নিদ্রা সর্বসন্তাপহারিণী”
–কথাটা জানা আছে নিশ্চয়ইই সবার। কথায় বলে, ঘুম হচ্ছে সব রোগের মোক্ষম ওষুধ, যে কোনও রোগের রুগী যদি ঠিকঠাক বিশ্রাম আর ঘুমের মধ্যে থাকতে পারে, তার রোগ নিরাময় হয় খুব শীঘ্রই। পৃথিবীর সমস্ত ডাক্তারই ঘুমকে শরীরের জন্য সবচাইতে জরুরি একটা কাজ বলে নিদান দিয়েছেন। এমনকি কম কম ঘুম হলে নানান জটিল রোগ বাসা বাঁধে মানুষের শরীরে। অবসাদ, স্থূলতা, রক্তচাপ, স্নায়ুর সমস্যা ইত্যাদি সমস্ত কম ঘুমের ফলে তৈরি হওয়া সম্ভব।
অথচ এই তথ্যটা বোধহয় অনেকেরই তেমনভাবে জানা নেই যে একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন। ভাবতে অবাক লাগছে, তাই তো? অবাক হওয়া খুবই স্বাভাবিক কারণ যে ঘুম আমাদের জন্য এতটা জরুরি, তা কখনও কখনও মৃত্যুর মুখেও যে ঠেলে দিতে পারে এমনটা কল্পনাও করা শক্ত। কিন্তু এটাই সত্যি। শারীরিক নানান কারণে ঘুমের মধ্যেও মানুষের মৃত্যু হওয়া সম্ভব। একটু জেনে নেওয়া যাক সেই কারণগুলি-
ঘুম যা ঘটায়
স্লিপ অ্যাপনিয়া— এই রোগটি ভীষণ বিচিত্র। অনেক মানুষ যারা ঘুমের মধ্যে শব্দ করে নাক ডাকেন, তাঁদের প্রায় নব্বই শতাংশ মানুষ স্লিপ অ্যাপনিয়ার শিকার। এক বিশেষ ধরনের স্লিপ অ্যাপনিয়া মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে কারণ সেই রোগে নাক ডাকার সময়ে মানুষের গলার মাসল কখনও কখনও নিঃশ্বাস নেবার সহজ পথ বন্ধ করে দেয়। এটা চলতে চলতে আচমকা অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে হার্ট কিংবা মস্তিষ্কে অ্যাটাক হওয়া সম্ভব। এই ক্ষেত্রে মৃত্যু অনিবার্য।

https://www.webmd.com/sleep-disorders/sleep-apnea/sleep-apnea
কার্বন মনোক্সাইডের বিষক্রিয়া— এই বিশেষ গ্যাস যা কিনা ফুস্ফুস আর মস্তিস্কের জন্য ভীষণভাবে ক্ষতিকারক, তা ঘুমের মধ্যে অনেকক্ষণ ধরে শরীরের ভেতরে গিয়ে পৌঁছলে মৃত্যু হবার সম্ভাবনা প্রবল। গাড়ীর এসি চালিয়ে অনেকটা সময়ের জন্য গাড়ীর সমস্ত জানলা দরজা লক করে ঘুমোলে কিংবা খুব চাপা, ছোট, আলোবাতাসহীন ঘরে ঘুমিয়ে পড়লে এই ঘটনা ঘটতে পারে খুব সহজেই।
ডুবে যাবার মতন অবস্থা— এটা পড়লে প্রাথমিকভাবে মনে হবে ঘুমের মধ্যে মানুষ ডুবে যেতে পারে নাকি আবার? তা তো অসম্ভব। কিন্তু বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখিয়েছেন এই ঘটনাও সম্ভব যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এই ঘটনা ঘটে যখন কেউ কিছুক্ষণ জলের মধ্যে থাকে এবং দুতিন ফোঁটা জল তাঁর শ্বাসনালীতে রয়ে যায়। তা গলা ও ফুস্ফুসের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে তৈরি করে নিঃশ্বাসের সমস্যা। শেষমেশ ঘুমের মধ্যে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে, মৃত্যু হয় মানুষের তৎক্ষণাৎ। ইংরেজিতে একেই বলে dry drowning।
হার্ট অ্যাটাক— প্রতি বছর নাকি বিপুল সংখ্যক মানুষ ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক হয়েই ঢলে পড়েন মৃত্যুর মুখে। ঘুমনোর সময় রক্তজালিকাগুলো পর্যাপ্ত রক্ত চলাচল করতে না পারলে ক্রমশ চাপ পড়ে হার্টের উপরেই।ফলে আচমকা রক্ত সরবরাহ বন্ধ এবং তারপর মৃত্যু হয় ঘুমের মধ্যেই। মানুষ শেষ মুহূর্ত অব্দি কোনওভাবেই উপলব্ধি করতে পারে না এই ভবিতব্য।

এন্ট্রোভাইরাস D68— Enterovirus D68 এর ফলেও ঘুমের মধ্যে মানুষ মারা যেতে পারে। এর সম্ভাবনা তেমন নেই, তবুও একেবারে বাদ দেওয়া যায় না একে। ১৯৬২ সালে এঁর আবিষ্কার হলেও ২০১৪ সাল থেকেই এর সংক্রমণ অতিরিক্ত মাত্রায় চোখে পড়তে থাকে। সবচাইতে সমস্যা হল এর প্রায় কোনও সিমটম নেই অল্প নিঃশ্বাসের সমস্যা ছাড়া।পেশির দুর্বলতা এবং স্পাইনাল কর্ডের ইনফেকশন থেকে এই ভাইরাস শরীরকে ঝাঁঝরা করে দেয়। ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষকে মেরে ফেলার জন্য শরীরে এই ধরনের ভাইরাসের উপস্থিতিই যথেষ্ট।https://banglakhabor.in/2020/11/17/%e0%a6%ae%e0%a6%a8%e0%a6%83%e0%a6%b8%e0%a6%82%e0%a6%af%e0%a7%8b%e0%a6%97-%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a7%9c%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%9a-%e0%a6%ae%e0%a7%8b/

ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ঘুম জিনিসটাও তেমন নিরীহ নয় যতটা মনে হয়। ঘুমের মধ্যেও অনেক রহস্য রয়েছে, যা মানুষের জীবনে যবনিকা পর্যন্ত টেনে দিতে পারে। এর হাত থেকে মুক্তি পাবার সরাসরি কোনও উপায় না থাকলেও শরীরের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন করলে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে এই সম্ভাবনা অনেকটাই নির্মূল করা সম্ভব । আপনারা কি বলেন?!