নিজস্ব সংবাদদাতা- প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দিল্লির রাজপথে পুলিশের সঙ্গে কৃষকদের খন্ডযুদ্ধের পর মনে হয়েছিল কৃষক আন্দোলন এবার ধীরে ধীরে শক্তি হারাতে থাকবে। কিন্তু নতুন করে এই আন্দোলন আবার শক্তি সঞ্চয় করছে। এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে মূলত উত্তরপ্রদেশ। যোগী রাজ্যের কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েতের চোখের জলের ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই সে রাজ্যে একের পর এক কিষান মহাপঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হতে শুরু করেছে।

উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর, মথুরা, বাগপতের পর সোমবার বিজনৌরে আরেকটি কৃষক মহাপঞ্চায়েত অনুষ্ঠিত হল। প্রায় ১৫ হাজার কৃষক বিজনৌরের মহাপঞ্চায়েতে উপস্থিত হয়ে জানিয়ে দেন তারা কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে আছেন। এই মহাপঞ্চায়েতে উত্তরপ্রদেশের কৃষক নেতাদের পাশাপাশি মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের কৃষক নেতারা এসেও যোগ দেন। তারা পরিষ্কার জানিয়েছেন এই কৃষক আন্দোলন কেবলমাত্র উত্তর ভারতের কৃষকদের নয়, সারাদেশের কৃষকদের দাবি দাওয়ার আন্দোলন। প্রসঙ্গত বিজেপির পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে কেবলমাত্র পাঞ্জাব এবং হরিয়ানার কৃষকরাই আন্দোলনে শামিল হয়েছে।

ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের যুব সংগঠনের প্রধান গৌরব টিকায়েত এই মহাপঞ্চায়েতে উপস্থিত হয়ে বলেন, “সরকার আমাদের আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার জন্য খালিস্তানি তকমা লাগিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু আমরা জোরের সঙ্গে বলছি এই আন্দোলন কোনো খালিস্তান পন্থীদের নয় বা আমরা কেউ পাকিস্তানি নই। আমরা এই দেশেরই কৃষক, যারা কৃষি আইনের বিরোধিতা করছে। কারণ এই কৃষি আইন দেশের কৃষকদের চিরজীবনের জন্য ধ্বংস করে দেবে। কেন্দ্রীয় সরকার ইগো নিয়ে চলছে বলেই আমাদের দাবি-দাওয়া মানতে চাইছে না। প্রায় ১৫০ জন কৃষক আন্দোলন করতে গিয়ে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার কোনো বক্তৃতায় একবারের জন্যও এদের কথা উল্লেখ করেননি।”

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ সম্প্রদায়ভুক্ত আখ চাষীদের রাজনৈতিক দল আরএলডির নেতা জয়ন্ত চৌধুরী মহাপঞ্চায়েতে যোগ দিয়ে বলেন কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের কথা শুনছে না। কারণ তারা পুঁজিবাদীদের কাছে ইতিমধ্যেই আত্মসমর্পণ করে নিয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি কৃষকদের ‘হনুমান’ বলে চিহ্নিত করে দাবি করেন, “কৃষকরাই বিজেপির এই লঙ্কা ধ্বংস করে ছাড়বে।”

উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন কৃষক নেতারা জানিয়েছেন তারা ব্যাপক সংখ্যায় দিল্লির সিঙ্গু এবং গাজিয়াবাদে গিয়ে কৃষক ধর্নায় সামিল হবেন। যদিও কৃষকরা যাতে গাজিয়াবাদের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হতে না পারে তার জন্য উত্তরপ্রদেশ পুলিশ নানা উপায়ে রাস্তা বন্ধ করে দিতে শুরু করেছে। এমনকি কৃষকদের ট্রাক্টর আটকাতে রাস্তায় পেরেক পর্যন্ত বসিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে!