তখন ব্রিটিশ আমল। বাংলাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হত ভারতের রাজনীতি। কারণ সেই সময় কলকাতা ছিল দেশের রাজধানী। ব্রিটিশ সিংহের ঘুম ভাঙত গঙ্গার পাড়ে। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। দেশ ভেঙেছে। বঙ্গভঙ্গ হয়েছে। তবে বাংলার রাজনীতির গুরুত্ব কমেনি।


সারা দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন দানা বেঁধেছিল এই বাংলা থেকেই। এই বঙ্গই জন্ম দিয়েছে সুভাষ চন্দ্র বসুকে। দেখেছে অহিংসার বিস্তারও। আবার এই বাংলাই দেখেছে নকশাল আন্দোলন। উত্তাল সত্তরের দশক। চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান।


সুজলা সুফলা বঙ্গরাজনীতিতে বরাবরই ভিন্ন মত, ভিন্ন পথের কদর রয়েছে। মানুষ গ্রহণ করেছেন। বর্জনও করেছেন। আর এই প্রক্রিয়াতেই পুষ্ট হয়েছে বঙ্গের রাজনীতি। অক্সিজেন নিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। অতুল্য ঘোষ থেকে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় হয়ে জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো নানা রঙের রাজনৈতিক দল ও নেতাদের দেখেছে বাঙালি।


একবিংশ শতাব্দীতেও বয়ে চলেছে সেই ধারা। ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে বাংলার রাজনীতির ময়দানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন যেসব রাজনীতিবিদরা, তাঁদের মধ্যে থেকে আমরা বেছে নিয়েছি ৫ জনকে। বঙ্গ রাজনীতিতে যারা খেলছেন স্লগ ওভারে, ধোনির স্টাইলে। একুশের ফাইনাল ম্যাচে যাঁদের ভূমিকা হতে চলেছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

aa Cover lp6or6jmsk36k6r0b8etkidcq7 20190722061536.Medi

১। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – অধুনা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। বলা যায় তাঁকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে বঙ্গের রাজনীতি। একক দক্ষতায় ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটানোর ক্ষমতা দেখিয়েছেন তিনি। বিরোধী নেত্রীর ভূমিকায় তাঁর গণ আন্দোলন রাজনীতির ছাত্রদের অবশ্যপাঠ্য। তাঁর ঝুলিতে আছে অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার। বাজপেয়ী জমানায় রেলমন্ত্রী ছিলেন। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। আবার সূর্যকান্ত মিশ্র, বিমান বসুদের মতো বাম নেতাদের নবান্নে ডেকে ফিশফ্রাই খাওয়ানোতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। কোন ঠাকুর কোন ফুলে সন্তুষ্ট সেটা মমতার থেকে ভালো আর কেউ জানেন না। এখন তাঁর লড়াই বিজেপির সঙ্গে। ২১-এ গদি ধরে রাখাই তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ।

aa Cover iss492mpkj8bbr8fg1dsq0e9a1 20171004032724.Medi

২। দিলীপ ঘোষ – বাংলায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি এবং প্রধান বিরোধী নেতা। আরএসএস-এর প্রচারক ছিলেন। সেই সূত্রেই বিজেপিতে যোগ। তাঁর আমলেই পশ্চিমবঙ্গে শক্ত জমি পেয়েছে বিজেপি। ২০১৯ লোকসভা ভোটে ১৮ টি সিট জিতেছে গেরুয়া শিবির। মাঠে ঘাটে নেমে লড়াই করছেন। বিরোধী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিঃসন্দেহে। প্রশাসক হিসাবে কতটা সফল হবেন সেটা সময়ই বলবে। কিন্তু তাঁর সবচেয়ে বড় মাইনাস পয়েন্ট হল বিতর্কিত মন্তব্য। ‘গরুর দুধে সোনা পাওয়া যায়’ থেকে ‘সহজ পাঠ বিদ্যাসাগরের লেখা’ বলে শুধু নিজেকে হাস্যাস্পদ করেননি দলকেও বিপাকে ফেলেছেন।

mukul roy BJP FB

৩। মুকুল রায় – বাংলার রাজনীতির চাণক্য বলা হয় তাঁকে। শূন্য থেকে শুরু করেছিলেন তৃণমূলে। হয়েছিলেন দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড। মমতা ছিলেন পর্দার সামনে। মাঠে ঘাটে আন্দোলন করে জনমানসে নিজেকে এবং তৃণমূলকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। আর মুকুল রায় ছিলেন পর্দার পেছনের কর্মী। দলীয় সংগঠন মজবুত করা এবং বামপন্থী দলগুলোয় ভাঙন ধরানোর পেছনে ছিল তাঁর বড় ভূমিকা। বিজেপিতে যোগ দিয়ে গেরুয়া শিবিরের হয়ে সেই খেলাটাই খেলছেন মুকুল রায়। তৃণমূলে ভাঙন ধরানোর নেপথ্যেও কলকাঠি নাড়ছেন তিনিই। অনুপম হাজরা, নিশীথ প্রামাণিক, সৌমিত্র খান, অর্জুন সিংদের তৃনমূল থেকে ভাঙিয়ে পদ্ম শিবিরে নিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে তাঁরই হাতের কারসাজি।

adkari 1

৪। শুভেন্দু অধিকারী – রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর যদি আর কোনও নেতার প্রকৃত জনভিত্তি থাকে সেটা শুভেন্দু অধিকারী। মেদিনীপুরের অবিসংবাদী নেতা তিনি। বাবা শিশির অধীকারীও দক্ষ রাজনীতিবিদ। মেদিনীপুরকে ‘অধিকারী গড়’ বলা হয়। সমালোচকরা বলেন, দক্ষতা থাকলেও তৃণমূলে কোনঠাসা শুভেন্দু। পরিবহনের মতো মন্ত্রক দিয়ে তাঁকে ভুলিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু তিনিই হয়ে উঠতে পারেন তৃণমূলের ‘এক্স ফ্যাক্টর’। সেই পরিণতি এবং রাজনৈতিক বোধ শুভেন্দুর আছে। শোনা যাচ্ছে, তৃণমূল ছাড়তে পারেন তিনি। তলে তলে যোগ রাখছেন বিজেপিতে। একুশের আগে শুভেন্দুকে যদি গেরুয়া শিবির ভাঙিয়ে আনতে পারে তবে সেটাই হবে বঙ্গ রাজনীতিতে মাস্টারস্ট্রোক।

prashant kishor 1 18 021920063747

৫। প্রশান্ত কিশোর – না, তিনি রাজনীতিবিদ নন। কিন্তু এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত নাম ‘বিহারীবাবু’ প্রশান্ত কিশোর। তিনি ভোট কৌশলী। অর্থের বিনিময়ে কোনও রাজনৈতিক দলের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করাই তাঁর কাজ। ২০১৪ সালে তিনি ছিলেন মোদীর ভোট প্রচারক। ‘আব কি বার মোদী সরকার’ তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। বলা যায়, দেশ জোড়া মোদী ঝড়কে চ্যানেলাইজ করে ভোট বাক্সে নিয়ে যাওয়ার পেছনে তাঁর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এখন তিনি তৃণমূলের রণকৌশল তৈরি করছেন। বাংলার রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই ছাপ ফেলেছেন। তাঁর হাত ধরেই ‘দিদিকে বলো’, ‘বাংলার গর্ব মমতা’র মতো সফল ক্যাম্পেন দেখেছে বাংলার মানুষ। একুশের ফাইনাল ম্যাচে তিনি তৃনমূলকে কতটা মাইলেজ দিতে পারেন এখন সেটাই দেখার।

যদি মনে করেন আপনার এলাকার কোনও রাজনৈতিক নেতা এবারের বিধানসভা ভোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, তাহলে তাঁর নাম উল্লেখ করুণ নীচের কমেন্ট বক্সে।