গতকাল প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ সাময়িকভাবে কৃষি আইনকে স্থগিত রাখার রায় দেন। সেই সঙ্গে তারা কৃষি আইন পর্যালোচনা করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এরপরই নানা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে কৃষকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিতে পারে বলে। অনেকেই মনে করছেন এই কমিটির ওপর নির্ভর করছে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হবে, নাকি মোদি সরকারের তৈরি আইনই বলবত থাকবে।
ঘটনা হল সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা কৃষকদের আন্দোলনের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করছে না। সেইসঙ্গে প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি ওই বেঞ্চের বাকি দুই সদস্য এএস বোপান্না ও ভি রামসুব্রামানিয়ান জানিয়ে দিয়েছেন বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সত্য ও সঠিক ধারণা পাওয়ার জন্যই তারা এই কমিটি গঠন করছে। অর্থাৎ এই কমিটি সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিদের eye-opener এর কাজ করবে। এর মানে বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্টের সাহায্যেই বিচারপতিরা কৃষি আইন সম্বন্ধে ধারণা গড়ে তুলবেন। এবার বিশেষজ্ঞ কমিটি যদি কৃষি আইনের পক্ষে রিপোর্ট দেয় সেক্ষেত্রে বিচারপতিরাও সম্ভবত আইনের ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেবেন পরবর্তী পর্যায়ে!
ঠিক এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই সম্ভবত আন্দোলনকারী কৃষক সংগঠনগুলি আন্দোলন প্রত্যাহার না করে তা চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। কৃষক নেতারা পরিষ্কার জানিয়েছেন তারা বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করার দাবিতে অনড়। একমাত্র কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলে তবেই তারা সেই আলোচনা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃষকদের পক্ষ থেকে।
এখানেই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে কৃষকরা মুখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করছেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলনের ফলাফল কি হবে?আদৌ কোনো সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসা সম্ভব? কারণ সর্বোচ্চ আদালতের পক্ষ থেকে কৃষকদের আন্দোলন ও প্রতিবাদের অধিকার যেমন স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে তেমনি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিবাদ আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হওয়াটাই উচিত। আন্দোলনকারী কৃষকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন এবং এখনো পর্যন্ত মোটের ওপর এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ চেহারাতেই আছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশকে ব্যবহার করে আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ করা হলে স্বাভাবিক ভাবেই তা হিংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তখন আন্দোলনের এই হিংসাত্মক চেহারাকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
অর্থাৎ, এটুকু পরিষ্কার সুপ্রিম কোর্টের গতকালের রায় এখনই গোটা পরিস্থিতিতে খুব একটা কিছু বদল আনছে না। এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে হলে আরও বেশ কিছুদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।