নিজস্ব সংবাদদাতা- রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করা নিয়ে যুক্তি সাজানোর চেষ্টা করল মায়ানমার সেনাবাহিনী। সে দেশের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মিং-আং-হালং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছেন, “সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির সঠিক তদন্ত করার জন্যই রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে বাধ্য হয়েছে সেনাবাহিনী”।এর পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং দেশের অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটানোই মূল লক্ষ্য।

২০২০ সালের নভেম্বরে মায়ানমারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে প্রতিপক্ষদের সম্পূর্ণ ধরাশায়ী করে প্রবাদপ্রতিম জননেত্রী আং-সান-সু-কি’র নেতৃত্বাধীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টি। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ মিলিয়ে ৪৭৬ টি আসনের মধ্যে ৩৯৬ টিতেই তারা জয়ী হয়। অন্যদিকে দেশের সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট ইউনিয়ন সলিডিটারি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি মাত্র ৩৩ টি আসনে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। এই ফলাফল দেখার পরই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে।

নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ নিয়ে পরিকল্পিতভাবেই মায়ানমার সেনাবাহিনী সরকারকে ক্রমশ চাপ দিতে শুরু করে। গত কয়েকদিন ধরেই তারা ইঙ্গিত দিচ্ছিল প্রয়োজনে দেশের ক্ষমতা নিজেদের দখলে নিয়ে আসবে। সোমবার ভোরবেলায় ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আসে সেনারা। দেশের রাজধানী সহ প্রতিটি প্রদেশেই শাসক দলের রাজনৈতিক নেতাদের তারা আটক করে। এর পাশাপাশি স্টেট কাউন্সিলর সু-কি ও দেশের রাষ্ট্রপতি সহ সমস্ত শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীদের গোপন জায়গায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছে।

সোমবারে সেনা অভ্যুত্থানের ঠিক চার দিন আগে সে দেশের জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোট কারচুপির যাবতীয় সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়ে জানিয়ে দেয় এই নিয়ে কোনো উপযুক্ত প্রমাণ জমা দেওয়া হয়নি। এদিকে ক্ষমতা দখলের পর আজ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দেশের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ঘটেছিল। তার উপযুক্ত তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তাই দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে তারা বাধ্য হয়েছে ক্ষমতা দখল করতে।

দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে দেশের ক্ষমতা দখল করে থাকার পর ২০১১ সালে সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অসামরিক প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সেনাবাহিনী। তবে এক দশক কাটতে না কাটতেই মায়ানমারের ক্ষমতার শীর্ষে ফের সেনা কর্তারা। ইতিমধ্যেই ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির সমর্থকরা রাস্তায় বেরিয়ে এসে শান্তিপূর্ণভাবে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরোধিতা করতে শুরু করেছে।