কথাই বলেনা, ‘সাবধানের মার নেই’



পৃথিবীর মানুষ 2020 সালকে কিভাবে মনে রাখবে– এমন প্রশ্ন করা হলে সবাই একটাই কথা বলবে আর তা হল- করোনা!

প্রায় একটা গোটা বছর ধরে সারা পৃথিবীর অনেককিছু অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে এই অতিমারীর জন্যেই। বহু মানুষ মারা গিয়েছেন এই রোগে, যুঝছেন এখনও অনেকেই, সংক্রমন ছড়াচ্ছে এখনও। জরুরি পরিষেবা এবং চিকিৎসা জগতের মানুষ লড়াই করে চলেছেন সর্বস্ব পণ করে, ভুলে গেলে চলবে না তাও। কিন্তু এ সবের মধ্যেও যেটা খুব সহজেই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় বারবার, তা হল এ-ই যে করোনা কিন্তু আমাদের বেশ কিছু শিক্ষাও দিয়েছে। এমন অনেক কিছু নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে যা হয়তো বিশ্বজুড়ে অতিমারীর এই আবহ ছাড়া আমাদের নজরেই পড়ত না।
দেখে নিই গুরুত্বপূর্ণ দশটি বিষয় যা করোনা শিখিয়েছে—

~ প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া ভীষন জরুরী। মানুষই প্রকৃতির কদর করে না আজ। যত্রতত্র দূষণ ছড়ানো থেকে শুরু করে নানাভাবে প্রকৃতির ক্ষতি করতে থাকলে মহামারী আটকানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে ভবিষ্যতে। করোনা সেদিক দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে অনেকটাই।



~ রোগ নিবারণের চাইতে রোগ প্রতিরোধ করাই বেশি সুবিধাজনক। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় Prevention is better than cure। প্রয়োজনীয় বিধিনিষেধ মেনে চললে রোগের হাত থেকে বাঁচা কঠিন নয়, কিন্তু রোগে আক্রান্ত হবার পর সেরে ওঠার জন্য ঝঞ্ঝাট কিন্তু অনেক বেশি। করোনা এই ব্যাপারে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে।

~ মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতেই হবে আমাদের। সংকটের সময়, অন্যের দুর্দিনে হাত বাড়াতে না জানলে একাকীত্ব আপনার জন্যেও অনিবার্য। স্বার্থসর্বস্ব হলে অতিমারীর পরিস্থিতিকে সামলানো অসম্ভব। করোনার পরিস্থিতি তৈরী না হলে এই সত্য এমনভাবে বোঝা সম্ভব ছিল না।

~পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো দরকার। এদেশে ছমাসের বেশি সময় ধরে বহু মানুষ বাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেকেই নতুন করে অনুভব করেছেন পরিবারের সঙ্গ জীবনে বহু সমস্যার তীব্রতা ম্লান করে দেয়। করোনার শিক্ষা এ-ও।

~সমস্ত পেশার মানুষকে সম্মান করা জরুরি। অনেকসময় বেশি বেতনভোগী হোমরাচোমরা মানুষকে সম্মান দিয়ে থাকি আমরা, অথচ পাত্তা দিই না নিয়মিত যারা কোনমতে দুবেলা দুমুঠো জোগাড় করার জীবন কাটাচ্ছেন। করোনা আমাদের শিখিয়ে গেল সমস্ত পেশার এবং সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষই সম্মানের দাবিদার।

~ অর্থ নয়, প্রতিপত্তি নয়, প্রাণ বাঁচাতে পারে শুধুই সঠিক চিকিৎসা। আমরা অবাক হয়ে দেখেছি বহু প্রভাবশালী বিত্তবান মানুষ এই বছর রোগাক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের ক্ষমতা বা বিত্তের জোর তাদের রোগ সারাতে পারেনি। করোনা আমাদের ভীষণভাবে শিখিয়েছে চিকিৎসাব্যবস্থাকে সম্মান করতে।

~ স্বাধীনতার মূল্য বুঝতেও শিখিয়েছে করোনা ভাইরাস। সংক্রমন যাতে না ছড়ায় সেই জন্য গোটা পৃথিবীই প্রায় গৃহবন্দী আজ। ইচ্ছেমতো হাঁটাচলা, কথা বলা, খাওয়াদাওয়া করার স্বাধীনতা আজ নেই আমাদের। যে স্বাধীনতার কোনও কদর আজ অব্দি মানুষ করেনি, তার প্রতি যত্নবান হতে শিখিয়েছে করোনা ভাইরাস।

~ প্রতিটি মুহূর্তের প্রতি যত্নবান হওয়া দরকার। মানুষ চিন্তা করে শুধুই ভবিষ্যতের, কিন্তু বর্তমানকে গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতের কথা ভেবে লাভ নেই কোনও। করোনা এ দিকেও নজর ফিরিয়ে দিয়েছে।

~ বাইরের খাবারের উপর নয়, নির্ভর করতে হবে বাড়িতে তৈরি খাবারের উপরেই। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই গৃহবন্দী সময়ে বেশিরভাগ মানুষ বাড়ির খাবার খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন, ফলে শারীরিক সমস্যা অনেকটাই কম হয়েছে। বাইরের তেলমশলায় পরিপূর্ণ খাবার যে শেষমেষ আমাদের ক্ষতিই করে, তা করোনা টের পাইয়েছে ভালোমতন।

~ শিক্ষার গুরুত্ব বিশেষভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। এই সময় সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ হবার ফলে অনলাইনেই চলছে ক্লাস, তবু অনেক পড়ুয়াই সুযোগ পাচ্ছে না ঠিকমতো শিক্ষালাভের। অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাদের সবার। করোনা এই সময়ে শিক্ষার মূল্য বিশেষভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেছে।

এই দশটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছাড়াও সামগ্রিকভাবে করোনা আমাদের শিখিয়েছে জীবনের ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে। আশ্চর্য লাগলেও একথাই সত্যি যে মহামারীই আজ আমাদের জীবনের মূল্য শিখিয়ে দিয়েছে।