ইনস্টাগ্রামে পরিচয়ের পর বিয়ে। দেড় মাসেই মোহভঙ্গ। স্ত্রীর বান্ধবীর প্রতি স্বামীর আশক্তি। বান্ধবীর স্বামী ও বান্ধবীকে নিয়ে নিজের স্বামীকে খুনের পরিকল্পনা। গ্রেফতার তিনজন।
শ্রীরামপুরে রাজ্যধরপুরে দিল্লি রোডের পাশে যুবকের মুন্ডহীন দেহ পাওয়া গিয়েছিল গত ২মে। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে পুলিশের। যুবক উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির সুভাষ রোডের বাসিন্দা শুভজ্যোতি বোস(৩১)। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা চন্দনা চ্যাটার্জী ওরফে পূজার সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে পরিচয় হওয়ার পর গত ১৩ মার্চ বিয়ে হয় শুভজ্যোতির।

বিয়ের কয়েকদিন পর পূজা তার বান্ধবী শর্মিষ্ঠার বাড়ি উত্তরপাড়ায় চলে আসে। মাঝে মধ্যে উত্তরপাড়ায় আসত শুভজ্যোতি। গত ১ মে পূজার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। ২ মে শ্রীরামপুরে তার মুন্ডহীন দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ প্রথমে ঘটনার তদন্তে নেমে অন্ধকারে হাতরাতে থাকে। মুন্ডহীন মৃতদেহ সনাক্ত করা কঠিন ছিল।

তাই বিভিন্ন থানায় মৃতদেহের ছবি পাঠানো হয়। খরদা থানায় ১৮ মে কিডন্যাপের অভিযোগ দায়ের করে শুভজ্যেতির পরিবার। শুভজ্যেতির হাতের ট্যাটু দেখে দেহ শনাক্ত করে তার পরিবার। এরপরেই পুলিশ মূল অভিযুক্ত সুবীর অধিকারী(সর্মিষ্ঠার স্বামী)কে গ্রেফতার করে। উত্তরপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় শর্মিষ্ঠা ও পূজাকে।

মুন্ডহীন দেহ


সোমবার চন্দননগর পুলিশের ডিসিপি অরবিন্দ আনন্দ সাংবাদিকদের জানান, ১ মে কোন্নগরে ডাকা হয় শুভজ্যোতিকে। সুবীর আর শুভজ্যোতি ধারসার কাছে একটি ইট ভাঁটায় বসে মদ খায়। এরপর চপার দিয়ে শুভজ্যোতির গলা কেটে গঙ্গায় ফেলে দেয়। মৃতেদহ প্লাটিক মুরে টলি ভ্যানে চাপিয়ে শ্রীরামপুরে দিল্লি রোডের ধারে সেইল কারখানার পাঁচিল ঘেঁসা নর্দমায় ফেলে দেয়।

পরদিন অর্থাৎ ২ মে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। কিন্তু মুন্ডু না থাকায় অন্ধকারে পরে যায় তদন্তকারীরা। আইসি শ্রীরামপুর দিব্যেন্দু দাসের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়। খরদা থানা থেকে খবর পেয়ে শ্রীরামপুর মর্গে এসে ট্যাটু দেখে চিনতে ছেলেকে চিনতে পারেন শুভজ্যোতির বাবা ধ্রুবজ্যোতি বোস।


এরপরেই পুলিশ উত্তরপাড়ায় রেড করে। রবিবার শুভজ্যোতির স্ত্রী পূজা ও তার বান্ধবী শর্মিষ্ঠাকে আটক করে। তাদের জেরা করে সুবীর অধিকারীকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার তিনজনকেই শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হবে। ডিসি জানিয়েছেন খুনের প্রাথমিক মোটিভ জানা গেছে। পূজার বান্ধবী শর্মিষ্ঠাকে কু প্রস্তাব দেওয়াতেই খুনের পরিকল্পনা করে তিনজন।

সুবীর তার স্ত্রীর সঙ্গে অন্য কারও সম্পর্ক মানতে পারত না। তাই বরানগর থানা এলাকাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল সে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একজন শর্মিষ্ঠাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ায় তাকে চপার দিয়ে কুপিয়ে ছিল। যুবক বেঁচে গেলেও সুবীর জেল খাটে। গত মাসে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে পেশায় গাড়ি চালক সুবীর।


সূত্রের খবর, পূজা আর শর্মিষ্ঠা যৌনকর্মী। পেশার তাগিয়ে অনেক সময় বাইরে থাকত পূজা। দীঘা তারাপিঠ হামেশাই যেত। সেই কারণে বিয়ের পরপরই পূজা শুভজ্যোতিকে ছেড়ে উত্তরপাড়ায় শর্মিষ্ঠার ভাড়া বাড়িতে থাকত। তার পেশা নিয়ে কোনও অশান্তি ছিল কিনা সে বিষয়ে পুলিশ কিছু স্পস্ট করেনি।