নিজস্ব সংবাদদাতা: বাংলাদেশের প্রথম সারির নামী সংবাদপত্র হল ‘প্রথম আলো’। সেই সংবাদপত্রেরই এক সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম গত সোমবার বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দফতরে গিয়েছিলেন খবর সংগ্রহের জন্য। অভিযোগ, সেই সময়ে তাঁকে একটি ঘরে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। তারপরই অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান রোজিনা। পরে তাঁকে সরকারি গোপনীয় ভঙ্গের দায়ে গ্রেফতার করে পুলিশ। মঙ্গলবার রোজিনাকে আদালতে পেশ করে পাঁচ দিনের হেফাজত চাওয়া হয়। এভাবে এক মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ঢাকা। এমনকি আন্তর্জাতিক মহল থেকেও নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়েছে গোটা বাংলাদেশে।

সূত্রের খবর, যে ধারায় রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাতে তাঁর সর্বোচ্চ ১৪ বছর জেল এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। অভিযোগ, রোজিনা তাঁর মোবাইল দিয়ে সরকারি কিছু ডকুমেন্টের ছবি তুলছিলেন। এমনকি কিছু কাগজপত্র নিয়েও বেরিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে দেশের মানুষের কাছে সঠিক খবর পৌঁছে দিতে এমন ঝুঁকি অনেক সাংবাদিকই নেন। নইলে প্রকৃত সত্য কখনওই সামনে আসত না। আর অপ্রিয় সেই সত্যি কথা সামনে আসে বলেই অতীতে বার বার দেখা গিয়েছে যে, সরকারের কোপে পড়েছেন সেই সাংবাদিকরা। বাংলাদেশের ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয় বলে অনেকের মত।

রোজিনার সতীর্থ সাংবাদিক থেকে শুরু করে অনেকেরই বক্তব্য, কোভিড মোকাবিলায় সরকারি কেনাবেচায় বেলাগাম দুর্নীতি ফাঁস হওয়ার আশঙ্কাতেই এভাবে তাঁর ওপর অত্যাচার শুরু হয়েছে। করোনা-কিটের ঘাটতি থেকে শুরু করে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনিয়ম নিয়ে রোজিনার লেখা প্রতিবেদনও পুনঃপ্রকাশ করতে শুরু করেছে ‘প্রথম আলো’। এদিকে, এভাবে একজন মহিলা সাংবাদিককে হেনস্থা করায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যাক মানুষ। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন বাংলাদেশের সাংবাদিকরা। তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদ্বজ্জন ও শিল্প সংস্কৃতি জগতের মানুষও।

যেমন, অভিনেত্রী জয়া এহসান। তিনি লিখেছেন, “রোজিনা সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন, সিঁধ কাটতে নয়। দেখতে পেলাম হেনস্তার শিকার হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যাচ্ছেন। এই আমাদের উদ্ধত আচরণ! এই আমাদের সভ্যতা! রোজিনার গলার ওপর চেপে বসা আঙুলগুলো গভীর অর্থময় এক প্রতীকের মতো লাগছে। মনে হচ্ছে, আঙুলগুলো কোনো ব্যক্তির গলায় নয়, বরং বাংলাদেশের বাক্‌ স্বাধীনতার কণ্ঠনালিতে চেপে বসেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই এমন অশুভ একটি ঘটনা আমাদের সকলকে প্রত্যক্ষ করতে হলো? রোজিনাকে তাঁর পরিবারের কাছে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।” উল্লেখ্য, জয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রথিতযশা গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ এবং চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তাফা সরয়ার ফারুকিও রোজিনার সমর্থনে আওয়াজ তুলেছেন।