নিজস্ব সংবাদদাতা- শুরুতেই তাল কাটল কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে আয়োজিত ‘পরাক্রম দিবস’ অনুষ্ঠানে। ক্ষুব্দ হয়ে বক্তৃতার না রেখেই মঞ্চ থেকে নেমে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ করলেন তাকে ডেকে এনে অপমান করা হয়েছে। সেই সময় মঞ্চে বসে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ রকম একটি ঘটনা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত বিরল।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পারদ বেশ কয়েকদিন ধরেই চড়ছিল। তবে আজ সেটি চূড়ান্ত ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছয়, কারণ ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই দিনটিকে যেমন দেশনায়ক দিবস’ হিসাবে পালন করা হচ্ছে, তেমনি কেন্দ্রীয় সরকার দিনটি পালন করছে পরাক্রম দিবস হিসাবে।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং বিজেপি পরিচালিত ভারত সরকার, উভয়ই নেতাজির উত্তরাধিকার নিয়ে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে দুই সরকারের আয়োজিত এবারের নেতাজি জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান বকমে  তৃণমূল ও বিজেপির প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বৎসর ব্যাপী নেতাজি স্মরণ অনুষ্ঠান এর শুভ সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠানেই দীর্ঘদিন পর একই মঞ্চে দেখা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ও নরেন্দ্র মোদিকে। নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চালক যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বক্তব্য রাখার জন্য আহ্বান জানান তখনই দর্শকাসনের একাংশ থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান উঠতে শুরু করে। এই ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি কোনো বক্তব্য না রেখেই পোডিয়াম থেকে নেমে চলে আসেন। নামার আগে শুধু বলেন, “এটি কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠান নয়, সরকারি অনুষ্ঠান। মানুষকে নিমন্ত্রণ করে এনে অপমান করাটা ঠিক নয়।”

সুভাষচন্দ্র বসুর স্মরণ অনুষ্ঠানে কোনো বক্তব্য না রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর নেমে আসার ঘটনার মধ্য দিয়ে বোঝাই যায় যে তিনি প্রচণ্ড অপমানিত বোধ করেছেন। এর আগেও বারবার জয় শ্রীরাম স্লোগান তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে বিব্রত করার চেষ্টা করা হয়েছিল বিজেপির পক্ষ থেকে।

ঘটনা হল সরকারি স্তরের এরকম একটি গুরুগম্ভীর অনুষ্ঠানে দর্শক আসন থেকে স্লোগান ওঠার ঘটনা যেমন দৃষ্টিকটু তেমনি অনভিপ্রেত! এটি যে বিজেপি সমর্থকদের একাংশের কাজ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতে সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এরকম মেঠো রাজনীতির দাগ না লাগাটাই কাম্য ছিল!