নিজস্ব সংবাদদাতা: গোটা দেশের প্রতিটি প্রান্তে গত কয়েক মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা। শহর থেকে গ্রাম, হাট থেকে বাজার, রাস্তা থেকে বন্দর- সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এই মারণ ভাইরাস। কিন্তু সংক্রমণ যত বাড়ছে, উল্টোদিকে ততই যেন টিকাকরণে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে দেশ। যার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্দরমহলে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তারা বলছেন, এর প্রধান কারণ দুটি। এক, প্রতিষেধকের অভাব। দুই, স্মার্টফোন, ইন্টারনেটের অভাব। বা স্মার্টফোন থাকলেও তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে না পারা।

এই বিষয়ে নীতি আয়োগের এক কর্তা বলেন, “৪৫ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে সরকারি টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়েই নাম-ধাম লিখিয়ে, রেজিস্ট্রেশন করিয়ে টিকা নেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু এখন সর্বত্রই প্রতিষেধকের জোগানে টান। তার উপরে ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে নিজেকেই রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। টিকা নেওয়ার জন্যও টিকাকরণ কেন্দ্র, কবে টিকা দেওয়া হবে, তা কো-উইন ওয়েবসাইট বা আরোগ্য সেতু অ্যাপ থেকে খুঁজে নিজেদেরকেই বুকিং করতে হবে। আর সেখানেই ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন গ্রামীণ ভারতের মানুষজন।”

ওই কর্তার ব্যাখ্যা, টিকার অভাব বলে কোথাও টিকাকরণের স্লট খুললেও তা মুহূর্তের মধ্যে বুকিং হয়ে যাচ্ছে। ফলত শহরের স্মার্টফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত তরুণ প্রজন্মের পক্ষেও সারাদিন সজাগ থেকে নিজের স্লট বুকিং করে ফেলা কঠিন হয়ে উঠছে। কার্যত গোটা বিষয়টা ‘ফার্স্ট কাম, ফার্স্ট সার্ভ’ হয়ে উঠেছে। গ্রামের মানুষের পক্ষে তা কার্যত অসম্ভব। তার উপরে প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেটের স্পিডও সমস্যা। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই গতকাল বলেছেন, কোভিড ভাইরাস এ বার গ্রামেও ছড়াচ্ছে। গ্রামের মানুষকে সতর্ক হতে হবে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গ্রাম, আধাশহরে সংক্রমিতর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। দু’মাস আগেও গোটা দেশে ১০০ জন সংক্রমিত হলে তার মধ্যে ১০ জন গ্রামের মানুষ থাকতেন। এখন তা বেড়ে প্রায় ২৩ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে।

কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কোথায়? লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে সুপারিশ করেছেন, ডাকঘর, রেল স্টেশন থেকে গ্রামের মানুষকে টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশনের বন্দোবস্ত করা হোক। তবে এভাবে কি এর সমাধান হবে? নীতি আয়োগের এই কর্তা বলেন, “প্রতিষেধকের জোগান বাড়লে তবেই ১৮-৪৪ বছর বয়সীদের জন্যও টিকাকরণ কেন্দ্রে এসে রেজিস্ট্রেশন করে সঙ্গে সঙ্গে টিকা নেওয়ার সুবিধা চালু করা যাবে। এছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই।”