নিজস্ব সংবাদদাতা- করোনা প্রতিরোধ করতে গোটা বিশ্বের মতো এ রাজ্যের মানুষজন‌ও ভ্যাকসিনের জন্য হা-পিত্যেশ করে বসে ছিল। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি, অর্থাৎ গত শনিবার থেকে টিকাকরণ শুরু হয়ে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মীদের এই টিকা নেওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট অনিহা আছে। তার ফলে করোনা টিকাকরণ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার প্রতিদিন যে লক্ষ্যমাত্রা রেখে চলছিল তা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র ৪৩ হাজার জনের অল্প কিছু বেশি প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা এই রাজ্যে টিকা নিয়েছেন।

টিকাকরণ প্রক্রিয়ায় এরকম ভাটার টান কেন তা নিয়ে মূলত দুটি মতামত উঠে আসছে। কেন্দ্রের ঠিক করে দেওয়া কো-উইন অ্যাপের দ্বারা করোনা টিকাকরণ গোটা প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কথা।কিন্তু টিকাকরণ শুরু হওয়ার আগের দিন, অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যে থেকেই এই কো-উইন অ্যাপটিতে সমস্যা হতে শুরু করে। জানা গিয়েছে এই অ্যাপটির সেন্ট্রাল সার্ভারে সমস্যা হওয়াতেই এই বিপত্তি।

কো-উইন অ্যাপে বিপত্তি ঘটায় যেদিন যে যে ব্যক্তির টিকাকরণ হওয়ার কথা, তারা নির্দিষ্ট সময়ে এই সংক্রান্ত খবর পাচ্ছেন না বলে জানা গিয়েছে। কখনো কখনো টিকাকরণের আগের দিন গভীর রাতে বা দিনের দিন সকালে তাদের কাছে এই সংক্রান্ত খবর গিয়ে পৌঁছাচ্ছে। ব্যস্ততা এবং মানসিক প্রস্তুতির অভাবে অনেকেই তাই টিকা নিতে পারছেন না বলে জানা যাচ্ছে।

পাশাপাশি আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতির দাবি মেনে অত্যন্ত দ্রুত কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাকসিন, এই দুই করোনা টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তার ফলে এই টিকা দুটির কার্যকারিতা সহ পরীক্ষার প্রতিটি পর্বের ফলাফল এখনো পর্যন্ত সঠিকভাবে জানা যায়নি। এই ঘটনাটিও অনেকের মধ্যেই অস্বস্তি তৈরি করেছে। বিশেষত চিকিৎসকদের একাংশ এখনো অব্দি টিকার কার্যকারিতা এবং তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না। তারা অনেকেই প্রকাশ্যে কিছু না বললেও টিকাকরণ প্রক্রিয়াকে সন্তর্পনে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

টিকা নিয়ে তৈরী হওয়া আশঙ্কা দূর করার জন্য আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে টিকাকরণ সংক্রান্ত বিষয়গুলি তুলে ধরে প্রচার করা জরুরি। সেই সঙ্গে কো-উইন অ্যাপের বিভ্রাট দ্রুত দূর করা গেলে হয়তো টিকাকরণ আবার গতি পাবে।

টিকাকরণের প্রথম তিন দিন অর্থাৎ শনি-রবি-সোমবারে রাজ্য সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০৬ টি টিকাকরণ কেন্দ্রের প্রতিটিতে ১০০ জন করে প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাকে টিকা দেওয়া হবে। সেই অনুযায়ী প্রতিদিন রাজ্যে ২০,৬০০ জনের করোনা টিকা পাওয়ার কথা। বুধবার অবশ্য এই লক্ষ্য মাত্রা কিছুটা কমিয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ২০০ টি কেন্দ্রে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই টিকাকরণের দৈনিক লক্ষ্য মাত্রা কমে হয়েছে ২০,০০০।

রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে প্রথম তিন দিনের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৬১,৮০০ জন প্রথম সারির করোনার যোদ্ধার টিকা পাওয়ার কথা। অথচ যাবতীয় আয়োজন প্রস্তুত থাকলেও টিকা নিয়েছেন মাত্র ৪৩ হাজারের অল্পকিছু বেশি। তবে এই টিকাকরণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা আশা প্রকাশ করে জানিয়েছেন দ্রুতই এই ঘাটতি পূরন করে ফেলা হবে। সেইসঙ্গে জানা যাচ্ছে দ্বিতীয় দফার ভ্যাকসিন কলকাতায় আজ‌ই এসে পৌঁছবে।