কথায় বলে না ব্যবসা করা মুখের কথা নয়, কথাটার কিছুটা হলেও সত্যি বটে। যুগ যুগ ধরে মানুষ ব্যবসার বিষয়ে ভুরি ভুরি জ্ঞান দিয়ে এসেছে। কেউ বলেছে ব্যবসা করা খুবই রিক্স এর কাজ, আবার কারো মুখেই শোনা গেছে ব্যবসায় যদি একবার লাভের মুখ দেখা যায় তবে আর ফিরে তাকানোর কোনো প্রয়োজন পড়ে না। কেউ কেউ ব্যবসার থেকে চাকরি করাকে বেশি সাবধানের কাজ বলে মনে করেন। আবার কেউ কেউ নিজেই নিজের মালিক হওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবসায় নামেন। সেকাল হোক বা একাল, ব্যবসা নিয়ে মানুষের মধ্যে যেরকম বিতর্কের শেষ নেই ঠিক তেমনি উত্তেজনার কোন কমতি নেই। তবে হ্যাঁ সব কিছুরই যেরকম টিপস রয়েছে ঠিক তেমনই ব্যবসারও কিছু টিপস রয়েছে। নতুন ব্যবসায় নেমেছেন ভাবছেন কিংবা ভাবছেন ব্যবসা করবেন। তাহলেই টিপসগুলি আপনার অত্যন্ত কাজে আসবে। তাহলে চলুন দেখে নিন ব্যবসা করার কিছু টিপস।

১. কি নিয়ে ব্যবসা করবেন?

ব্যবসা
Taisha . Associate

সব বিষয়ের মতোই ব্যবসার ক্ষেত্রেও নানা মুনির নানা মত। আগেকার দিনে ব্যবসা করাটা বড্ড অসাবধানতার একটি লক্ষণ বলে বোঝানো হতো, কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে সেটি বলা যথেষ্ট খারাপ বলে বিবেচিত করা হয়। তখনকার সময়েও ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যবসার যা মূল্য ছিল, বর্তমান সময়েও তাই রয়েছে। তবে ক্রেতারা তখনকার সময়ের থেকে এখনকার সময়ে যথেষ্ট পারদর্শী হয়ে উঠেছেন। তাই সবার আগে ব্যবসা করার জন্য আপনার কোন বিষয়ে পারদর্শিতা বা আগ্রহ রয়েছে সেটি নির্বাচন করতে হবে। ভাবতেই পারেন যে ব্যবসার সঙ্গে আগ্রহের মিল টা কোথায় ? আপনি যে জিনিস নিয়ে ব্যবসা করবেন বা মার্কেটে নামবেন তার বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান আপনাকে রাখতে হবে। সেই জিনিসটি যদি আপনার আগ্রহের মধ্যে বা শখের মধ্যে হয় তাহলে সেই জিনিস নিয়ে আপনার ধারনাটি যথেষ্ট উন্নত প্রকৃতির হবে। আপনার শখের জিনিস বলেই তার প্রতি আপনার একঘেয়েমিও আসবেনা ও সাথে সাথেই আপনি সেই জিনিসটার প্রতি আরও দক্ষ হয়ে উঠবেন। যেমন আপনার ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের প্রতি আগ্রহ, আপনি নতুন নতুন গ্যাজেটসের ব্যাপারে মোটামুটি অনেক কিছুই জানেন।তাহলে বলা যেতে পারে আপনি যদি গ্যাজেটস নিয়ে ব্যবসা করেন তাহলে সেই জিনিসটির সম্পর্কে আপনার আগ্রহ আরও বাড়তে থাকবে এবং এতে আপনার ব্যবসারই লাভ হবে। তাই সবার আগে এটা ভাবনা চিন্তা করুন যে আপনার কোন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি। সেই আগ্রহের বিষয় থেকে আপনি আপনার ব্যবসা করার ধারণাটি খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।

২. ব্যবসা করার মূল মন্ত্র কি?

Adobe Stock

“ব্যবসার মূল মন্ত্র কি?” প্রত্যেক ব্যক্তির এই জিজ্ঞাস্য থেকে থাকে সে ব্যবসা করার আসল মন্ত্রটি কি। ব্যবসার কোন মন্ত্র হয়না সব জিনিসই যেরকম টেকনিক থাকে ঠিক তেমনি ব্যবসাতেও টেকনিক রয়েছে। ব্যবসার প্রধান একটি টেকনিক হলো ব্যবসা দাঁড়ানোর আগেই ব্যক্তিগত লাভ এর চাহিদা না রাখা। যে কোনো বড় ব্যবসায়ীর মুখে এই কথাটা শুনে থাকবেন, যে কোন ব্যবসা দাঁড় করাতে যুগ কেটে যায়। তাই অন্তত ব্যবসা দাঁড়ানোর আগে থেকেই ব্যক্তিগত লাভের সমীকরণ রাখাটা কিছুটা হলেও ক্ষতিকর। তবে এটা ভাববেন না যে ব্যবসায় লাভ নেই। প্রথম কয়েক বছরে চেষ্টা করবেন ব্যবসাকে সঠিকভাবে দাঁড় করানোর। দাঁড় করানোর জন্য যেটি সব থেকে জরুরি তা হল ইনভেস্টমেন্ট। তাই ব্যবসায় নিজের ব্যক্তিগত লাভের চিন্তা না করে ইনভেস্টমেন্ট এর উপর বেশি নজর দেবেন। আপনি যদি সঠিকভাবে নিজের ব্যবসায় ইনভেস্ট করতে পারেন তবে কিছু বছর পর আপনার ব্যবসাই আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত লাভের খাতাটা দেখিয়ে দেবে। তাই সব সময় মনে রাখবেন যে ব্যবসা দাঁড়ানোর আগেই ব্যক্তিগত লাভের চিন্তা করা কিন্তু আপনার ব্যবসার জন্য যথেষ্ট ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. ব্যবসা ও সম্পর্ক কখনো গুলিয়ে ফেলবেন না

file 20180612 112602 1n6vzvh.jpg?ixlib=rb 1.1
The Conversation . com

ব্যবসা ও সম্পর্ক এই দুটি জিনিস কখনো গুলিয়ে ফেলবেন না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে আপনার দিনের পর দিনের কাজের পরিশ্রমের সুবিধা শুধুমাত্র সম্পর্কের জেরে অন্য কেউ ভোগ করছে। ভোগ করা অব্দি ঠিক আছে কিন্তু তার অপব্যবহার কিছুতেই করতে দেবেন না। ব্যবসা ও সম্পর্কের মধ্যে সব সময় একটা ব্যবধান রাখার চেষ্টা করবেন। যেরকম ব্যবসার মধ্যে সম্পর্ক এলে সমস্যার সৃষ্টি হবে ঠিক তেমনি সম্পর্কের মধ্যেও ব্যবসার এলে সম্পর্কের অবনতি হবে। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন ব্যবসা ও সম্পর্ক দুটো আলাদাভাবে সমাধান করার।

৪. বর্তমানে ব্যবসায় অনলাইন এর ভূমিকা

facebook business page
Hootsuit Blog

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যুগের মতো করে ভাবনা চিন্তা করতে হবে। বর্তমান যুগে ব্যবসা করার সবথেকে সহজ ও কার্যকর উপায় হলো অনলাইনে ব্যবসা করা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা এখন দূরে থেকেও দূরের কাস্টমারকে নিজের আয়ত্তে আনতে পারি। বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যেমন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এইসব সাইটের এর মাধ্যমে এখন আপনি বাড়িতে বসেই নিজের ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট গুলোর মাধ্যমে ব্যবসা করা বর্তমান যুগে একটু হলেও সহজ হয়েছে। তবে আপনি অনলাইনে ব্যবসা করুন বা বাইরে দোকান দিন দুটোতেই আপনাকে আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। তবে অনলাইনে ব্যবসা করার অনেক ভালো দিক এর মধ্যে একটি হলো যে আপনি খুব সহজেই আপনার কাজের নমুনা একই সাথে হাজার হাজার মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারেন। অনলাইনে ব্যবসা করলে আপনার টাইম অনেকটা বাঁচে। এছাড়াও আরো অনেক কিছু ভালো দিক রয়েছে। তবে বলেনা সবকিছুর ভাল ও খারাপ উভয় দিকই রয়েছে ঠিক তেমনি অনলাইনে ব্যবসা করারও কিছু খারাপ দিক রয়েছে। অনলাইনে আপনাকে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে কেননা কোন ক্রেতা আসলে আপনার জিনিসের প্রতি ইন্টারেস্টেড হয়ে এসেছেন তিনি সত্যিই আপনার জিনিসটিকে কিনবেন সেটার বিষয়ে আপনাকে যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। বর্তমানে অনলাইনে বিক্রি-বাট্টায় অনেক প্রতারণার খবর পাওয়া যাচ্ছে আপনাকে সেই বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অনলাইনে ব্যবসা করার আরো একটি খারাপ দিক হলো কাস্টমারের সাথে বিশ্বাস বা ভরসার জায়গা তৈরি করা। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সামনাসামনি আপনি কাস্টমারদের সাথে যে বিশ্বাস বা ভরসার জায়গা গড়ে তুলতে পারেন সেটি অনলাইনে একটু হলেও কষ্ট সাধ্য। এই কিছু সমস্যা থাকা সত্বেও বর্তমান কালে ব্যবসায় অনলাইনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

৫. কোন কোন ব্যবসায় আপনি সহজেই লাভের মুখ দেখতে পারবেন

93e4f6a4c3f4d018abeebbc35efde0ed
Jewellery . Com

ব্যবসায় নামার আগেই আপনাকে মার্কেট সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। প্রথমত আপনাকে দেখতে হবে মার্কেটে কোন জিনিস টির চাহিদা বেশি। আপনার যদি ব্যবসা ছোট আকারের হয় তবে লাভের মুখ দেখা খুব কষ্টকর হবে না। এখন অনায়াসে দেখতে পাওয়া যায় যে গৃহবধূ বা স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা অনলাইনে ছোটখাটো ব্যবসার সাথে জড়িত। যেমন- জামা কাপড়ের ব্যবসা, শাড়ির ব্যবসা, বিভিন্ন রকম হাতের কাজের এর ব্যবসা, জুয়েলারির ব্যবসা প্রভৃতি। এইসব ব্যবসা ছোটখাটো হলেও খুবই লাভজনক হতে পারে। শুধু আপনাকে আপনার প্রোডাক্টের কোয়ালিটি মেইনটেইন করে চলতে হবে। এইসব ব্যবসায় প্রথমদিকে পুঁজির বিনিয়োগও কম লাগলেও, ব্যবসা বড় হলে পুঁজি ও লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে। তবে যে কোনো ব্যবসাই একটু বড় করতে সময় লাগে। যদি আপনার ব্যবসা করার কল্পনা বা ধারণা অন্যদের থেকে আলাদা হয় তবে সেই ব্যবসা দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কিছুটা হলেও বেশি। তবে সেই ব্যবসায় আপনার পরিশ্রমের পরিমাণ কিন্তু অনেকটাই দিতে হয়। প্রত্যেকটি ব্যবসাই দাঁড় করাতে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়। সেই দিকের কথা মাথায় রেখে সব সময় এগোবেন আর এটা মনে রাখবেন যে পরিশ্রমের কোন বিকল্প হয় না।

ব্যবসার বিষয়ে কিছু খুঁটিনাটি আলোচনা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। আশা করি এই আলোচনার দ্বারা আপনাদের কিছু সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। আপনাদের মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না এবং কোন জিনিস নিয়ে আপনার ব্যবসা করার আগ্রহ রয়েছে সেটিও জানাতে ভুলবেন না।