মানুষের জীবনে যে তিনটি ঘটনা প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয় তার মধ্যে জন্ম ও মৃত্যুর সঙ্গে বিবাহকেও একই সারিতে বসানো হয়েছে। এটা খুবই আশ্চর্য হতে হয় তলিয়ে ভাবলে যে মানুষের ইতিহাসের প্রাচীনতম প্রথা যা আজও চলে আসছে তা হল বিয়ে। অন্য আরেকটি মানুষের সঙ্গে নিজের জীবনকে বেঁধে নিয়ে পথচলা শুরু হয় এবং আমৃত্যু সেই একজনের সঙ্গেই সমস্ত সুখ-দুঃখ সাফল্য-ব্যর্থতা ভাগ করে নেয় মানুষ। পরবর্তী প্রজন্মও আসে এই দুইজনের সহবাসের ফলেই, অন্তত সামাজিক চাহিদা তাই-ই।

এই জুটি বেঁধে থাকার প্রবণতা নানান জাতের প্রাণীদের মধ্যেও রয়েছে কিন্তু মন্ত্রতন্ত্রের মাধ্যমে উৎসব অনুষ্ঠান ভুরিভোজ খাইয়ে দুটো মানুষের যৌথ জীবন শুরুর প্রক্রিয়া বোধহয় একমাত্র মানুষের মধ্যেই বর্তমান। আর হিন্দু বিবাহের মতন এত রকমের মন্ত্রের সমাহার অন্যান্য বিয়েতে তেমন মেলেই না। তবে পুরাণ উপপুরাণ অনুযায়ী এই সাতপাক, মালাবদল, সিঁদুরদানের মতনই বিয়ের মন্ত্রেরও ভীষণ গুরুত্ব রয়েছে। যে কারণে আজ সমস্ত ধরনের বিবাহেই মন্ত্রোচ্চারণের প্রয়াস শুরু হয়েছে এমন দেখা যায়।

বিয়ে এর খুঁটিনাটি
article l 201661555500721007000

আমাদের সংস্কৃতিতে সেই বেদ উপনিষদের সময় থেকেই বিবাহে মন্ত্রোচ্চারণ হয়ে থাকে। আজকে ‘জদিদং হৃদয়ং মম তদস্তু হৃদয়ং তব’ এই মন্ত্র সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে অনেকেরই জানা। কিন্তু এঁর মূল অর্থ দুটি মানুষের এঁকে অন্যের প্রতি হৃদয়দানের সম্মতি। বিবাহের অনুষ্ঠানে উচ্চারিত মন্ত্রের মধ্যে রয়েছে দেবী-দেবতার স্তুতি, পূর্বপুরুষের আশীর্বাদ কামনা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শুভাশিস, বর ও কনের এঁকে অন্যের উদ্দেশ্যে উচ্চারিত কিছু শপথ। এছাড়াও থাকে অগ্নির আরাধনা, শাস্ত্রীয় লোকাচার, জন্ম-মৃত্যুর নানান গূঢ় কথা। আসলে আমাদের দেশে বহুকাল ধরেই সামাজিক প্রয়োজনে বা সামাজিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সামাজিক বিধিবিধানের উপর শাস্ত্রীয় শিলমোহর লাগানো হয়। বিবাহ এদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য।

Saptapadi Wedding tradition significance

উপভাষা ও লোকাচারগত নানান ফারাক থাকলেও হিন্দু বিবাহের সময় যে মন্ত্রপাঠ করা হয় তাঁদের মূল অর্থ বা প্রয়োজন একই। মন্ত্র ব্যতিরেকে বিয়ে অসম্পূর্ণ বলে আজও মনে করেন অনেকেই। এছাড়া পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নানান জাতির মধ্যে বিয়ের সময় নানান মন্ত্রপাঠের প্রচলন রয়েছে। বলা হয় বিবাহের মন্ত্রের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীর নিজস্ব আচার-বিচার অনেকটাই দৃশ্যমান হয়। কোথাও কোথাও বিয়ের মন্ত্র বর-কনে নিজেরাই পড়েন, এছাড়া পুরোহিতের কাজ এই পর্বে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ তা তো আমরা সকলেই কম বেশি জানি।

তবে কেউ কেউ আবার পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে গুরুত্ব দিয়ে এই মন্ত্র সৃষ্টি এমন কথাও বলতে ছাড়েননি। এ কথা সত্যিই যে ভারতবর্ষের বিবাহের মন্ত্রে নারীকে শুধু পরবর্তী প্রজন্মের জন্মদাত্রী হিসেবে এবং স্বামীর অনুগামিনী হিসেবেই বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ক্রমশ সময় বদলাচ্ছে, সঙ্গে বদলাচ্ছে মন্ত্রের বিভিন্ন খুঁটিনাটি। কিন্তু বিবাহে এখনও পর্যন্ত মন্ত্রের গুরুত্ব অসীম, তা অস্বীকার করবার উপায় নেই।

https://www.youtube.com/watch?v=xJdMIyJ7qgc

the indian mangalsutra
আরও পড়ুনhttps://banglakhabor.in/2020/11/10/%e0%a6%95%e0%a6%ae%e0%a6%b2%e0%a6%be-%e0%a6%b9%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a6%b8-%e0%a6%95%e0%a7%87/