কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র বলেছেন সাংবাদিকরা হলেন “দু’পয়সার”। তাঁরা মোদি সরকারের তোষামোদ করে চলেন, এমনকি ঘুষও খেয়ে থাকেন, এমনটাই ধারণা তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মহুয়া মৈত্রের। শুধু তাই নয়, তাঁর মন্তব্যের জেরে যখন রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়, সমালোচনায় সামিল হন শাসক দলেরই একাংশ, তখনও নিজের বক্তব্যে অবিচল থেকেছেন তিনি। বরং আরো বেশি করে ব্যঙ্গাত্মক আক্রমণ করে গেছেন সংবাদমাধ্যমকে।
বস্তুত, সাংবাদিক বা সংবাদমাধ্যমের কাজ আদতে যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, এদিনের উত্তরপ্রদেশের ঘটনা হয়তো তা মহুয়া মৈত্রকে উপলব্ধি করাতে পারবে, অন্তত তেমনটাই আশা সাংবাদিকদের।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র বলা হয় ভারতীয় শাসনব্যবস্থাকে, আর সেই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হল সংবাদমাধ্যম। কিন্তু ২০২০ সালে দাঁড়িয়ে ভারতীয় গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ ঠিক কতটা স্বাধীন? আরো একবার সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে উত্তর প্রদেশের সাংবাদিক খুনের ঘটনা।
গত ১ ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশের বলরামপুরে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা। এক সাংবাদিক এবং তাঁর এক বন্ধুকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে এক দল দুষ্কৃতী। অপরাধ? স্থানীয় প্রসাশনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন তিনি। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সাংবাদিকতার ক্ষমতা প্রয়োগ করে। বাড়িতে ঢুকে ওই দুই ব্যক্তির গায়ে জীবন্ত অবস্থায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, এমনটাই জানা গেছে স্থানীয় পুলিশ সূত্রের খবরে। এই ঘটনা যোগী আদিত্যনাথ পরিচালিত উত্তর প্রদেশের সরকারকে যে আরো একবার একাধিক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তা বলাই বাহুল্য।

যা শুনে আমাদের আরো শিউরে উঠতে হয় তা হল সাংবাদিকের সঙ্গে এই নৃশংস আচরণের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে স্যানিটাইজারকে! করোনাকালে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিকল্প নেই। প্রথম থেকেই চিকিৎসকরা সুপারিশ করে এসেছেন অ্যালকোহল মিশ্রিত স্যানিটাইজার। হ্যান্ড স্যানিটাইজারে থাকে অ্যালকোহল। আর অ্যালকোহল মারাত্মক দাহ্য। কিন্তু তার যে এমন পাশবিক ব্যবহার হতে পারে, তা হয়তো সকলেরই ধারণার বাইরে।

জানা গেছে মৃত সাংবাদিকদের নাম রাকেশ সিং নির্ভীক। তিনি লক্ষ্ণৌয়ের এক সংবাদপত্রের অফিসে কাজ করতেন। সংবাদপত্রের নাম ‘রাষ্ট্রীয় স্বরূপ’। তাঁর বন্ধুর নাম পিন্টু সাহু। দুষ্কৃতীরা এদিন নির্ভীকের বাড়িতে ঢুকে তাঁদের গায়ে অ্যালকোহল মিশ্রিত স্যানিটাইজার ঢেলে দেয়। তারপর আগুন লাগিয়ে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয় তাঁদের। অভিযুক্তদের নাম আক্রম, ললিত মিশ্র, এবং রিঙ্কু মিশ্র। তাঁদের প্রত্যেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রের খবরে।

শাসকের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন বলে মরতে হয়েছে নির্ভীককে। কিন্তু তাঁর বন্ধু? তাঁর অপরাধ কী ছিল? প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে শুধুমাত্র ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকাই ছিল তাঁর অপরাধ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পিন্টু সাহুর। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে প্রাণ যায় নির্ভীকেরও। মৃত্যুর আগে ডাক্তারদের তিনি জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রামের প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি লেখালেখি করছিলেন।

বস্তুত সাংবাদিকের কাজ, অর্থাৎ সমাজের সত্যি সামনে আনার কাজ যে আদতে কতটা ভয়ঙ্কর বলরামপুরের ঘটনা আরো একবার প্রমাণ করল সেই কথাই।