যে কোন মশলাদায়ক রান্না রসুনবিহীন বেস্বাদ।  মাংস রান্না থেকে ভিন্ন স্বাদের ভাত রান্নার রসুনের ব্যবহার আমরা করেই থাকি এমনকি সস তৈরি করতেও এর অবদান ভুললে হবে না। অর্থাৎ বলার অবকাশ থাকে না যে রসুনের ছাড়া হেসেল অসম্পূর্ণ। কিন্তু রান্নায় ব্যবহার ছাড়া রসুনের অন্যন্য উপকারিতা সম্পর্কে কি কোন ধারনা রয়েছে ? রসুনের উপকারিতার জুড়ি মেলা ভাড়। এটি একটি ভেষজ উপাদান যার মধ্যে ঔষোধীয় গুনাগুন আছে | প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রসুনের ব্যবহার চলে এসেছে |  

রসুন
ছবি সৌজন্য Ekushey Television

রসুনের মধ্যে Allicina নামের এক কম্পাউন্ড থাকে যা বিভিন্ন রোগ সারাতে সক্ষম। প্রাচীন ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় তখনকার যুগে রসুন কিন্তু শুধু মাত্র বিভিন্ন অসুখ সারানোর জন্যই ব্যবহার হতো | মিশরীয়‚ ব্যাবিলনীয়‚ গ্রিক‚ রোমান এবং চৈনিক সভ্যতায় ওষুধ হিসেবে রসুনের ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে |রসুনের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম‚ কপার‚ পটাশিয়াম‚ ফসফরাস‚ আয়রন এবং ভিটামিন B1,ভিটামিন  B6, ভিটামিন C ,.সেলেনিউম ,ফাইবার জাতীয় পদার্থ। তাই এটি যে শরীরের জন্য কতটা উপকারী তা প্রমাণিত।

রসুনের উপকারিতা

images?q=tbn%3AANd9GcTpZTUJcKlbsuzECf75qqntRY9UW8WIAfA6OA&usqp=CAU
ছবি সৌজন্য Somoy-TV

১) কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক এর দরুন সারা পৃথিবীতে  মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ| উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হৃদ রোগের মুখ্য কারণ | কিন্তু  সমীক্ষায় দেখা গেছে রোজ চার কোয়া করে রসুন খেলে রক্তচাপ সম্পুর্ন নিয়ন্ত্রণে থাকে।  

২) রসুনে  অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ‘সেল ড্যামেজ এবং ‘এজিং‘ রোধ করে | এর ফলে অ্যালঝাইমারস ডিসিজ এবং ডিমেনশিয়ার মতো রোগের হাত থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব|

৩) নিয়মিত রসুন খেলে শরীরে Bad Cholesterol কমে যায় এবং Good Cholesterol এর বৃদ্ধি হয় | ফলে কোলেস্ট্রলের মাত্রার সমতা বজায় থাকে।

৪) রসুনের  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি  জাতীয় উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই   নিউরোডিজেনারেটিভ অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কার হ্রাস ঘটায় । এমনকি অ্যালজাইমার মতো রোগ দূরে থাকে।

৫) রসুন  বদ-হজম এবং নানাবিধ পেটের রোগের নিষ্পত্তি ঘটায়।

৬) শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনের কারণে ত্বকের যে পরিমান ক্ষতি হয় তার হাত থেকে রক্ষা করে রসুন। সেই সঙ্গে কোলাজিনের মাত্রা স্বাভাবিক রেখে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিন যদি থেঁতো করা রসুনের রস  চুলের গোঁড়ায় লাগালে চুল মজবুত হয়।  

 ৭) প্রতিদিন রসুন খেলে পাকস্থলী এবং কলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। তাই ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে করতে  খাবারের তালিকায় রসুনকে জায়গা দিন।  

৮) রসুনে অবস্থিত অ্যান্টি ভাইরাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল জাতীয় পদার্থ যা  দ্রুত মানব শরীরের স্কিন ইনফেকশন সারিয়ে তোলে ।

৯) মেয়েদের স্তন ক‍্যনসার অনেকটা জল ভাতের ন‍্যয় হয়ে গেছে।রসুন এই স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থেকে মানব শরীরকে প্রতিরোধ করে।

১০ ) রসুন যৌন ক্ষমতাও বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে । যৌনমিলনের অসাবধানতাবশত কারনে যে রোগের জন্ম হয় তা হল ট্রিকোমোনিয়াসিস এই ভয়ঙ্কর রোগ থেকে বাচায় রসুন।

১ ) বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার যেমন কোলন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, গলব্লাডার ক্যান্সার,রেক্টাল ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্ত রাখতে রসুনের অবদান অনস্বীকার্য।

১২)  রসুন দেহের অভ্যন্তরীণে অবস্থিত ক্ষতিসাধনকারী ব্যাকটেরিয়া এবং কৃমি ধ্বংস করে  অরুচি দূর করে। রসুন মুখের স্বাদ ফিরিয়ছ আনার মোক্ষম ঔষূধ।

১৩) যাদের চোখে বয়স বাড়লে বা প্রাপ্ত বয়ষ্ক হয়ে ওঠার আগে ছানি পড়ে সেই ছানি পড়ার সমস্যা থেকে বাঁচার একমাএ উপায় রসুনের কোয়া

১৪) দাদ, খোস-পাঁচড়া, ব্রণ এই ধরণের চর্মরোগের হাত থেকে রক্ষা করে রসুন। অনেকের ত্বক বুড়িয়ে যায়, কম বয়সে বলিরেখা দেখা দেয় তারহাত থেকে রক্ষা পেতে রসুনকে আপন করুন।  

১৫) নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করলে দেহের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি প্রপাটিজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে যার  ফলে হাড়ের ক্ষয় রোধ হয়।  ফলে স্বাভাবিকভাবেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে। হাড় মজবুত থাকে।

এতগুন লুকিয়ে থাকে একরত্তি রসুনের কোয়ায়। আপনাদের কি জানা ছিল একটা ছোট্ট রসুনে লুকিয়ে আছে বিষদ গুনাগুন। তাই রোজকার বিভিন্ন অভ্যাসের পাশাপাশি রসুনকে সেই অভ্যাসের অন্তর্গত করে নিন, দেখবেন শরীরের সকল রোগ ব্যাধি থেকে নিমেষেই মুক্তি পাচ্ছেন।