বর্তমান বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে ও টেলিভিশনের জগতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। আজ ১৯ শে ডিসেম্বর পঞ্চাশে পা দিলেন। ১৯৭০ সালের
১৯শে ডিসেম্বর বাংলার তথা অভিনেতা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় এর ঘর আলো করে এই পৃথিবীর আলো দেখেন। তারপর গুটি গুটি পায়ে উনচল্লিশটা বসন্ত পার করে পা দিলেন পঞ্চাশে।
এখানে মান্না দে ও পিতা শুভেন্দুর সাথে ছোট্ট শাশ্বত।
অপু নামটার সাথে এমন শাশ্বত নামটা এমন অঙ্গাঙ্গী ভাবে জুড়ে গিয়েছে যে ওনাকে অপু বললেও দ্বিরুক্তি হয় না। আর তোপসে… ফেলুদা ধারাবাহিকে তপসের চরিত্রে অভিনয় করেও তিনি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছেন। আর বব বিশ্বাস… সেটাও এক অসামান্য চরিত্রায়ন।
সেই শাশ্বত, ধীরে ধীরে আজ অর্ধশতাব্দী পার করে দিলেন।
বাক্স রহস্য:-
১৯৯৬ সালে ‘বাক্স রহস্য’ গল্পের উপর ভিত্তি করে সন্দীপ রায় চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তোপসে রূপে সেখানেই প্রথম শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেন। অসাধারণ অভিনয় এবং আজও মনে গেঁথে আছে সে চিত্র। এরপর ‘গোসাইপুর সরগরম’, ‘শেয়াল দেবতা রহস্য’, ‘বোসপুকুরে খুন খারাপি’, ‘যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে’… একের পর এক অনবদ্য চরিত্রায়ন।
ভূতের ভবিষ্যৎ
২০১২ তে অনিক দত্তের পরিচালনায় ‘ভূতের ভবিষ্যত’ সিনেমায় হাতকাটা কার্তিকের চরিত্রে তিনি অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন। সমস্ত ছবিতে তার উপস্থিতি না থাকলে ছবিতে বিশেষ উপস্থিতিতেই তিনি সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন।
মেঘে ঢাকা তারা:-
কিংবদন্তি বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের চরিত্রে নীলকন্ঠ বাগচি চরিত্রে ২০১৩ সালে তাঁর ‘মেঘে ঢাকা তারা’ সিনেমাটি তার কেরিয়ারের শ্রেষ্ঠ ছবি… মাইলফলকও বটে। নিজের চরিত্র নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে একটু বেশিই ভালবাসেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। এটা তার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল, এবং চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করেছিলেন তিনি, ব্যাপক ভাবে সফলতাও পান। এমন একটা চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে তাকে কম বেগ পেতে হয়নি, কিন্তু হল ছাড়েননি তিনি। তাই সফলতা তাঁর দরজায় এসে কড়া নেড়েছে।
শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়: মুম্বই সিনেমা জগতে প্রবেশ:-
কাহানী:-
বাবা সিনেমা অভিনেতা হওয়ায় তাকে সিনেমা জগতে প্রবেশে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১২ সালে তিনি হঠাতই মুম্বাইয়ে ডাক পান। পরিচালক সুজয় ঘোষ তার ‘কাহানী’ ছবিতে ‘বব বিশ্বাস’ নামক একজন সাইকিক কিলারের চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে নির্বাচন করেন। পর্দায় বব বিশ্বাসের এক্সপ্রেশান এবং বাচন ভঙ্গী খুবই ভীতির উদ্রেগ করে।
তাঁর একটা ডায়লগ “নমস্কার, আমি বব বিশ্বাস বলছি, ১ মিনিট…”, শান্ত স্বরে এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে খুন করে ফেলত চরিত্রটি। এই ডায়ালগ দর্শকদের মনে দাগ কেটে গিয়েছে। তেমনই ‘বব বিশ্বাস’ বলতে দর্শকদের মনে যে মুখটি ভেসে ওঠে সেটি হাতে ফোন, আর কালোফ্রেমের চশমা পরা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের।
Www.thewall. in
বব বিশ্বাস চরিত্রটি সারা ভারতে খুবই আলোড়ন সৃষ্টি করেন এবং এই চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে তিনি বহু সম্মান এবং পুরস্কারে ভূষিত হন।
বব বিশ্বাস নামক এই চরিত্র সম্পর্কে তিনি স্বয়ং বলেনঃ “বব বিশ্বাস অবশ্যই কাহানির জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। বেচারা শাশ্বত তার পরিচয় হারিয়ে ফেলেছে। যেখানেই সে যায়, বব বিশ্বাস হিসেবেই পরিচিত হয়।”
নিজের উপলব্ধি শেয়ার করলেন অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়:-
নিজের উপলব্ধি তিনি শেয়ার করেছেন বিভিন্ন মিডিয়ায়। you tube এ তিনি বলেছেন… পাবলিককে যারা ভাবছেন, তাদের ছবি চলছেএ না, আসুন দেখে নিই তিনি কী বলেছেন…
দ্বিখণ্ডিত:-
জটিল মনস্তাত্ত্বিক ছবি ‘দ্বিখণ্ডিত’ তে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। মন আর মননের এক আশ্চর্য খেলার আলোছায়ায় ধরা কাহিনিটি অসাধারন ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি।
এক মানসিক রোগগ্রস্ত সাহিত্যিক কৌশিক। তিনি কাহিনি লিখছেন, যার কেন্দ্রীয় চরিত্র বিপিন। পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও এক জমিবিতর্কে এই বিপিন হারিয়েছেন তাঁর মা, স্ত্রী, এমনকি কন্যাকেও। কাহিনিটি লিখতে লিখতে কৌশিকের মধ্যে অদ্ভুত এক পরিবর্তন আসতে থাকে। গল্পের চরিত্রগুলো যেন তার সামনে হেঁটেচলে বেড়ায়। তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। রক্তমাংসের মানুষেরা যা কিছু আদানপ্রদান করে, কৌশিক তা-ই যেন করতে থাকেন তাঁর চরিত্রদের সঙ্গে। এরপর কী হলো দেখবার অদম্য কৌতূহল দমন করতে দেখেই নিতে ইচ্ছে করবে সকলের।
শবর চরিত্রে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়:-
ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু-র বাইরে আরও এক দুঁদে গোয়েন্দা পর্দায় একেবারে বাজিমাত করে দিয়েছেন, তিনি শবর দাশগুপ্ত। লালবাজারের একেবারে পেশাদারি গোয়েন্দা। ‘শবর’ এর ভূমিকায় অভিনয় করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়।
২০১৫ সালে পর্দায় এসে সবাইকে মুগ্ধ করে দিয়েছিল অরিন্দম শীলের ‘এবার শবর’। তারপরই শবরের একটা আলাদা ফ্যান বেস তো তৈরিই হয়ে গিয়েছিল। ‘ঈগলের চোখ’ এও অসামান্য ছাপ তার কৃতিত্বের। গল্পের প্রধান চরিত্রে অনির্বাণ ভট্টাচার্য। তার স্ত্রী হিসেবে দেখা গেছে জয়াকে। রহস্য, উত্তেজনা, যৌনতা আর খুনের সাসপেন্সে ঠাসা একটি ছবি। আর শাশ্বতের সাথে শবর নামটা জুড়ে গিয়েছে তখনই।
ছোট পর্দা থেকে বড়… সবেতেই এক সফল নাম শাশ্বত… আজ তিনি পঞ্চাশে পা দিলেন। এই যে পঞ্চাশ বছরের জার্নি… সবই কিন্তু কুসুমাত্তীর্ণ হয়নি। বহু ঠোক্কর খেতে হয়েছে তাঁকে এই চলার পথে। কিন্তু তিনি বারবার সেই ঠোক্করগুলোকে আশীর্বাদ রূপে নিয়েছেন, ফলে যাত্রাপথ দীর্ঘ হয়েছে।আগামীতে আরো পঞ্চাশ এমনই সুখ স্মৃতি তিনি নিজেও বহন করুন এবং আমাদের ঝুলিতে আসুক আরো অনেক অনেক অনেক চরিত্র।
আজ জন্মদিনে অভিনেতা শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। ওনার দীর্ঘায়ু কামনা করি আমরা সবাই।