নিজস্ব সংবাদদাতা- সরস্বতী পুজোর দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে চটুল বাংলা গান ‘টুম্পা সোনা’ চালিয়ে নাচার ঘটনার তদন্তের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট দেখে চক্ষু চড়কগাছ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। জানা গিয়েছে সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক মণিশঙ্কর মন্ডল ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে টুম্পা সোনা চালিয়ে নেচেছিলেন। একজন অধ্যাপক যদি এভাবে চটুল গানের তালে নাচতে থাকেন তাহলে সাধারন পড়ুয়াদের কাছে কি বার্তা যাবে তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত রাজ্যের শিক্ষাবিদরা।

তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ বৈঠকে বসেছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রদেরকে আগামী দু’বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাসপেন্ড করা হবে। এর ফলে আগামী দু’বছর এই ৫ জন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবে না। ঘটনাচক্রে অভিযুক্ত পাঁচজন‌ই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ছাত্রসংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য।

যে পাঁচজনকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন মনণিশঙ্কর মন্ডল, রাজা মান্ডি, দেবর্ষি রায়, তীর্থপ্রতিম সাহা, রনি ঘোষ। এদের মধ্যে মণিশঙ্কর মন্ডল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন রাজ্য স্তরের নেতা। বর্তমানে তিনি সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। রাজ্যের শিক্ষা মহল অবাক হয়ে গিয়েছে কীভাবে একজন অধ্যাপক ঐদিন একদল ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে চটুল গানের তালে নাচলেন! শিক্ষাবিদদের বক্তব্য বরং ওই অধ্যাপকের উচিত ছিল চটুল গানে নাচা ছাত্র-ছাত্রীদের থামিয়ে দেওয়া। তা না করে তিনি তাদের সঙ্গে সামিল হয়ে অপসংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালী চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “আমরা এবারে সরস্বতী পুজোর জন্য ছাত্রদের বা কোনো সংগঠনকে অনুমতি দিইনি। করোনা বিধি না মেনে ওই ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে চটুল গানের তালে নাচানাচি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাই আমরা বাধ্য হয়েছি শাস্তিমুলক পদক্ষেপ নিতে।”

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে করোনা পরিস্থিতি থাকার জন্য এ বছর তারা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সরস্বতি পুজো করতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু একদল ছাত্র বেআইনিভাবে মাস্ক ছাড়াই কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে সরস্বতী পুজো করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বিধি এবং করোনা বিধি ভঙ্গ করেছে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি ছাড়া সরস্বতী পুজো করে এই ছাত্ররা হয়ত রেহাই পেয়ে যেত, কিন্তু চটুল গানের সঙ্গে নাচানাচির ফলে অভিযুক্তরা একরকম স্বেচ্ছায় নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছেন।