PicsArt 10 16 01.09.39

বর্তমান সিনেমার রকমারি প্রকারভেদ  যেমন-  রোমান্স,  থ্রিলার, অ্যাকশন, অ্যানিমেশন, কমেডি, হরর-কমেডি। কখনও কোন সিনেমা মানুষের মন জিতে নেয়, কখনও আবার অশ্রু ধারায় ভাষায়, কখনও মনে প্রেমের  রং লাগায়, কখন বিরহ যন্ত্রণাকে তাজা করে দেয়, আবার কিছু সময় হাসতে হাসতে পেতে খিল ধরিয়ে দেওয়ার জোগাড় করে, কখনও আবার ভুতের ভয়ে পাশের মানুষের হাত আস্টে-পৃস্টে বসে থাকার অজুহাত এনে দেয়, কখনো কোন অপ্রিয় বাস্তবকে চোখের সামনে তুলে ধরে,এই সকল বিষয়ের সাক্ষী থাকে  সিনেমা হল।

cinemacon atmosphere
সৌজন‍্যে – গুগল

সিনেমা হলে গিয়ে কিন্তু সিনেমা দেখার মজাই আলাদা , কিছু সিনেমা আছে যেগুলি শুধু প্রেক্ষাগৃহেই ভালো লাগে, বাড়ি বসে পপকর্ন খাওয়ার সাথে টিভিতে দেখার মধ্যে সেই মজা পাওয়া যাবে না ।কারন সিনেমা তৈরি হয় লাইট, ক্যামেরা, মিউসিকের যুগলবন্দিতে। সেই আলোর ছটা, সাউন্ডের গমগম ভাব যেগুলি না হলে সিনেমার আমেজ জমে না  আর সেগুলি বাড়ি বসে অনুভব করার কথা ভাবা মানে বোকামির লক্ষন।

আজ আমরা কথা বলব সেই সকল ১০টি সিনেমার কথা যা সিনেমা হলে না দেখলে পুরো বৃথা। কারন হলের পরিবেশটাই আলাদা হয়।

১.বাহুবলী

হিন্দি , তেলেগু, তামিল ও মালায়লাম ভাষায় তৈরি হয়েছে সিনেমাটি।  এই সিনেমায় যে পোশাক, অলঙ্কার, সাজসজ্জা, থিম , সাউন্ড এর ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি বাড়িতে বসে উপভোগ করার মধ্যে কোন স্বার্থকতা নেই, সিনেমা হলেই এই সিনেমাটি বহিঃপ্রকাশ দুর্দান্ত।

images
pinterest

২.পদ্মাবত

চিতরের রানী পদ্মাবতীর জীবন আঙ্গিকে তৈরি এই সিনেমা ছিল খুব বিগ বাজেটের, ফলে প্রথম থেকে শুরু প্রতিটি দৃশের মধ্যে ছিল ঐতিহাসিক ঐতিয্যবহনকারী প্রেক্ষাপট।  তাই তার আলোকসজ্জা, পোশাক স্বাভাবিক ভাবে অন্যন্য সিনেমার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, আর এই সিনেমার পরিবেশিক মজা  প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে উপভোগ করাই বাঞ্চ্যবীয়, যারা হলে গিয়ে দেখেছে তারাই অনুভব করেছে।

৩.ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বক্সী

থ্রিলার মুভির আসল উপলব্ধি হল সেই রোমাঞ্চ রসে ভরা আওয়াজ। সাসস্পেন্স ভরে ভরে থাকে এই সিনেমায় আর সেগুলি পড়তে পড়তে ফুটে ওঠে শব্দের মধ্যে, হালকা থেকে ভারী শব্দের ভার এতটাই প্রখর যে দর্শক তার মনে হবে সে নিজে সেই স্থানে উপস্থিত আর সে সব কিছু নিজে অনুভব করছে, একপ্রকার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার উপক্রম। তাই এই জাতীয় ছবির আসল জায়গা সিনেমাহলে।

৪. ২২শে শ্রাবণ

সৃজিত পরিচালিত ২২শে শ্রাবণ পুরো ভরপুর থ্রিলারে আবৃত। প্রতিটি দৃশ্য ও আওয়াজের মধ্যে লুকিয়ে আছে রহস্য। রসহ্যের মোড়কে তৈরি এই সিনেমা হলে দারুণ সাড়া পেয়েছে, অনেক সময় সাস্পেন্সের সাথে ভেসে এসেছে আসে পাশে দর্শকদের চোখে মুখে লেগে থাকা কৌতূহলের নিঃশব্দ স্পন্দন, যা মিলে মিশে আলাদাই দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে। 

বিরিয়ানি টা হল লাক্সারী আর ডাল ভাত টা হল নেসেসিটি। দুটোর মধ্যে তফাৎ তা বুঝতে শেখ। ” -বাইশে শ্রাবণ

আর এই ধরনের কিছু উক্তি এমন থাকে  যা সিনেমার গুনগত মান বাড়িয়ে তোলে  এবং সেগুলি হলের চার দেওয়ালের মধ্যেই শুনতেই ভালো লাগে।

৫.বেলাশেষে

এটি একটি পারিবারিক চলচ্চিত্র। পরিবারের সাথে সবাই মিলে সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখার মতো আনন্দ হয়তো বাড়িতে পাওয়া যাবে না। কারন বাড়ি মানে হাজার কাজ ও দায়িত্ব, তার ফাঁকে সময় বের করে  সিনেমা দেখা কারোর পক্ষেই সম্ভব হয় না, সে ক্ষেত্রে এই ধরনের পারিবাবিক সিনেমা সকল পরিবার সমেত হলে দেখাই শ্রেয়।

এই সিনেমার একটি আবেগতাড়িত সংলাপ

ঐ অভ্যাস গুলো আমর কাছে প্রেম।” -বেলাশেষে

৬. স্ত্রী

স্ত্রী সিনেমাটি সম্পূর্ন হরর বললে ভুল হবে, কমেডির সাথে হররের অসাধারন কম্বিনেশন যা হলে দেখার মতো মজা কোথাও নেই। সচারচর এই ধরনের কম্বিনেশনের অনুভুতি পাওয়া যায় সাউন্ড এফেক্টের মাধ্যমে, একটা হরর সিনেমা কিভাবে কমেডির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে  তা বাড়িতে দেখার মধ্যে  কোন স্বার্থকতা নেই, কারন বাড়িতে তেমন অনুভুতি আসবে না, কিন্তু যারা  হলে দেখেছে তারা আজও এই অসাধারন আমেজকে স্মৃতিতে ধারন করে  রেখেছে।

৭.ডার্ক নাইট রাইসেস

এটি এমন একটি সিনেমা যেখানে কোন রকম ভি এফ এক্স বা  গ্রিন স্ক্রিন  ব্যবহার করা হয়নি, সমস্ত দৃশ্যই আসল। আলাদা করে সেট তৈরি করা হয়নি। আসল দৃশ্যপটেরর মাধ্যমে গোটা ঘটনা বাস্তবায়িত করা হয়েছে। সিনেমাতে কোন স্টান্ট করতে গেলে স্টান্টম্যানের প্রয়োজন হয় কিন্তু এই সকল সিনেমায় যারা অভিনয় করেছে তারাই নিজেরা বিভিন্ন দৃশ্যের স্টান্ট করেছে। তালে বলাই বাহুল্য যে এই ধরনের সিনেমা তৈরি হয় একমাত্র হলে গিয়েই উপভোগ করার জন্য।

৮.অ্যাভেঞ্জারস এন্ডগেম

অ্যাভেঞ্জারস যে হলে না দেখে বাড়িতে দেখবে সে এই সিনেমার  মাহাত্ম্যই বুঝবে না। কারন এই সিনেমাটি সম্পূর্ণই 3D ভার্সানে।  3D তে দেখার মজা সাধারণ বাড়ির এল সি ডি তে নেই।  চোখের সামনে ভেসে ওঠা দৃশ্য, অ্যাকশন  দেখে মনে হয় আমি  যেন সেখানে স্বয়ং উপস্থিত। এই রোমহর্ষক মুহুর্তের অনুভব  একমাত্র হলে বসে   3D গ্লাস চোখে দিয়ে পপকর্ন খাওয়ার মধ্যেই আছে।

৯. হ্যারি পটার

বর্তমান জেনারেশনের ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠার মধ্যেকার জীবনে এই একটি মাত্র সিনেমা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। টোটাল ৮টি পার্ট রয়েছে এই সিনেমার। গোটা সিনেমা দ্বারা যাদুতে বশীভুত হয়ে যাওয়ার জোগাড়। আর এক একটা দৃশ্য এতই আকর্ষনীয় যে হলের পর্দায় দারুণভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।  হ্যারি পটার যে হলে না দেখে ফোন কিংবা টিভি তে দেখেছে সে এই সিনেমার মূল আকর্শনের মূল  বিষয়বস্তু বোঝে নি।

১০. কনজিউরিং

অসাধারন একটি ভৌতিক সিনেমা যা দেখলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার জোগাড়। হলে গিয়ে কনজিউরিং দেখার পর একা থাকা যে কারোর পক্ষে অসম্ভব। বিভিন্ন ভৌতিক শব্দের কম্বিনেশন গোটা হলকেই ভুতুরে করে তোলে।  পরিবেশ এতটাই হনটেড হয় যে আলাদা কোন আওয়াজ শুনলেই বুক ধড়পড় করে ওঠে।  তাই ভুতের সিনেমা যে কোন সিনেমা হল ছাড়া অসম্পুর্ণ।

যে কোন সিনেমা হল ছাড়া সত্যি বেমানান। কিন্তু উপরিউক্ত সিনেমাগুলি ও অন্যন্য আরও কিছু সিনেমা  আছে যার স্বার্থকতা আসে শুধু সিনেমা হলের স্ক্রিনে অন্যত্র কোথাও না।