আবারও এক কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকারের পতন ঘটল। এবারের ঘটনাস্থল কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পুদুচেরি। গত কয়েক বছরে বেশ কিছু কংগ্রেস শাসিত রাজ্য সরকারের পতন ঘটে মাঝপথে। মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটকে যেমন মাঝপথে সরকার ফেলে দিয়েছিল বিজেপি, তেমনি গোয়া, মনিপুরের মতো রাজ্যে বৃহত্তম দল হলেও সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয় শতাব্দী প্রাচীন জাতীয় কংগ্রেস। গত কয়েকদিন ধরে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল পুদুচেরিতে যেভাবে একের পর এক কংগ্রেস বিধায়ক দল ছাড়তে শুরু করেছেন তাতে এখানকার সরকারের পতন ঘটতে পারে। সেই আশঙ্কা সত্যি হল আজ।

পদুচেরির কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়নস্বামীর বিরুদ্ধে দলের অভ্যন্তরে ক্রমশ ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। অনেকের অভিযোগ তিনি দলের অভিজ্ঞ নেতাদের কথা না শুনে নিজের মতো সরকার পরিচালনা করছেন। সেই সঙ্গে বিজেপির পক্ষ থেকেও চেষ্টা করা হয় শাসক জোটের একের পর এক বিধায়ককে নিজেদের দলে টেনে নেওয়ার বিষয়ে। গত জানুয়ারি মাস থেকেই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন শাসক জোটের একের পর এক বিধায়কের দল ছাড়ার হিড়িক পড়ে যায়। অনেকেই বিদায় পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপিতে সামিল হলেও, কেউ কেউ ইস্তফা না দিয়েই বিজেপিতে যোগ দেন।

,আস্থা
পুদুচেরি বিধানসভা

পুদুচেরি বিধানসভাত সপ্তাহেই পুদুচেরি সফরে গিয়েছিলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তিনি সেখানে গিয়ে জনসভা করার পাশাপাশি মৎস্যজীবি সম্প্রদায়ের মানুষজনের সঙ্গে দেখা করেন। যদিও রাহুল ওই সফরে সরকারের স্থায়ীত্ব নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। রাজনৈতিক মহলে এরপরই গুঞ্জন শুরু হয় সরকার যে টিকিয়ে রাখা যাবে না তা একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। তাই পুদুচেরি সরকারের স্থায়িত্বের বিষয়ে কথা না বলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন তারা।

প্রসঙ্গত পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলির পাশাপাশি আগামী এপ্রিল মাস নাগাদ পুদুচেরির বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। ভোটমুখী একটি রাজ্যের সরকার এইভাবে পড়ে যাওয়ার ঘটনা যথেষ্ট বিরল। অনেকেই মনে করেছিলেন যেহেতু সামনে বিধানসভা নির্বাচন তাই মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণস্বামী পাস করতে না পারলে বিধানসভা ভেঙে দিয়ে সোজা নির্বাচনে চলে যাওয়ার কথা ঘোষণা করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তিনি তদারকি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থেকে যেতেন। যদিও এই সমস্ত জল্পনাকে উড়িয়ে দিয়ে আজ বিধানসভায় নারায়ণস্বামী রাজনৈতিক শহীদ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন। অভিযোগ করেন ষড়যন্ত্র করে কেন্দ্র তার সরকারকে ফেলে দিল। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে শাসক পক্ষের বিধায়করা বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে বেরিয়ে যান।

মুখ্যমন্ত্রী সহ শাসকের বিধায়করা ওয়াক আউট করার পরেই পরিষ্কার হয়ে যায় পুদুচেরি সরকার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের ব্যর্থ হয়েছে।প্রসঙ্গত আজ বিধানসভায় সরকারি পক্ষে ১২ জন বিধায়ক থাকলেও বিরোধীদের দিকে ছিল ১৪ জন বিধায়ক। স্পিকার এরপর তার রুল জারি করে জানিয়ে দেন বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পতন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।

পুদুচেরির কংগ্রেস সরকারের পতনের পর কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে দিকে ফেরার একবার আঙ্গুল উঠছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও কংগ্রেসের নিচুতলার সদস্যরা অভিযোগ তুলেছেন সর্বোচ্চ নেতৃত্তের ব্যর্থতার ফলে একের পর এক জয়লাভ করা রাজ্যগুলিতেও সরকার ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে দল। এর ফলে দলীয় কর্মীরা ক্রমশ হতোদ্যম হয়ে পড়তে পারেন বলে তাদের আশঙ্কা। সেইসঙ্গে কর্মী-সমর্থকদের একাংশের অভিযোগ দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সরকার ধরে রাখার বিষয়ে উঠে পড়ে লাগছেন না বলেই বিধায়করা অবলীলাক্রমে দলত্যাগ করতে পারছে।