২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে সাড়ে তিনশোরও বেশি আসন জিতে দিল্লীর মসনদে বসেছে এনডিএ সরকার। মানুষ কার্যত ব্ল্যাঙ্ক চেক তুলে দিয়েছে মোদীর হাতে। দু’দফায় অর্থাৎ ৬ বছরে বহু প্রকল্পের সূচনা, অনেক প্রকল্পের বাস্তবায়নও করেছে বিজেপি সরকার। কিন্তু মুদ্রার অন্য পিঠে ব্যর্থতার সূচিও কম লম্বা নয়। ফলে একেবারে স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই মোদী-শাহ জুটির।


মোদী সরকারের মাথা ব্যাথা বাড়াচ্ছে এমন ৫ টি কারণ নিয়ে এখানে আলোচনা করলাম আমরা।

১। অর্থনীতির বেহাল দশা – ৫ ট্রিলিয়ান ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু কার্যত তা প্রতিশ্রুতিই থেকে গেছে। স্বপ্নপূরণ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোটবন্দীর পর থেকেই দেশের অর্থনীতির হাল খারাপ হচ্ছিল। করোনা এসে তাতে শেষ পেরেকটা ঠুকে দিয়েছে। ১৩ অক্টোবর আইএমএফ জানিয়েছে, চলতি বছরে ভারতের জিডিপি আরও ১০.৩ শতাংশ সংকুচিত হবে। বছর শেষে মাথাপিছু গড় আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে বাংলাদেশ। এমনকী এগিয়ে থাকবে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাও। চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে ২৩.৯ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে জিডিপি। এই মুহুর্তে মোদী সরকারের মাথা ব্যাথার সবচেয়ে বড় কারণ অর্থনীতি।

২। বেকারত্ব বাড়ছে – বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিও রাখতে ব্যর্থ সরকার। রাষ্ট্রসঙ্ঘের শ্রম রিপোর্টও বলছে, বেকারত্বই ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। মেক ইন ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপের মতো প্রকল্প চালু করেছে মোদী সরকার। কিন্তু ফল মিলছে না। উল্টে নোটবন্দী ও জিএসটি-র জোড়া ফলায় কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। এনএসএসও-র রিপোর্ট বলছে, ৪৩ বছরে বেকারত্বের হার ছুঁয়েছে সর্বোচ্চ শিখরে। সিএমআইই-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনা ও লকডাউনের ‘সাঁড়াশি চাপে’ এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে দেশে বাঁধা বেতনের চাকরি গিয়েছে ২.১ কোটি। কিন্তু নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। ফলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তরুণ-তরুণীরা ক্ষুব্ধ।

৩। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে – পাকিস্তানের সঙ্গে আদায় কাঁচকলায় সম্পর্ক তো আছেই। সেই তালিকায় যোগ হয়েছে নেপাল, চীন, বাংলাদেশও। সিএএ লাগু করতেই ভারত সফর বাতিল করেন বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রী। নতুন করে মাথা চাড়া দেয় তিস্তা জল বন্টন সমস্যা। লাদাখ নিয়ে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক একেবারে তলানিতে। নিত্যদিনই একে অপরকে হুমকি দিচ্ছে দু’দেশ। এমনকী লিপুলেখ আর কালাপানি নিজেদের এলাকা বলে দাবি করেছে নেপালও। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুটি-বেটির সম্পর্ক বললেও বাস্তবে তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। সেচের জল নিয়ে ভুটানের সঙ্গেও মাঝে মধ্যেই বিবাদে জড়াচ্ছে ভারতীয় কৃষকরা।

৪। কালো টাকা ফেরানো থেকে স্বচ্ছ প্রশাসন দিতে ব্যর্থ – ক্ষমতায় আসার আগে কালো টাকা ফেরানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মোদী। আমজনতা ভেবেছিল, বিজয় মালিয়া, নীরব মোদী, মেহুল চোকসিদের হাতে এবার হাতকড়া পড়বে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতিও রাখতে ব্যর্থ মোদী সরকার। নোটবন্দীর ফলে কত কালো টাকা দেশে ফেরত এসেছে তাও জানাতে পারেনি কেন্দ্র। এসবের সঙ্গে আছে তথ্য না থাকার ‘রোগ’। দেশে পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা জানেই না কেন্দ্র। কতজন চিকিৎসক করোনাযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন সেই তথ্যও নেই। যা প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসাবেই প্রচার করছে বিরোধীরা।

৫। বিরোধী রাজ্যগুলির সঙ্গে আদায় কাঁচকলা সম্পর্ক – রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকবেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে কেন্দ্র রাজ্য একসঙ্গে কাজ করবে সেটাই কাম্য। কিন্তু মোদী জমানায় তেমনটা চোখে পড়ছে না। কেন্দ্রের আনা আইন বা প্রকল্প সরাসরি মানব না বলে বেঁকে বসছে দিল্লী, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, কেরলের মতো বিরোধী রাজ্যগুলি। সে সিএএ হোক কিংবা কৃষি আইন, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প হোক কিংবা এক দেশ এক রেশন কার্ড প্রকল্প। আশ্চর্যের বিষয় হল, রাজ্যগুলির মান ভাঙাতে নুন্যতম উদ্যোগও নেয়নি মোদী সরকার। উল্টে জিএসটির ক্ষতিপূরণ দেব না বলে বেঁকে বসেছে। এতে সম্পর্ক আরও খারাপ হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে ঘরে বাইরে চাপেই রয়েছে মোদী সরকার।