নিজস্ব সংবাদদাতা: জোড়াসাঁকোর বদলে বিশ্বভারতীকে রবি ঠাকুরের জন্মস্থান বলে এর আগে বেশ কয়েকবার উল্লেখ করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা, যা নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। এবার কবিগুরুর জন্মজয়ন্তীর তারিখও বদলে দিল মোদী সরকারের ক্যালেন্ডার! বিশ্বকবির জন্মস্থানকে ঘিরে এই অনভিপ্রেত বিতর্কের মাঝেই তাঁর জন্মজয়ন্তী নিয়েও নতুন করে গোল বাঁধিয়ে দিল মোদী সরকারের ক্যালেন্ডার।

কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত ডিজিটাল ক্যালেন্ডারে বলা হয়েছে, এ বছর রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হবে ২৩ বৈশাখ! আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়। ওই ক্যালেন্ডার আরও জানাচ্ছে, এবার চৈত্র সংক্রান্তির পরের দিন ‘মেসাদি’ নামে একটি দিবস উদযাপন করা হবে। ওই দিন আসলে তামিল নববর্ষ। কিন্তু সেদিন যে বাংলারও নববর্ষ, সেই তথ্যের কোনও উল্লেখই নেই কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যালেন্ডারে। বাংলার সংস্কৃতি চর্চায় কেন্দ্রের এহেন উদাসীন আচরণে আক্কেল গুড়ুম আম-বাঙালির।

গত মাসের গোড়ার দিকে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর ঘটা করে এই ডিজিটাল ক্যালেন্ডার এবং একটি ডায়েরি প্রকাশ করেন। কিন্তু তখন তা আমজনতার ব্যবহারের জন্য ছিল না। সরকারের তরফে জানানো হয়, দিন কয়েক পরে ওই অ্যাপ ডাউনলোড করা যাবে। সেই সুযোগ এখন পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অ্যাপটি যাতে দেশের অধিকাংশ নাগরিক মাতৃভাষায় দেখতে ও পড়তে পারেন, তার জন্য ইংরেজির পাশাপাশি আরও ১১টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে তথ্যগুলি।

সেই অ্যাপেও গোড়াতেই রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করতে ভোলেনি কেন্দ্র। ঠাঁই পেয়েছে কবিগুরুর লেখার কিছু অংশ। বাকি জায়গায় শুধুই নরেন্দ্র মোদীর নানা উদ্যোগ ও কর্মকাণ্ড সাজানো। মোদী কোন কোন দিনে কী কী প্রকল্প চালু করেছেন, তার উল্লেখ রাখা হয়েছে অ্যাপে। এর পাশাপাশি ক্যালেন্ডারের তারিখগুলি যেমন থাকছে, তেমনই রাখা হয়েছে ছুটির দিনও। সেখানেই বলা হয়েছে, এ বছর, অর্থাৎ আগামী মে মাসের সাত তারিখে পালিত হবে রবীন্দ্রজয়ন্তী। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ওই দিন ২৩ বৈশাখ। রাজ্যের মানুষ বাংলা ক্যালেন্ডারের দিনক্ষণ নিয়ে সবসময় মজে থাকে না। কিন্তু পয়লা বৈশাখ, পঁচিশে বৈশাখ কিংবা বাইশে শ্রাবণ- এই দিনগুলি নিয়ে কখনও দিকশূন্য হয়নি বাঙালি। অথচ কেন্দ্রীয় সরকার এই সব বিশেষ দিন নিয়ে কী করে এত উদাসীনতা ও অযত্নের পরিচয় দিল, তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না সাধারণ জনগণ।