নিজস্ব সংবাদদাতা: দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসাবেই পরিচিত। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে এই জেলার সবকটি বিধানসভা আসনই তৃণমূলের দখলে। এখানে দাঁত ফোটাতে পারেনি গেরুয়া শিবির। তাই অন্যান্য জেলার তুলনায় উপকূলীয় এই জেলাকে নিয়ে অনেকটাই স্বস্তিতে থাকতে পারত তৃণমূল। কিন্তু তা আর হল কই! সৌজন্যে পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। এবারের একুশের ভোট ময়দানে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট নামে নিজের দল গড়ে ময়দানে নেমেছন আব্বাস। আর তাতেই নাকি চিন্তায় পড়েছে তৃণমূল শিবির। এর পেছনে কারণটা কী?
আমফান দুর্নীতির পরই তৃণমূলের সবথেকে বড় চিন্তার জায়গা বোধহয় আব্বাস সিদ্দিকী। একুশের নির্বাচনের আগে আইএসএফ গড়েছেন পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। তাঁর লড়াই বিজেপির মত তৃণমূলের সঙ্গেও, সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। আর আত্মপ্রকাশেই রাজ্য রাজনীতিতে নজর কেড়েছেন ‘ভাইজান’ হিসাবে পরিচিত আব্বাস। ২৮ ফেব্রুয়ারি বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেডে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা বুঝিয়ে দিয়েছে তাঁর জনপ্রিয়তা। এহেন আব্বাস ভোট ঘোষণার আগেই ডায়মন্ড হারবারে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন, “তুমি বল দাদাগিরি দেখাবে, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জিরো করে দেব মনে রেখে দিও।”
এখানেই থামেননি আব্বাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বাংলার মুসলমানদের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগও করেছেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা। স্পষ্ট ভাষায় প্রশ্ন করেছেন, মুসলিম সমাজের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি এতই উন্নয়ন করে থাকেন, তাহলে এখনও মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়েনি কেন? কেন মাদ্রাসা বোর্ডের শিক্ষক নিয়োগ হয় না, কেন কাজ নেই মুসলমান যুবকদের হাতে? দক্ষিণবঙ্গে সংখ্যালঘু সমাজে কিন্তু এই ফুরফুরা শরীফ ও আব্বাস সিদ্দিকীর দারুণ প্রভাব।
এদিকে, আব্বাসের নতুন দল গঠন, বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোট- কোনটিকেই ভালভাবে নেয়নি তৃণমূল। যেই কারণে প্রতিটি পদক্ষেপেই আক্রমণ শানিয়েছে মমতা শিবির। বৃহস্পতিবার সাগরে জনসভা করতে গিয়ে তৃণমূলনেত্রী তোপ দেগে বলেছেন, নিজেদের স্বার্থে ভোট কাটতে টাকা দিয়ে দল বানিয়েছে বিজেপি। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজ্যের ২৭ থেকে ৩০ ভাগ মুসলিম ভোটারই নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে। গত এক দশক ধরে দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের অন্যতম মূল শক্তি ছিল মুসলিম ভোটার। এ বছর ‘ভাইজান’ হিসেবে জনপ্রিয় আব্বাস সিদ্দিকী নির্বাচন করায় মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের একটা বিরাট অংশই মমতার হাতছাড়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তৃণমূলের ভোটের নেপথ্যে মুসলিম তোষণনীতি রয়েছে এ অভিযোগ প্রথম থেকেই করে আসছে গেরুয়া শিবির। এখন আব্বাস সিদ্দিকী যদি সেই ভোটের মেরুকরণে বিপরীত হাওয়া তোলেন তবে ভোট ভাগাভাগিতে যে তৃণমূলের ‘কিছু কম পড়বে’ সেই আশাতেই ছক কষে নিয়েছেন পদ্ম নেতারা। আর তাই রাজ্যের দক্ষিণের এই জেলায় নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে বিজেপির কাছে আব্বাসের নতুন দল যেন রীতিমত আশীর্বাদ স্বরূপ।