ইউরো ২০২০ – ফুটবলের প্রতি সমর্থন নাকি অসম্মান? কলমে – অভিনব ব্যানার্জী

ইতালির সমর্থকদের প্রতি ইংল্যান্ডের সমর্থকদের বিরূপ আচরণ

ইউরো ২০২০ তো শেষ হলো, তবে ওই একটা কথা রবিঠাকুর বলে গেছেন ‘ছোটগল্প’ ব্যাখ্যার সময়, ” শেষ হয়ে হইলনা শেষ “। যেসব ক্ষেত্রে মানুষের আবেগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে, সেসব কোনোদিন সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যায়না।

এবছরের ইউরো ভীষণ অন্যরকম ছিল অন্যবারের তুলনায়। অনেকের মুখে শুনেছি, ইউরো কাপ নাকি সেইসব দেশ অবধি শেষমেষ পৌঁছয়না, যাদের কাপটা সত্যিই প্রাপ্য। এবার কথাটার মধ্যে ঠিক কতটা সত্যতা আছে তা আমি জানিনা, তবে কিছু নতুন শিল্পীদের প্রতি অবজ্ঞার একটা আভাস অবশ্যই তাতে পাওয়া যায়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আজ অনেকেই “অঘটন” শব্দটা যেকোনো ক্ষেত্রে খুব ব্যবহার করে বসেন। কোন ঘটনাগুলোকে আমরা “অঘটন” বলি? যেসব ঘটনা কাম্য নয় অথবা ঘটা উচিত নয়। আজ যখন ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল একে একে বিদায় নিল, আমরা বললাম অঘটন ঘটেছে। কেন? চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক অথবা সুইজারল্যান্ডের মতো দলকে কেনো আমরা একইভাবে গ্রহণ করতে পারলামনা, সেরাদের তালিকায়? তাদের খেলায় কোনো আড়ষ্ঠতার ছোঁয়া ছিল? তারা তো সেখানে জেতার জন্য ঘুষ বা নেপোটিসমের মতো কিছুর আশ্রয় নেয়নি। বরং তারা দলগত সংহতির এবং মাঠের মধ্যে নিজস্ব স্বাবলম্বী অবদানের আরো জোরদার নমুনা পেশ করেছিল। যখন এরিকসেন খেলতে খেলতে মাঠে পরে গেলেন, আপনাদের সবার খারাপও লাগেনি ঠিকঠাক হয়তো। আমি আজ বাজি রেখে একথা বলতে পারি, বেশিরভাগ লোকজনই অন্যদের দেখে নিজের মিথ্যে সমবেদনা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। কারণ তিনি কোনো সেইরকম নামকরা জাতীয় দলে খেলেননা। তাও ক্লাব ফুটবলের দৌলতে কিছু লোকজন হয়তো চিনেছিলেন, বা নামটা শুনেছিলেন। তারপর সেই কষ্টে উজ্জীবিত ডেনমার্ক কি খেলাটাই না প্রদর্শন করলো! সেটাকেও আপনারা মর্যাদা না দিয়ে ইংল্যান্ডের জন্য আনন্দে আত্মহারা ছিলেন। কেনো? না আপনাদের কিছুটা হলেও চেনা দুটো দল ফাইনালে মুখোমুখি হতে চলেছিল। তারপর ফাইনালে তো আরেক নতুন জিনিস চোখে পড়লো। একটা ভিডিওতে দেখলাম ইংল্যান্ডের সমর্থকরা ইতালির পতাকাতে একজোট হয়ে আনন্দ করতে করতে লাথি মারছে। সেই দৃশ্য দেখেই বোধহয় ভগবানও নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। নেমে এসেছিলেন পৃথিবীতে চিয়েসা, চিয়েলিনি, ডনারমা হয়ে, সেই সমর্থকদের মন ভাঙতে।

football
freepressjournal.in

এই ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা তাতেও শান্তি পাননি। নিজের দেশেরই এক খেলোয়াড়কে সোশ্যাল মিডিয়ায় যা নয় তাই বলে অপমান করতে শুরু করেছেন তারা। রেসিসমের জন্ম দিচ্ছেন প্রতিভার মধ্যে। সমর্থকেরা একটা যেকোনো দলের ক্ষেত্রে একটা আশীর্বাদের মতো। সমর্থকদের জন্যই একটা দল আরো ভালো হয়ে ওঠে দিন দিন। তবে ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে হয়তো এটা উল্টো।

সাকা
clutchpoints.com

যাই হোক সবশেষে বলি যদি সত্যিকারের ফুটবলপ্রেমী হন। ফুটবলের নামে কোনো খেলোয়াড়ের ওপর তার দেশের ওপর কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করাটা এবার বন্ধ করুন। ফুটবলটা উপভোগ্য একটা খেলা, তবে সেটাকে সম্মানের সাথে উপভোগ করুন। দেখবেন খেলাটা দেখতেও আরো সুন্দর লাগছে। ইতালির জন্য অনেক শুভেচ্ছা রইল। বিশ্বকাপের করুণ পরিস্থিতির এ যেন এক ফিরে আসা, সসম্মানে।