নিজস্ব সংবাদদাতাঃ অবশেষে সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আজ থেকেই রাজনীতির পুরানো ময়দানে নেমে পড়তে চলেছেন শোভন চ্যাটার্জি ও তার ‘বিশেষ বন্ধু’ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এবারে ময়দানটা বদলে গিয়েছে, তিনি এতদিন জোড়া ফুল শিবিরের হয়ে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় ছিলেন। এবার একই দায়িত্ব পালন করবেন পদ্মফুল শিবিরের হয়ে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর প্রায় গত দেড় বছর ধরে নানান মান-অভিমানের পালা চলেছে শোভন-বৈশাখীর। তবে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব‌ও চাইছিল শোভন সক্রিয় হয়ে উঠে তাদের হয়ে ময়দানে নামুন। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সেই চাহিদাকে মান্যতা দিয়ে এবং একই সঙ্গে নিজের রাজনৈতিক গুরুত্ব প্রমাণ করতে আজ এক বড় মিছিলের মধ্য দিয়ে তার এই নতুন পথ চলা শুরু হতে চলেছে।

গত সপ্তাহতেই বিজেপির পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদের দক্ষিণ বঙ্গ জোনের পর্যবেক্ষক করা হচ্ছে শোভন চ্যাটার্জিকে এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই জোনের‌ই সহকারি আহ্বায়ক করা হয়। তারপর শোভন বাবু কোনো মন্তব্য না করলেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্বের এই সিদ্ধান্তকে তারা তাদের ওপর আস্থা ও ভরসার প্রমাণ হিসাবেই দেখছেন। তারা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই অঞ্চলে বিজেপির সংগঠন শক্তিশালী করে তোলার চেষ্টা করবেন।

ঘটনা হল গোটা রাজ্যের মধ্যে এই দক্ষিণবঙ্গ জোনেই বিজেপির সাংগঠনিক অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। কলকাতা, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার অল্প কিছু অংশ নিয়ে এই দক্ষিণবঙ্গ জোন গঠিত। অনেক হিসেব কষেই বিজেপি নেতৃত্ব শোভন চ্যাটার্জীর হাতে এই অঞ্চলের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব তুলে দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ তৃণমূলে থাকার সময় কলকাতার মেয়র থাকার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সভাপতি ছিলেন। তার ফলে এই অঞ্চল তার হাতের তালুর মতো চেনা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে শোভন চ্যাটার্জি ময়দানে নামলেই তার অনেক অনুগামী বিজেপিতে যোগদান করবেন।

শোভন,
বৈশাখী-শোভন-রত্না

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি নিজে জেলার সমস্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই অঞ্চলে তৃণমূলের যে দাপট বজায় আছে তা ভাঙার চেষ্টা করাই বিজেপির প্রথম লক্ষ্য। কারণ তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় মোটামুটি ভালো ফলাফল করতে না পারলে তাদের রাজ্য দখলের ইচ্ছে যে স্বপ্নই থেকে যাবে তাও বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতারা। এদিকে অভিষেকের দাপটে পুরানো শোভন পন্থী নেতারা তৃণমূলের মধ্যে এই মুহূর্তে বেশ কোণঠাসা, তারা দল পরিবর্তন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

যদিও শোভন-বৈশাখী জুটিকে দক্ষিণবঙ্গ জোনের দায়িত্ব দেওয়ার পরেই বিতর্ক শুরু হয়ে যায় বিজেপির মধ্যে। তাদের দক্ষিণ কলকাতার জেলা সভাপতি কয়েকদিন আগেই দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মন্তব্য করেন পুরানো বিজেপি কর্মীদের বাদ দিয়ে অন্য দল থেকে আসা নেতাদের দলের মাথায় বসিয়ে দিচ্ছে নেতৃত্ব। তার ইঙ্গিত যে শোভন-বৈশাখী জুটির দিকে তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সেই সময় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন। তার মতে এই ধরনের মন্তব্য আখেরে দলেরই ক্ষতি করবে।

তবে শোভন চ্যাটার্জীর রাজনৈতিক ময়দানে ফিরে আসার প্রথম দিনটি বিতর্কহীন হচ্ছে না। তার নেতৃত্বে আজ আলিপুর থেকে হেস্টিংসের বিজেপির নতুন রাজ্য সদর দপ্তর পর্যন্ত একটা বড় মিছিল হওয়ার কথা। যদিও কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে এই মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারা জানিয়েছেন বিজেপির পক্ষ থেকে করা আবেদনে জানানো হয়েছিল প্রায় ৭০ টির মতো গাড়ি নিয়ে এই মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। কলকাতা পুলিশের দাবি সপ্তাহের প্রথম দিন এতো গুলো গাড়ি নিয়ে মিছিল করা হলে যে বিপুল যানজট সৃষ্টি হবে কলকাতার বুকে তা ঠিক করতে রাত হয়ে যাবে। যদিও বিজেপি মিছিল করার সিদ্ধান্তে অনড়।

শোভন চ্যাটার্জীর প্রাক্তন স্ত্রী রত্না চ্যাটার্জী তার রাজনীতিতে ফিরে আসার বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি অতীতের দিকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেন ‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই’। রত্না দেবীর বক্তব্য শোভন বাবু আগে রাজনীতিতে সত্যিকারের ফিরে আসুন তারপর এই নিয়ে মন্তব্য করা যাবে।