fbpx
Home সম্পাদকীয় বৈশিষ্ট্যযুক্ত মহুয়া মৈত্রের তখন-এখন

মহুয়া মৈত্রের তখন-এখন

বঙ্গ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে চর্চিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো “দু’পয়সার সাংবাদিক” মন্তব্যটি। আর এই মন্তব্য করার সূত্রে এই মুহূর্তে লাইম লাইটে আছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সাংবাদিকরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ‌‌ আরো বেশী অবাক হয়ে গিয়েছে তার মন্তব্য পরবর্তী আচরণ দেখে। এই মন্তব্য করার পর কলকাতা প্রেস ক্লাবের দাবি অনুযায়ী ক্ষমা চাইতে গিয়ে তিনি আবারও ব্যঙ্গ করে বসেন সাংবাদিকদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি দেখেন “দুঃখজনক সঠিক কথা বলার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি” !

তার এই মন্তব্যকে সমস্ত স্তর থেকেই ঔদ্ধত্যের চরম বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করা হচ্ছে। তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকেও তার এই মন্তব্যের বিরোধিতা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গোটা বিষয়টিকে এই লোকসভার সাংসদের ব্যক্তিগত মন্তব্য বলে দায় ঝেরে ফেলতে চেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল। সাংবাদিকদের অনেকেই তাকে বয়কট করার কথা ঘোষণা করেছে। আবার অনেকেই তার মন্তব্যের সমালোচনা করলেও বয়কট করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তার লোকসভা কেন্দ্র কৃষ্ণনগরে বেশ কিছু সাংবাদিক প্রতিবাদ মিছিল পর্যন্ত বের করে। রাজ্যজুড়ে চারিদিকে যখন এরকম তীব্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে তখন আশ্চর্যজনকভাবে নীরব মহুয়া মৈত্র। অথচ উচ্চশিক্ষিতা এই রাজনীতিবিদের মুখে এরকম অবমাননাকর মন্তব্য সত্যিই মানা যায় না। তার রাজনীতির যাত্রাপথটা বেশ আকর্ষণীয়। আমরা বরং এবার একটু সেই দিকেই দৃষ্টিপাত করি।

images 18 2
DNA India

রাজনীতির শুরুতে মহুয়া মৈত্র –

আমেরিকা থেকে অর্থনীতি ও অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করা মহুয়া মৈত্র ছিলেন পৃথিবী বিখ্যাত ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক জেপি মরগ্যানের ভাইস-প্রেসিডেন্ট। তিনি আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় একজন দক্ষ ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তার এই মেধা দেশের মানুষের কাজে লাগানোর ইচ্ছা নিয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগদেন। কংগ্রেসের যোগ দিয়েই খুব দ্রুত রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। রাহুল তাকে “আম আদমি কা সিপাহি” কর্মসূচি দেখভাল করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরের নজরে পড়ে যান। যদিও দেশে কংগ্রেসের অবস্থা খারাপ হলে ২০১০ সালে তিনি এ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন।

তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বেশ কিছুদিন দলের প্রচার ও ডিজিটাল কর্মসূচি দেখভালের দায়িত্ব সামলেছিলেন। তার প্রতিভা ও কর্মদক্ষতার জোরে খুব দ্রুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন প্রিয় পাত্রী হয়ে ওঠেন। এরপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নদিয়ার করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের সময় তাকে নদীয়ার কৃষ্ণনগর লোকসভার প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে তৃণমূল। তার এই নির্বাচনী লড়াই খুব একটা সহজ ছিল না। প্রথমত তাপস পাল ছিলেন ওই লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ। সেইসঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় বিজেপির বেশ ভালই প্রতিপত্তি ছিল কৃষ্ণনগরে। যদিও সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে তিনি নির্বাচনে সাফল্য লাভ করেন।

images 19 2
Mint

এখনকার মহুয়া মৈত্র –

লোকসভা নির্বাচনে জিতে সাংসদ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে প্রথমে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় সভাপতি এবং পরে নদীয়া জেলার তৃণমূল সভাপতি ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে তাকে দলের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র করে তৃণমূল। একাধিক দায়িত্ব পাওয়ার ফলে দলের মধ্যে তার প্রভাব প্রতিপত্তি অনেকটাই বেড়ে যায়।

এর কিছুদিন পরেই তিনি আসানসোলের সংসদ এবং কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ করেন বাবুল সুপ্রিয় তাকে অপমান করেছে। এই নিয়ে তিনি আইনি নোটিশ পাঠান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। যদিও পরবর্তীকালে বিষয়টি মিটমাট হয়ে যায়। এরইমধ্যে নদীয়া জেলার বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতারা তার বিরুদ্ধে উদ্ধতপূর্ণ আচরণের অভিযোগ তোলে। যদিও এই বিষয়টিতে খুব একটা গুরুত্ব দেননি তিনি। এরপরেই আসে “দু’পয়সার সাংবাদিক” বিতর্কটি।

images 20 3
ThePrint

অতীতেও মহুয়া মৈত্রকে নানা সময়ে উত্তেজিত হয়ে পরতে দেখা গিয়েছে। তবে ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত সচেতন বলে সুনাম ছিল তার। সেই তিনি কীভাবে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে পরিচিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এরকম অবমাননাকর মন্তব্য করলেন তা বোঝা যাচ্ছে না। তবে তার ওই মন্তব্যের থেকেও আরো আপত্তিজনক হলো মন্তব্য পরবর্তী তার আচরণ। এরকম উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ কোনো সচেতন মানুষেরই করা উচিত নয়।

কানাঘুষো শোনা যায় দলীয় নেতৃত্বের প্রতি অসন্তুষ্ট এই তৃণমূল সাংসদ দলত্যাগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তিনি নতুন কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ না দিয়ে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসাবে থেকে যাবেন। তবে এই সম্ভাবনার পুরোটাই জল্পনার স্তরে আছে। তিনি দল ত্যাগ করবেন কিনা তা নিয়ে যতই জল্পনা থাক এই উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ এবং দু’পয়সার সাংবাদিক মন্তব্যটি তার রাজনৈতিক জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা সেটাই দেখার। কারণ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ খুব একটা সহ্য করে না। এই ইস্যু নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কেবলমাত্র তাকেই নয় তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও সরব হয়ে উঠেছে। এমনও হতে পারে তার আচরণে বিরক্ত তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব এই সাংসদকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি কি করেন সেটাই দেখার।

NO COMMENTS