প্রতিবছর মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তির দিনে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে সাগর দ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিলমুনির আশ্রমে গঙ্গাসাগরের মেলা বসে। কুম্ভমেলার পরেই এই গঙ্গাসাগর মেলা হল দ্বিতীয় বৃহত্তম হিন্দু মেলা এবং এই গঙ্গাসাগর হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র তীর্থ এবং মকর সংক্রান্তির পুণ্যতিথিতে এই সঙ্গমে প্রচুর পুণ্যার্থীর ঢল নামে। গঙ্গাসাগর গঙ্গার সাথে বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থল। কিংবদন্তী অনুযায়ী এই পবিত্র স্থানটি মূলত কপিল মুনির মন্দিরের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, তিনি মহান সাধক যিনি পুরাণ অনুসারে ভগবান বিষ্ণু ছিলেন। কপিল মুনি কর্দম মুনির ছেলে। পুরাণে বলা হয়েছিল যে, কর্দম মুনিকে ভগবান বিষ্ণুর নির্দেশ অনুসারে তাঁর বৈবাহিক জীবনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল, তবে মুনি এক শর্তে এটি মেনে নিয়েছিলেন এবং শর্ত অনুসারে মুনি ভগবান বিষ্ণুকে তাঁর পুত্র হিসাবে পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। এই শর্ত অনুসারে ভগবান বিষ্ণু জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তাঁর নাম হয়েছিল কপিল মুনি। এই জায়গায় পবিত্র নদী গঙ্গা আনার গল্পের সাথে কপিল মুনির পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কিত।

কিংবদন্তি অনুসারে, সাংখ্যদর্শনের আদি প্রবক্তা কপিলমুনির আশ্রম ছিল গঙ্গাসাগরে।ইক্ষাকুবংশীয় রাজা সগর ছিলেন সমৃদ্ধশালী রাজা। নাগরিকদের উন্নতি সাধনের মাধ্যমে হৃদয় জয় করা ছিল তার কাছে রাজধর্ম। দেবলােক লাভ করার জন্য সগর রাজার ইচ্ছা হল অশ্বমেধ যজ্ঞ করবেন। যজ্ঞের ঘােড়া বিভিন্ন এলাকায় পরিক্রমা করে শেষে ঘােড়াটি যখন ইন্দ্রের রাজসভার কাছে এল তখন ইন্দ্র ঘোড়াটিকে অপহরণ করে কপিলমুনির আশ্রমের পাশে বেঁধে রাখলেন। সগর রাজার ৬০,০০০ ছেলেরা বিশেষত পুত্র অংশুমান চারদিকে খোঁজাখুঁজির পর একসময় কপিলমুনির আশ্রমের কাছে অশ্বমেধ যজ্ঞের।ঘােড়াটি দেখতে পায়। দেবরাজ ইন্দ্রের চাতুরী সম্পর্কে তাঁরা অজ্ঞ ছিলেন তাই মুনিকেই চোর মনে করে তাঁর ধ্যানভঙ্গ করেন। মিথ্যা অপবাদ পাওয়ার ফলে কপিলমুনির রাগে সগর রাজার ৬০,০০০ সন্তান কে ক্রোধের অনলে ভস্মীভূত করে দেয়।

WhatsApp Image 2021 01 14 at 6.23.52 PM

অবশেষে সগর রাজার পৌত্র ভগীরথ দীর্ঘ ও দুঃসাধ্য তপস্যার মাধ্যমে কপিলমুনিকে সন্তুষ্ট করেন। কপিলমুনি ভগীরথকে বললেন, একমাত্র গঙ্গার পুণ্য সলিলেই ভগীরথের পূর্বপুরুষরা মুক্তি পেতে পারে। ভগীরথের কঠোর তপস্যা এবং একাগ্রতার বরদান স্বরূপ গঙ্গার ধারা মর্তে প্রবাহিত হয় এবং সগর রাজার ভস্মীভূত পুত্ররা আবার জীবিত হয়। পৃথিবী আবার উর্বরা ও শস্যশ্যামলা হয়। ভগীরথ গঙ্গাকে মর্ত্যে এনেছিল বলেই মনে করা হয় গঙ্গার অপর নাম ভাগীরথী। মকর সংক্রান্তির পবিত্র দিনেই গঙ্গার পুণ্য জলধারায় ভগীরথের পূর্বপুরুষ সগর রাজার ষাট হাজার পুত্ররা জীবিত হয়েছিলেন, সেই তিথিতেই গঙ্গাসাগরে মহা সমারোহে মেলা বসে।গঙ্গার পুণ্য সলিলে স্নান করে সকলে সগর রাজার পুত্রদের মতোন পাপমুক্তির অঙ্গীকার করে।