বিজ্ঞান যতই প্রমাণ করতে উদগ্রীব হোক যে ভূত বলে কিচ্ছু নেই, তবুও খুব কম মানুষই আছেন যারা ভূতের গল্পের আকর্ষণ থেকে মোহ মুক্ত। ভূতের গল্পের প্রতি পাঠকের চাহিদা অস্বীকার করার দুঃসাহস কোন লেখক এর নেই । তাই বারবার নানা মোড়কে নানা লেখনীতে আমাদের বইয়ের তাকে স্থান করে নেয় দেশ-বিদেশের ভূতের গল্পের বই। আগামীকাল ভূত চতুর্দশী_ বাঙালির হ্যালোউইন। তার আগে দেখে নেওয়া যাক বর্তমান সময়ের পাঠকদের মন কেড়ে নেওয়া কয়েকটি সেরা অলৌকিক গল্পের বইয়ের নাম।
খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ

লেখকঃ অভীক সরকার
প্রকাশকঃ পত্রভারতী
একটি অলৌকিক উপন্যাস এবং আরেকটি গল্পের সংকলন হচ্ছে এই বইটি।মূলত দুটি রচনাই তন্ত্র ভিত্তিক।
উপন্যাসটির নাম কালিয়া মাসান। উপন্যাসটিতে লেখক বর্তমান এবং ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধনের সৃষ্টি করেছেন। মূলত সাঁওতাল বিদ্রোহের উপর ভিত্তি করে এই উপন্যাসটি রচিত।
লর্ড ক্লাইভের নির্দেশে বিদ্রোহী সাঁওতালদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। এরপর সাঁওতালরা সেই মৃত ব্যক্তিদের লাশকে পুড়িয়ে এক ধরনের বিষাক্ত মন্ত্রপূতঃ ছাইয়ের সৃষ্টি করে যার নাম কালিয়া মাসান। এই কালিয়া মাসান-কে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি আবর্তিত হয়।
এবার আসা যাক গল্পটির কথা। গল্পটির নাম খোঁড়া ভৈরবীর মাঠ। ভৈরবীর মাঠে তিনশো বছর পূর্বে তৈরি এক কালী মন্দির কে নিয়ে রহস্য জমাট বাঁধে।গ্রামের ঘটতে থাকে একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা
এটাই হলো গল্পটির মূল বিষয়বস্তু।
এই বইয়ের দুটি রচনায পাঠকের মনে যথেষ্ট আতঙ্ক তৈরি করতে সক্ষম।
চন্দ্রহাস

লেখকঃসৌরভ চক্রবর্তী
প্রকাশকঃ দ্য কাফে টেবিল ও বাতিঘর (বাংলাদেশ)
চন্দ্রহাস বইটির প্রধান বিষয়বস্তু পারিবারিক নরবলির ইতিহাস। মহারাজ প্রতাপ নারায়ন আজ থেকে দেড়শো বছর আগে এমন কিছু কার্য সম্পাদন করেছিলেন যার খেসারত মেটাতে কলকাতায়,এত বছর পরেও সেই নরবলির রীতি পালন করছে এক পরিবার। রাজকীয় পূজোর আচার, যৌনাচার ইত্যাদি নানা বিষয়ে পরিপূর্ণ চন্দ্রহাসের প্রত্যেকটি চরিত্র। সৌরভ চক্রবর্তীর উপন্যাসটি নিশ্চিতভাবেই এক রুদ্ধশ্বাস কাহিনীর বাস্তবায়ন।
তারানাথ তান্ত্রিক

লেখক: তারাদাস বন্দোপাধ্যায়।
প্রকাশক: মিত্র ও ঘোষ।
তারানাথ তান্ত্রিক_ মধ্য কলকাতার অধিবাসী, জ্যোতিষ চর্চা করেই দিন গুজরান করেন। অবসরে তিনি তাঁর দীর্ঘ জীবনের তন্ত্র সাধনা লব্ধ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয় গল্পের কথকদের সাথে।সাধারণ জীবনযাপনে ত্যাগ করে সন্ন্যাসী জীবনে পদার্পণ করার পরেই তিনি দীর্ঘ জীবনে বারবার সাক্ষী হয় একাধিক অপ্রাকৃতিক ঘটনার, সেই ঘটনাবলীর সংকলন তারানাথ তান্ত্রিক বইটি।তারানাথ তান্ত্রিকের সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানতে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের অলাতচক্র বইটি পড়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
কালী গুণীন ও ছয় রহস্য

লেখক ঃ সৌমিক দে
প্রকাশক ঃ বিভা পাবলিকেশন
কালিপদ মুখার্জী রায়দিঘি বসবাসকারী এক ব্রাহ্মণ গুণিন। তাকে ঘিরে সংঘটিত ছয়টি অলৌকিক রহস্য গল্প নিয়ে লেখা হয়েছে কালীগুণীন এবং ছয় রহস্য। প্রথম গল্পটি হল কানাওয়ালার ফাঁদ, গল্পটি হারান বাগদী নামক এক ব্যক্তির কানাওলা নামক এক সত্তায় পরিণত হওয়া নিয়ে। পরের ‘নেত্রপাণির বিভীষিকা’ গল্পটি দুই মৃত তান্ত্রিকের প্রেত রূপে ফিরে আসা নিয়ে রচিত। পরের গল্প “চন্দ্রপিশাচ রহস্য” যা এক বিলুপ্ত জিনিস প্রাপ্তির সাথে জড়িত। এগুলো ছাড়াও আর বাকি গল্পগুলি হল রক্তগন্ধা রহস্য, আপাই ও হোগলামারির নরঘাতক। তারানাথ তান্ত্রিকের পরে এটি বাংলা সাহিত্য জগতে নিসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ অকাল্ট হরর থ্রিলার।
এবং ইনকুইজিশন

লেখকঃ অভীক সরকার
প্রকাশকঃ দ্য ক্যাফে টেবিল
সামান্য কিছু দিনে বাংলা সাহিত্য জগতে আলোড়ন তৈরি করেছে যে বইটি সেটি হল অভীক সরকারের এবং ইনকুইজিশন। বইটি চারটে তন্ত্র ভিত্তিক গল্পের সমাহার রচিত। শোধ, রক্তফলক, ভোগ, ইনকুইজিশন এই চারটি গল্পের মাধ্যমে তন্ত্রশাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে অসাধারণ মানের ফিকশন রচনা করেছেন লেখক। তন্ত্রের ইতিহাস, বজ্রযানের একাধিক দেবদেবীর যেমন ছিন্নমস্তা তিব্বতি দেবী মাতঙ্গী, পিশাচী ডামরী র বর্ণনা, পিশাচ সিদ্ধ তান্ত্রিক ঠগীদের শবসাধনা- এজাতীয় ব্যাখ্যায় পরিপূর্ণ প্রত্যেকটি গল্প। বাংলা সাহিত্যে এই বই নিশ্চিত ভাবে একটি মাইলস্টোন।
এই তালিকায় যদি আপনি আপনার পছন্দের কোনো বই যোগ করতে চান অবশ্যই জানান আমাদের কমেন্ট করে.ভূতকে আমরা খুব একটা পছন্দ না করলেও ভূতের ভয়টাকে আমরা বেজায় ভালোবাসি, সবাইকে জানাই অগ্রিম ভূত চতুর্দশী-র ভৌতিক শুভেচ্ছা।
আরও পড়ুনঃ