ব্রিটেনের রাজপরিবারের উপর ভিত্তি করে বানানো এই সিরিজের সমস্ত অভিনেতাই ইংল্যান্ডের অধিবাসী। উচ্চারণে যাতে সমস্যা না হয় তাই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা। শুধু উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকাভিনেতা জন লিলিথগো এই সিরিজের একমাত্র আমেরিকান অভিনেতা। বিখ্যাত চার্চিলের ভূমিকায় নিজেকে মানানসই করে তোলার জন্য এমনকি নিজের নাকের মধ্যে তুলোর বল গুঁজে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা।
- বাকিংহাম প্যালেসের অলিগলি তৈরি করার জন্য প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়েছে ডিজাইনার টিমকে। কিন্তু এই তথ্য বিশ্বাস করা সত্যিই মুশকিল যে এই সিরিজের বেশিরভাগ অভিনেতা কোনও দিন বাকিংহাম প্যালেসের ভেতরে যাননি। তবে প্রায় ৭৮টি ভিন্ন ভিন্ন সেট তৈরি করতে হয়েছে এই সিরিজের জন্যই।
- চতুর্থ সিজনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় চরিত্র হলেন প্রিন্সেস ডায়ানা। আর এই সিরিজে ডায়ানার চরিত্রে অভিনয় করছেন এমা করিন। দর্শকেরা তাঁর সঙ্গে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন যুবরানির আশ্চর্য সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন বারবার। আর ডায়ানার চরিত্রে তাঁকে মানিয়েছেও যথাযথভাবেই। ডায়ানার হাঁটাচলা, ম্যানারিজম, স্টাইল স্টেটমেন্ট তিনি আত্মস্থ করেছেন নিখুঁতভাবেই। এমনকি তাঁর জীবনের ওঠাপড়া, মানসিক নানান ঝড়ঝাপটা খুব সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন এমা। তবে এর জন্য ডায়ানার সমস্ত ভিডিও তাঁকে দেখতে হয়েছে প্রায় একশোবার করে।
- নেটফ্লিক্সে কিছুদিন আগেই এই সিরিজের চতুর্থ সিজন রিলিজ হয়েছে। এই সিজনের অন্যতম ফোকাস হয়েছে যুবরাজ চার্লস আর যুবরানী ডায়ানার সম্পর্কের টানাপড়েনের দিকেই। তাদের সম্পর্কের মধ্যে যে শীতলতা এবং তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি প্রথম থেকেই ছিল তা এই সিজনে আরও পরিষ্কার বোঝা যায়। যদিও নির্দেশকদের একাংশের দাবি এখানে কল্পনার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে অনেক জায়গায়, কিন্তু প্রাসাদের পুরনো কিছু কর্মচারীর বক্তব্য অনুযায়ী এই সিজনে দেখানো চার্লস আর ডায়ানার জীবনের সমস্ত সংঘাত একদম সত্যি কিছু ঘটনার উপর আধারিত।
- এই সিজনে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বিখ্যাত মার্গারেট থ্যাচারের ভূমিকায় সুচারু অভিনয় করেছেন গিলিয়ান অ্যান্ডারসন। দর্শকদের একাংশের মতে তিনি এই ধরনের ভূমিকায় অভিনয় করার তুলনায় বড্ড বেশি ‘সেক্সি’। যদিও এই সিজনে রানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্বের সংঘাতের জায়গা বড্ড বেশি স্পষ্ট।
- এই সিরিজে সমস্ত চরিত্রের পোশাকের উপর ভীষণ ভাবে কড়া নজর রাখা হয়েছে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তো বটেই, তা ছাড়াও প্রতিটি ছোটোবড়ো চরিত্র যেন একদম আসল রাজপরিবারের মানুষজনের পোশাকের সঙ্গে মিল আছে এমন জামাকাপড় পরেন সমস্ত দৃশ্যে তা নিয়ে প্রোডাকশন টিম খুব তৎপর। শোনা গিয়েছে রানী এলিজাবেথের বিয়ের পোশাক তৈরিতে ডিজাইনারদের কয়েক সপ্তাহ লেগে গিয়েছিল। এছাড়াও ডায়ানা, থ্যাচার, চার্লস, ফিলিপ, মার্গারেট, ইত্যাদি সমস্ত চরিত্রাভিনেতারা যা যা জামাকাপড় পরেছেন তা আসল রাজপরিবারের সদস্যদের পোশাক অনুযায়ী বিশেষভাবে তৈরি।
- এই ওয়েব সিরিজে কটি সিজন হবে তা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে জল্পনার শেষ নেই। পরিচালক পিটার মর্গান জানিয়েছিলেন তিনটি সিজনে এই সিরিজ তিনি শেষ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দর্শকরা এই সিরিজকে এতটাই পছন্দ করে ফেলেছেন যে এটি প্রায় ষষ্ঠ সিজন অব্দি রিলিজ হবার সম্ভাবনা প্রবল। তবে বর্তমান প্রজন্মের রাজ পরিবারের সদস্যদের জীবন অব্দি এই সিরিজ এগবে না বলে কথাবার্তা ফাইনাল হয়ে রয়েছে পুরোপুরি।
- সিজন থ্রি আর ফোরের প্রিন্স ফিলিপ টোবিয়াস মেঞ্জিস ব্রিটেনের রাজপরিবারকে তেমন পছন্দ করেন না বলে জানা যায়। যদিও রানির চরিত্রে অভিনয় করা দুই অভিনেত্রীই দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভক্তদের মধ্যে সামিল। আবার অন্যদিকে স্বয়ং রানী এলিজাবেথ এই সিরিজ নিয়মিত দেখেন বলে জানা গিয়েছে। রাজপুত্র হ্যারি এবং তাঁর স্ত্রী মেগান এই সিরিজের ফ্যান।
- সিরিজের কিছু কিছু অভিনেতা তাঁদের অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে আসলে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। রানির ছোটো বোন মার্গারেটের সঙ্গে দেখা হয়েছিল সিরিজে এই ভুমিকাভিনেত্রী হেলেনা বন্থাম কার্টারের। এমনকি অনেকেই হয়তো জানেন না প্রিন্স ফিলিপের চরিত্রের খুঁটিনাটি তাঁর ভুমিকার অভিনেতা ম্যাট স্মিথকে জানান তাঁর নাতি রাজপুত্র উইলিয়াম।
গত নভেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে নেটফ্লিক্সে এই সিরিজের চতুর্থ সিজন চলে এসেছে। দর্শকদের জয় করে নিয়েছে নানান চরিত্র। যারা এখনও দেখেননি তাঁরা একবার দেখতেই পারেন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের নানান ঘটনাসমৃদ্ধ এই ওয়েব সিরিজটি।
আরও পড়ুন…