“বর্তমান ভারতীয় সমাজ ক্রমশ সমগোত্রীয় হয়ে যাচ্ছে এবং ধর্ম, জাত-পাতের বাধা ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে”,এই অবস্থায় ইউনিফর্ম সিভিল কোড” শুধুমাত্র আশা” হিসাবে থেকে যাওয়া উচিত নয়।মীনা সম্প্রদায়ের এক বিবাহবিচ্ছেদ কেসের শুনানিতে আইনজীবী প্রতিভা এম সিংহ হাইকোর্টে এ নিয়ে সওয়াল করেন।

বিভিন্ন জাতি,ধর্ম,সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের যাতে বিবাহ এবং বিবাহঘটিত সমস্যায় পড়ে ভিন্ন ভিন্ন জাতি,ধর্মের পার্সোনাল ল’-এর গ্যাঁড়াকলে পড়তে না হয় তার জন্য সংবিধানের এই বিধি কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করে হাইকোর্ট।ইউনিফর্ম সিভিল কোড এমন একটি আইন আনতে সক্ষম যা জাতি,ধর্ম,সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলের জন্য একই হবে এবং এই আইনের ক্ষেত্র হবে ব্যক্তিগত জীবন –বিবাহ,ডিভোর্স, উত্তরাধিকার ইত্যাদি।এটি সংবিধানের DPSP বিভাগের ৪৪তম ধারার অন্তর্গত।বর্তমানে ভারতে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের জন্য ভিন্ন ভিন্ন আইন রয়েছে,যেমন হিন্দু বিবাহ আইন,হিন্দু উত্তরাধিকার আইন,ভারতীয় ক্রিস্টান বিবাহ আইন ইত্যাদি।যদিও মুসলিমদের পার্সোনাল ল’ কোড করা নেই,তাদের শরিয়তী আইনই তারা মেনে চলে।এই ধারার উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন জাতির মধ্যে জাতিবিদ্বেষ দূরে সরিয়ে রেখে সমস্ত সংস্কৃতি মিলিয়ে এক ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা।

এই আইনের শিকড় গেড়ে আছে স্বাধীনতার পূর্বকালীন সময়ে(১৮৩৫)।সে সময় ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন জাতির জন্য একই আইনের প্রয়োজনীয়তার সপক্ষে জোর দিয়েছিলেন।যদিও তারা হিন্দু এবং মুসলিম পার্সোনাল ল’কে এর বাইরে রাখতে চেয়েছিলেন।

high court
en.wikipedia.org

২০১৭ সালে ল’ কমিশন এই ব্যাপারে বলে যে,এই আইন লাগু করা অত্যন্তhttps://banglakhabor.in কঠিন।কারণ সংবিধানেই অনেক জায়গায়,অনেকক্ষেত্রে(বিভিন্ন উপজাতির জন্য) ব্যতিক্রমী কিছু নিয়ম আছে।সেক্ষেত্রে এরকম নিয়ম আনলে সংবিধানের আলোকেই এই নিয়ম বাতিল হয়ে যাবে কারণ,গোটা সংবিধানকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সংবিধানের ৬তম বিভাগ নিয়ে পড়ে থাকা অসম্ভব।যদিও বর্তমান পরিস্থিতি অন্য কথা বলছে।হাইকোর্টে ১৯৮৫ সালের শাহ বানো কেস তুলে ধরে বলা হয়,” সংবিধানের ৪৪তম ধারায় যে আশার কথা বলা হয়েছে সেটা শুধুমাত্র আশা হিসাবেই রেখে দেওয়া উচিত না।“
হাইকোর্টের মতে,অভিন্ন দেওয়ানি বিধির সুবিধা থেকে দেশকে বারবার বঞ্চিত রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।যাইহোক এই কেস সম্পর্কিত নির্দেশের একটি কপি ভারতীয় আইন মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারির কাছে পাঠানো হয়েছে যাতে তাঁরা যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেন।

আদালত মীনা সম্প্রদায়ের বিবাহবিচ্ছেদঘটিত মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে এই অভিন্ন দেওয়ানি বিধির কথা তুলে ধরে।এই সম্প্রদায়ের মানুষদের ক্ষেত্রে ১৯৫৫ সালের হিন্দু বিবাহ আইন লাগু হয়না কারণ তারা রাজস্থানের একটি সংরক্ষিত গোত্রের মানুষ।যখন স্বামী বিবাহবিচ্ছেদ চান তখন স্ত্রী ব্যাপারটি বিতর্কিত করে তোলেন যেহেতু তাঁদের ক্ষেত্রে হিন্দু আইন লাগু হয়না।

আদালত এই মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়েই ইউনিফর্ম সিভিল কোড লাগু করার ব্যবস্থা করতে বলে।আদালতের মতে এই আইন ভবিষ্যতে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভেদ এড়িয়ে এক ঐক্যবদ্ধ সমাজ গড়তে সক্ষম হবে।প্রসঙ্গত,২০১৭ সালে মুসলিম তিন তালাক পদ্ধতি নিষিদ্ধকরণকে অনেকে এই আইন লাগু করার প্রথম ধাপ হিসাবে দেখছেন।যদিও মুসলিমদের সঙ্গে কিছু হিন্দুও এই অভিন্ন আইন চালু করার বিপক্ষে আছেন।তাই,সরকারপক্ষ সকলের মতামত নিয়েই এই পদ্ধতি চালু করবে।