ছাতিম গাছের গুনাগুন :
কার্তিকের সন্ধ্যায় আবেশে আচ্ছন্ন চারিধার হাঁটতে হাঁটতে সেই ছাতিম তলা । এই সন্ধ্যার সময় কি অপরূপ গন্ধ যেন নেশা লাগে । এর ফুল বেশ ওপরের দিকে থাকে ।থোকা থোকা হালকা ঘিয়ে রঙের ।
পাতাগুলো ছাতার মতো তাই তো এইগাছ ছাতিম নামে পরিচিত ।

ছাতিমের উৎপত্তি ও নামকরণ—–
ছাতিম গাছ (ইংরেজি: Blackboard Tree) “অ্যাপোসাইনেসি” বর্গের অন্তর্ভুক্ত একটি উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম Alstonia scholaris, Echites scholaris L. Mant., Pala scholaris L. Roberty)। এর আদি নিবাস ভারতীয় উপমহাদেশ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই গাছটি বাংলাদেশসহভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র জন্মে। আর্দ্র, কর্দমাক্ত, জলসিক্ত স্থানে ছাতিম বেশি জন্মে। ছাতিম মূলাবর্তে সাতটি পাতা এক সঙ্গে থাকে বলে সংস্কৃত ভাষায় একে ‘সপ্তপর্ণ’ বা ‘সপ্তপর্ণা’ বলা হয় ।

ছাতিম গাছ আর কি কি নামে পরিচিত?
ছাতিম গাছ স্থান ভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত, তার মধ্যে অন্যতম হলো সপ্তপর্ণী। এছাড়াও সপ্ত ছত্র বা সপ্তপর্ণা নামেও এটি পরিচিত। এ ধরনের নামকরণ এর মূল কারণ এই গাছটি মুখ্যত দেখলে দেখা যায় এর সাতটি পাতা বা পল্লব একসাথে জোড়া থাকে।
এই গাছে কি কি রোগ সারে?
রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ছাতিম গাছের তুলনা অদ্বিতীয়। যক্ষা, কুষ্ঠ বা ক্যান্সার থেকে শুরু করে পেটের ব্যথা, হৃদপিন্ডের রোগ, উদারাময়, এবং মানসিক সতেজতা আনতে এই গাছের ব্যবহার প্রচুর ।এমনকি যদি দাঁতের পোকা হয়ে থাকে ইবাদতে ছিদ্র হয়ে যায় সে ক্ষেত্রেও এই গাছের আঠা ব্যবহার করা সুফল জনক।সর্দি বসে গেলে কিংবা ঘাটের ব্যথার ক্ষেত্রেও এই গাছের ব্যবহার খুবই উপকারী। এছাড়াও এই গাছের ফুল শ্বাসকষ্ট নির্মূলের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়, মুখের ব্রোনো এবং দাঁতের পাইরিয়া নিরাময় ও এই গাছের আঠা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ছাতিমের গুনাবলী–
ছাতিম গাছের বাকল বা ছাল শুকিয়ে নিয়ে ওষুধের কাজে ব্যবহার করা হয়।দীর্ঘস্থায়ী অতিসার এবং আমাশয়ে এটি অত্যন্ত উপকরী।জ্বর ধীরে ধীরে নামায় বলে ম্যালেরিয়াতেও উপকারী। অন্যান্য ওষুধে জ্বর নামার সময় খুব ঘাম এবং পরে যে দুর্বলতা হয়, ছাতিমে তা হয় না।চর্মরোগেও ছাতিম ফলপ্রদ।স্নায়ুর শক্তিসূত্রে অসাড়তা আনে বলে রক্তের চাপ কমাতে ছাতিম উপকারী।কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে যে অ্যাণ্টিবায়োটিক কোন গুণ বা শারীরিক ক্রিয়ার সাহায্য করার কোন শক্তি ছাতিমের নেই।
অন্যান্য ব্যবহার—–
ছাতিমের কাঠ দিয়ে খুব সাধারণ মানের আসবাবপত্র, প্যাকিং কেস, চায়ের পেটি, পেনসিল এবং দেশলাইযের কাঠি তৈরী হয়।
পুরাকালে ছাতিমের কাঠ দিয়ে শিশুদের লেখার জন্য তক্তা বানান হত। মনে করা হয় সেই কারণেই বৈজ্ঞানিক নামে “এলস্টোনিআ”-এর পর “স্কলারিস” কথাটি যোগ করা হয়েছে।ছাতিমের হালকা কাঠ দিয়ে শ্রীলংকায় কফিন বানানো হয়।এছাড়া এটি দিয়ে চামচ, কর্ক ইত্যাদি বানানো হয়।সবমিলিয়ে ছাতিম কিন্তু অনন্য প্রজাতির এক গাছ ।এটি যেমন আমাদের মনকে প্রভাবিত করে তেমনি অনেক ঔষধি মূল্য ও রয়েছে ।