ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের নাম শোনেনি এমন মানুষ নিতান্তই বিরল, আর আপনি যদি ভোজনবিলাসী হন আর ফাস্ট ফুড খেতে ভালোবাসেন তবে তো কোনো কথা নেই। কেচাপ, মেয়োনিজ বা ভিনেগারে সহযোগে এই সুস্বাদু পদটির জুড়ি মেলা ভার। সরল ভাষায় আমরা যে আলু ভাজার সাথে পরিচিত তারই একটি সুগঠিত রূপ ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে না চললে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের সেই স্বাদ কখনোই পাওয়া যাবে না। নামে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হলেও শুনলে অবাক হবেন এই খাদ্য বস্তুটার সাথে ফ্রান্সের কোনো যোগাযোগ নেই, তবে এমন নামের কারণ।

ফ্রান্স বিভিন্ন দশকে বিশ্বকে গরম এয়ার বেলুন, সেলাই মেশিন এবং বিকিনি সহ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি দিয়ে থাকলেও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইও যে তাদের সৃষ্টি সেই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যে। ইতিহাসবিদদের মতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের উৎপত্তিস্থল বেলজিয়াম। তাদের মতে আনুমানিক ১৬০০ শতাব্দীতে সেখানে প্রথম ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্ম। যদিও তার নাম তখনও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই হয়ে ওঠেনি।

ইউরোপে আলুর আগমন ও প্রথম ফ্রেঞ্চ ফ্রাই

১৬০০ শতাব্দীর মধ্যকালে কলম্বিয়া থেকে স্পেনীয় মানুষদের মাধম্যেই ইউরোপে প্রথম আলুর আগমন ঘটে। তবে ১৮০০ শতাব্দীর গোড়ায় এসে এটি নিত্য খাদ্যে পরিণত হয়। স্থানীয় বেলজিয়ামবাসীর মত অনুযায়ী সেই ১৬০০ শতাব্দীর সময়কালেই মিউজ উপতক্যায় নদীর ধারে বসবাসরত দারিদ্র গ্রামবাসীরা নদী থেকে ছোট ছোট মাছ ধরে ভাজা করে খেতেন। কিন্তু শীতকালে নদীগুলি হিমশীতল হয়ে পড়ায় তাদের মাছ ধরায় সমস্যা দেখা দেয়। আর তক্ষুনি বিকল্প খাদ্য হিসেবে তারা আলুর সন্ধান পায়, আর মাছের মতোই এগুলোকেও ভাজা করে খেতে থাকে আর এভাবেই প্রথম ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্ম হয়। যদিও তৎকালীন গ্রামবাসীরা এটিকে কি নামে ডাকতো তা জানা যায়নি।

তবে সৃষ্টির পর এর নামকরণে প্রধান ভূমিকা রাখেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমকালীন আমেরিকান সৈনিকরা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে বেলজিয়াম সৈনিকদের সাথে আমেরিকান সৈনিকদের পরিচয় করানো হয়। আর সেই সময়ই বেলজিয়ামদের দেওয়া সেই আলু ভাজাই আমেরিকান সৈন্য বাহিনীর মন জিতে নেয়। বেলজিয়াম সৈন্যবাহিনীর অফিসিয়াল ভাষা ফ্রেঞ্চ হওয়ায় সুস্বাদু এই খাবারটির নাম তারাই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই রেখে দেয়। আর সেই সময় থেকেই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই নামেই পদটির উত্তরণ হয়।

তবে সে বেলজিয়াম বা ফ্রান্স যাই হোক না কেন সেই বিবাদে না গিয়ে আপামর পৃথিবীবাসী এই সুস্বাদু পদে দারুন মজে গেছে।

এই ফ্রেঞ্চ ফ্রাই সুস্বাদু বানানোর জন্য শুরু থেকেই আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট বিষয় মাথায় হবে। প্রথমত বালি আলুতে স্টার্চের পরিমান কম থাকায় এটিই ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের জন্য সেরা। আলু কাটার পর সেটিকে জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর সামান্য উষ্ণ গরম জলে এটিকে দিয়ে কিছুক্ষণ পর তুলে নিতে হবে। তারপর প্রথমে কম আঁচের তেলে কিছুক্ষণ ভেজে নেওয়ার পর তুলে নিয়ে তারপর বেশি আঁচে কিছুক্ষণ ভাজলেই তৈরি সুস্বাদু ফ্রেঞ্চ ফ্রাই।