শীত-গ্রীস্ম-বর্ষা বাঙালির কাছে বোরোলিনই ভরসা

সুরভিত আন্টি-সেপটিক ক্রিম বোরোলিন শীত বা গ্রীস্ম কিংবা হোক বর্ষা বাঙালির জীবনে আছে ভরসা। কেটে গেছে ,ফেটে গেছে কিংবা পুড়ে গেছে বাঙালির নেই চিন্তা। কারণ
হাতে আছে এই সবের মোক্ষম ওষুধ সুরভিত ক্রিম বোরোলিন।বোরোলিন নেই এমন কোনো বাঙালি বাড়ি পাওয়া খুব কঠিন।দরিদ্র-মধ্যবিত্ত-বড়োলোক এই তিন শ্রেণীর বাঙালি
মানুষের কাছেই বোরোলিন অত্যাবশক। বোরোলিনের কার্যকারিতা প্রশংসনীয়। তাই বছরের পর বছর মানুষ তাকে গ্রহন করেছে সমাদরে। বাঙালির ঘরে বোরোলিনের উপস্থিতি
চিরকালীন। এ প্রসঙ্গে ঋতুপর্ণ ঘোষের একটি কথা বলা যাই –
বঙ্গ জীবনের অঙ্গ
যে বোরোলিন এতো বছর ধরে আমাদের জীবনে অঙ্গাঙ্গীণভাবে জড়িয়ে আছে তার ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি না। আজ তার ইতিহাসের দিকটা একটু দেখা যাক।

১৯২৯ সালে বোরোলিনের উদ্বাধন হয়।বাঙালি ব্যবসায়ি গৌড়মোহন দত্ত জি.ডি ফার্মাসিউটিক্যালস এর প্রতিষ্ঠাতা বোরোলিন তৈরী করেন।সেই সময় কলকাতার আলিপুরে
তাঁর বাড়িতেই তৈরী হত এই সুরভিত আন্টি-সেপটিক ক্রিম বোরোলিন। গৌড়মোহন দত্তের এই বাড়িটি বর্তমানে বোরোলিন হাউস নামে পরিচিত।বোরোলিন শব্দটি এসেছে
বোরো মানে বরিচ পাউডার থেকে এবং অলীন ল্যাটিন শব্দটির অর্থ তেল। বোরোলিনের যে লোগোটি আমরা দেখতে পাই সেটি হল হাতি।
এই লোগোতে হাতিকে স্থিরতা ও শক্তির প্রতীক হিসেবে বোঝানো হয় ।
১৯২৯ সাল, সেই সময় ভারতে যে আন্দোলন শুরু হয় তা হল স্বদেশী আন্দোলন।দেশি জিনিস গ্রহণ ও বিদেশি জিনিস বয়কটের মাধ্যমে চলছিল এই আন্দোলন।
এভাবে শুরু হয় বিদেশি বাজারে দেশি ব্যবসায়ীর পথ চলা। এ যেন অন্যধরণের লড়াই। তখনকার দিনে মানুষের কেটে , ফেটে , পুড়ে গেলে
ভেষজ উপাদান লাগাত কারণ বিদেশী পণ্যের মূল্য তখন সাধারণ মানুষের কাছে নাঙ্গালের বাইরে। সেই সময় দেবদূত হয়ে আমাদের কাছে এল দেশি পণ্য – ক্রিম বোরোলিন।
জি.ডি ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিষ্ঠাতা গৌরমোহন দত্ত ছিলেন কলকাতার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য। তিনি মনে করতেন বিপ্লব না করেও দেশ স্বাধীন করা সম্ভব। যদি দেশে
স্বাধীন ব্যবসায়ি সংগঠন করা যাই। তার এই কাজ অসামান্য হয়ে আছে। ইংরেজ রাজত্বকালে দেশি দ্রব্য তৈরী করা ,এবং বিক্রি করা টিকিয়ে রাখা ছিল খুবই কঠিন।
সবুজ রঙের টিউবে হাতিমার্কা লোগোয়ালা বোরোলিন ক্রিম বাজারে বন্ধ করার জন্য ইংরেজরা আপ্রাণ চেষ্টা করলেও সেই চেষ্টা বৃথা গেছে। গৌড়মোহন দত্ত তার জন্য
প্রচুর লড়াই করেছেন। তিনি আরো জানান বোরোলিনের সবুজ যে টিউবটি ব্যবহার করা হয় তা পরিবেশবন্ধু।পুরোনো টিউব রিসাইকেল করে তারা নতুন টিউব করে ।
ব্রিটিশ সময়কাল থেকে শুরু করে আজ ৯১ বছর ধরে বাঙালির কাছে স্বমহিমায় বিরাজিত অতি প্রিয় একটি ক্রিম বোরোলিন। তাদের কাজের জন্য
মানুষ তাদের বিশ্বাস করেন এবং এখনো মানুষ তাদের পাশে আছেন। মানুষ তাদের ভালোবাসে এবংমানুষের কাছে বোরোলিনের প্রয়োজনীয়তাও আছে ।
তাই আজ তাদের ফার্মাসির কারখানা কলকাতা ও গাজিয়াবাদ দুজায়গায় আছে। গৌরমোহন দত্ত এও বলেন যে , ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার সময় দেশবাসীকে
এই সুরভিত আন্টি সেপটিক ক্রিম বোরোলিন বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়। বোরোলিন ছাড়াও মানুষের স্বার্থে এখন তারা তৈরী করছে সুথল,এলিন,পেনরাব,স্যানিটাইজার।

সুতরাং ,দেশের মানুষের কাছে জি.ডি ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রাণপুরুষ গৌড়মোহন মোহন মহাশয়ের এই অবদান অনস্বীকার্য।
তার এই অবদান দেশবাসীর কাছে চিরস্মরণীয়। বোরোলিন স্বদেশী আন্দোলনের আইকন হিসেবে দাঁড়িয়েছিল।