মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে অভিনয় জগতে পা , আর সেই পায়ে ভর দিয়ে আজও এগিয়ে চলছে মাইলের পর মাইল। তার জীবনে চলার পথে এসেছে অনেক বাঁধা, প্রতিকূলতা। আন্ধকারচ্ছন্ন কালো মেঘের স্তুপ আবৃত করে রেখেছিল তার আলোময় জীবনকে। ১৬ বছরের নাবালিকার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধতা, সন্তানের মা হওয়া, স্বামীর দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, এইরূপ প্রতিকূলতা থাকা স্বত্বেও নিজের কেরিয়ার টিকিয়ে রাখার অদম্য চেষ্টা যে কোন সাধারন মেয়ের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠত না। কিন্তু সে পেরেছে তাই সে সত্যিই অসাধারন। রূপে লক্ষী ও গুনে সরস্বতী এই প্রবাদটি তার সাথে ১০০ শতাংশই যুক্তিসঙ্গত । পায়ের সকল জং পড়া শিকল ছিঁড়ে আজ সে স্বাধীনচেতা নারী। নিজ জীবনে ৩৫ টি সিনেমা করে আজ বাংলা সিনেমা জগতের প্রথম সারির এক নম্বর অভিনেত্রী শ্রাবন্তী চ্যাটার্জী ।
শ্রাবন্তী আজ নিজের জীবনে সফল ,৩৫ টি সিনেমা থেকে শুরু করে রিয়েলিটি শো ও বিচারকের আসনে নিজের দক্ষ বিচার ক্ষমতা প্রমান করার সুযোগ সে ছাড়েনি। এই অভিনয় জগতে যে সেরা ১০টি সিনেমার মাধ্যমে দর্শককূলের মনের অন্তরায় ছাপ ফেলেছে সেই ১০টি সিনেমার দিকে চোখ বলান যাক।
১) মায়ার বাধঁন
১৯৯৭ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে স্বপন সাহা পরিচালিত ‘মায়ার বাঁধন’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি বাংলা সিনেমার জগতে ডেবিউ করে, অসাধারণ দক্ষতার সাথে শিশুচরিত্রটি সে ফুটিয়ে তোলেন। সেই বয়সে প্রসেনঞ্জিত ও রিতুপর্না সাথে একই স্ক্রিন শেয়ার করেন সেই খুদে স্রাবন্ত্রী , আর আজ তাঁদের সমকক্ষীয় হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে।
২)অমানুষ
২০০৯ সালে তার ৪টি সিনেমা মুক্তি পেলেও দর্শকদের মনে জায়গা করে নেয় তার প্রাক্তন স্বামীর পরিচালিত সিনেমা ‘অমানুষ’। এক সাধারণ মেয়ের প্রেমের জীবন কিভাবে বিকৃত প্রেমের চাহিদার কবলে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির আঁকার ধারন করে, গোটা সিনেমাতে সে তার অভিনয়ের দক্ষতায় মাতিয়ে রেখেছিল।
৩) কানামাছি
২০১৩ সালে রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘কানামাছি’ সিনেমায় দক্ষ জার্নালিস্টের ভূমিকায় অভিনয় করেছিল। একজন সাংবাদিককে নিজের পেশাগত কাজে সৎ পথে চলার জন্য কি কি পরিস্থিতির সমুক্ষীন হতে হয় ও বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি কি তাই তুলে ধরা হয়েছে এই সিনেমার।
৪) গয়নার বাক্স
২০১৩ সালে অপর্না সেনের ‘গয়নার বাক্সে’ সম্পূর্ন ভিন্ন চরিত্রে দেখা গেছে তাকে, একাল ও সেকাল উভয় চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেওয়ার উপক্রম। বলতে গেলে একই অঙ্গে ভিন্ন রূপ।
৫) কাটমুন্ড
রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ২০১৫ সালে পেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘কাটমুন্ডু’। দুর্দান্ত একটি হাস্যকৌতুক সিনেমা, যেখানে স্রাবন্তী নিজেকে তুলে ধরেছে অন্য আকারে, রোগ যে কোন মানুষের অন্তরে আনন্দ, বাচ্চাত্ম্যকে কেড়ে নিতে পারে না, হাসি মুখেও রোগ জয় করা যায়, তার চরিত্রের অভিব্যক্তি এর স্বার্থক প্রতিফলন।
৬) শিকারি
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশ- ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত । পরিচালনার দ্বায়িত্বভারে ছিল জাকির হোসেন সীমান্ত ও জয়দীপ মুখার্জি। ভারত হোক কিংবা বাংলাদেশ তার অভিনয়ের ধার সর্বত্র সমান। কোথাও ভাটা পড়ার যো নেই।
৭) উমা
কিছুটা একঘেয়ে চরিত্র থেকে বেরিয়ে ঝাঁপ দেয় নতুনত্য চরিত্রের সমুদ্রে, বলা যায় তার জীবনের চেনা চরিত্র।২০১৮ সালে সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘উমাতে’ সে তার মাতৃত্বের স্বাদ খুঁজে পায়, বাস্তব জীবনে সে নিজেও মা। মায়া, স্নেহ, মমতা, ভালবাসায় সন্তানকে কিভাবে আগলাতে হয় তার অজানা নয়। তাই উমার মার চরিত্রে অভিনয় করতে তাকে প্রশিক্ষন নিতে হয় নি, নিজের অন্ততের মাতৃত্ববোধ কে জাগিয়ে জলজ্যন্ত করে তুলেছে মেনকার চরিত্রকে।
৮) গুগলি
‘গুগলি’ সিনামাটি মুক্তি পায় ২০১৮ সালে। সম্পুর্ন আলাদা চিত্রনাট্য তুলে ধরে পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়। সন্তান হল তার মায়ের প্রান। আর সেই প্রান যদিও মায়ের শরীর থেকে ছিন্ন হয়ে যায় তবুও তার ছাপ ফেলে যায় তার মায়ের শরীরে, মননে।
৯) উড়ান
২০১৯ সালে ত্রিদিব রমন পরিচালিত সিনেমা ‘উড়ান’। একপ্রকার সামাজিক শিক্ষা, পরিস্থিতি, স্বপ্ন সফল করার সঠিক মার্গ তুল ধরা হয় এই সিনেমায়। একদিকে একটি মেয়ের গানের জগতে বেড়ে ওঠার কাহিনী , অন্যদিকে দির্ঘদিন ধরে চলে আসা জলদূষণের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার অঙ্গীকার, উভয় চরিত্রের মধ্যে অসাধারন ভারসম্যতা বজায় রাখার কৌশল সত্যিই অবাক করার জোগাড়।
১০) টেকো
২০১৯ সালে একটি অন্য স্বাদের গল্প নিয়ে হাজির হয় পরিচালক অভিমন্যু মুখোপাধ্যায়। এক চুলের আত্মকথা। মাথা ভর্তি চুলের পরিবর্তন ঘটে টাক মাথায়, আর তাই দেখে বিয়ে বাতিল করে টেকো সিনেমায় অভিনীত শ্রাবন্তী, তারপর থেকে শুরু হয় যুদ্ধ।
বেশিরভাগ অভিনেত্রী সুযোগ পায় কমার্শিয়াল সিনেমায়। কিন্তু শ্রাবন্ত্রী চ্যাটার্জি তার জীবনে বিভিন্ন স্বাদের, বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন নিত্যনতুন সিনেমা, তাই হয়তো তার জায়গা আজ অবধি কেউ ধখল করা তো দূর টলাতে অবধি পারেনি।
তার প্রতিটি সিনেমা একটি অপরটির থেকে ভালো। আপনাদের কোন সিনেমাটি সবথেক বেশী পছন্দের। কোন অভিনয়ে আপনারা স্বস্তিকাকে দেখতে পছন্দ করেন অবশ্যই আমদের জানান। আর এই ১০ টি সিনেমার মধ্যে যদি এখনও কিছু বাদ থেকে যায় তাহলে সময় অতিবাহিত না করে দেখে নিন।