পুষ্টিগুণে ভরপুর বাঁধাকপি, যা পাতাকপি নামে ও পরিচিত তা আমাদের বাংলায় বেশ প্রচলিত । আপনি কি জানেন এই বাঁধাকপি উপকারিতা ? শীতকালের বহু গুণসম্পন্ন এই সবজি শুধু তরকারি হিসেবে নয়, জুস হিসেবেও খাওয়া যায়। এতে আছে ভিটামিন-এ, বি১, বি২, বি৬, ই, সি, কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, আয়োডিন, পটাশিয়াম, সালফারসহ আরও নানা ধরনের প্রয়োজনীয় উপাদান।

আমাদের দেশে শুধুমাত্র সবুজ বাঁধাকপি পাওয়া গেলেও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এর কয়েকটি ধরন দেখতে পাওয়া যায়। যেমন লাল, সাদা, গাঢ় সবুজ, হালকা সবুজ, বেগুনী ইত্যাদি রঙের বাঁধাকপি। বাঁধাকপি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি।

image 3 1
Photo source : ebaka.in

ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, প্রাচীন গ্রিক দেশে একাধিক রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগানো হত বাঁধাকপির রসকে। বিশেষত কনস্টিপেশনের মতো সমস্যা কমাতে গ্রিক চিকিৎসকেরা এই সবজির উপরই মূলত ভরসা করতেন। একই রকমের চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চলতেন মিশরীয় মানুষরাও। তারাও শরীরে টক্সিনের পরিমাণ কমাতে প্রায় প্রতিদিনই বাঁধাকপি খেতেন।

আধুনিক চিকিৎসায় এই সবুজ গোলাকার সবজিটির প্রবেশ ঘটে ইংরেজদের হাত ধরে। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশরাই সারা বিশ্বে বাঁধাকপির জয়গান গেয়ে বেড়িয়েছে। পুষ্টিগুণে ঠাসা এই সবজিটি খেলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। রক্তে সুগারের মাত্রাকে বেঁধে রেখে ডায়াবেটিস রোগীদের সুস্থ থাকার পথকেও প্রশস্ত করে।

বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ :

পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে রয়েছে – খাদ্যশক্তি- ২৫ কিলোক্যালরি শর্করা- ৫.৮ গ্রাম চিনি- ৩.২ গ্রাম খাদ্যআঁশ- ২.৫ গ্রাম চর্বি- ০.১ গ্রাম আমিষ- ১.২৮ গ্রাম থায়ামিন- ০.৬৬১ মিলিগ্রাম রিবোফ্লেভিন- ০.০৪০ মিলিগ্রাম নিয়াসিন- ০.২৩৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি৬- ০.১২৪ মিলিগ্রাম প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.২১২ মিলিগ্রাম ফোলেট- ৪৩ আইইউ ম্যাংগানিজ- ০.১৬ মিলিগ্রাম ফসফরাস- ২৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম- ১৭০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম- ১৮ মিলিগ্রাম জিংক- ০.১৮ মিলিগ্রাম ফ্লুরাইড- ১ আইইউ। ভিটামিন সি- ৩৬.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে- ৭৬ আইইউ ক্যালসিয়াম- ৪০ মিলিগ্রাম আয়রন- ০.৪৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম- ১২ মিলিগ্রাম।

বিজ্ঞানীদের মতে, বাঁধাকপি পাকস্থলীতে গিয়ে যখন হজম হতে থাকে, তখন এগুলো থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধী রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরিত হয়।এমনকি, ফ্রান্সিস ক্রিক ইন্সটিটিউটের এই গবেষকরা বলছেন- বাঁধাকপি, ব্রোকোলি বা কেইল শাকের মত বেশ কিছু সবজি বাউয়েল বা মলাশয়ের ক্যান্সার ঠেকাতে পারে।তাহলে জেনে নিই নিয়মিত বাঁধাকপি খাওয়ার উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে যেসব রোগ প্রতিরোধ করা যায় –

125811cabbage
Photo source : kelerkontho

১)রোগ প্রতিরোধক :

বাঁধাকপি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত বাঁধাকপি খান তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন-সি ও মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

২)আলসার নিরাময় :

বাঁধাকপি আলসার নিরাময়ে উপকারী। পাকস্থলীর আলসার ও পেপটিক আলসার প্রতিরোধে বাঁধাকপি বিশেষভাবে সহায়ক। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাঁধাকপির রস আলসারের জন্য সবচেয়ে উপকারী প্রাকৃতিক ওষুধ।

badhakopi 1 20181208165001
Photo source : jagonews ২৪

৩)ওজন কমাতে :

বাঁধাকপিতে আছে টারটারিক অ্যাসিড। চিনি ও শর্করা রূপান্তর হয়ে শরীরে যে চর্বি জমে, টারটারিক অ্যাসিড এই চর্বি জমতে বাধা দেয়। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বাঁধাকপি রাখুন।বাঁধাকপিতে খুবই সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও সম্পৃক্ত চর্বি রয়েছে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ রয়েছে। যাঁরা ওজন কমাতে চান তাঁরা তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখুন। বিশেষ করে বাঁধাকপির সালাদ। সালাদে প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি থাকলে অতিরিক্ত ক্যালোরি বাড়ে না বললেই চলে। তাই ওজন কমাতে চাইলে নিয়মিত খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণে বাঁধাকপি রাখুন।

৪)হাড়ের ব্যথা দূর করতে :

বাঁধাকপির রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণ। যা হাড় ও হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা প্রশমনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।রক্তস্বল্পতা দূর করেবাঁধাকপিতে আছে প্রচুর আয়রন। তাই যাদের রক্তস্বল্পতা আছে, বাঁধাকপি তার জন্য অবশ্য খাদ্য।

৪) ত্বকের সুরক্ষা :

বাঁধাকপি সব ধরনের ত্বকের সুরক্ষা দেয়। একদিকে যেমন ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, তেমনি ত্বকের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।তারুণ্য ধরে রাখেবাঁধাকপিতে থাকা ভিটামিনগুলো শরীরের রক্তনালী সবল ও শক্তিশালী রাখে। এ জন্য মুখে বয়সের ছাপ পড়ে খুব ধীরে।

৫) আয়রনের উৎসঃ

পাতাকপিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রন এই পাতাকপি থেকেই পাওয়া যায়। খাদ্য তালিকায় পরিমাণমত আয়রন না থাকলে শরীরে রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি ও মস্তিষ্কের সমস্যা হয়।

৬) কিডনি সমস্যা :

কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে বাধাকপি একটি অপরিহার্য সবজি। যারা কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ডায়ালাইসিস করিয়ে থাকেন, তাদের জন্য কাঁচা বাধাকপি খাওয়া উত্তম। এমনকি, হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকে যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। বাঁধাকপির রস নিয়মিত পান করলে পেপটিক আলসার দূর হয়। এছাড়া বাঁধাকপি বুক জ্বালা-পোড়া, পেট ফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দূর করে।

বাঁধাকপি
Photo source : priyo

৭) ত্বকের জন্য :

উজ্জ্বল চক চকে চুলের জন্য বাঁধাকপি অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটি সবজি। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন আছে যা চুল পরা সমস্যা রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

৮) টক্সিন দূর করে :

বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে সালফার রয়েছে। যা ডিটক্সিফিকেশন এনজাইমের এর মাধ্যমে লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে। পাতাকপিতে ৬৭ প্রকারের গ্লুকোসিনলেট রয়েছে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

৯) মাথা যন্ত্রণা কমায় :

বাঁধাকপি মাথা যন্ত্রণা কমায়।বাঁধাকপির পাতাগুলি ছিঁড়ে নিয়ে একটা কাপড়ে রেখে কপালে বেঁধে দিন। কিছু সময় পরই দেখবেন মাথা যন্ত্রণা একেবারে গায়েব হয়ে গেছে। আর যদি এমনটা করতে না চান, তাহলে আরেকটি ঘরোয়া পদ্ধতি আছে, যা এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। মোটামুটি পরিমাণ মতো বাঁধাকপি নিয়ে ২৫-৫০ এম এল জুস বানিয়ে পান করুন। এই ঘরোয়া ওষুধটি ক্রনিক মাথা যন্ত্রণা কমাতে দারুন কাজে আসে।

১০)চুলের জন্য বাধাকপি-

উজ্জ্বল চক চকে চুলের জন্য বাঁধাকপি অপ্রতিদ্বন্দ্বী একটি সবজি। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমান ভিটামিন আছে যা চুল পরা সমস্যা রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

: