আপনি যে কোনো রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের সমর্থকই হোন না কেন, ভারতীয় রাজনীতিতে ‘অমিত শাহ’ নামটা যে গুরুত্বের দিক থেকে প্রায় শীর্ষে অবস্থান করছে, তা স্বীকার করতেই হবে। ভারতের বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। অমিত অনিলচন্দ্র শাহ। কেন্দ্র সরকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরেই তাঁর স্থান। শুধু তাই নয়, অমিত শাহ গুজরাটের গান্ধীনগর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন গত বছরই। এছাড়া, ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী হলেন অমিত শাহ।

এ তো গেল তথ্যের কথা। কিন্তু যে অসীম সামর্থ্যের উপর ভরসা করে দেশের মানুষ ২০১৪ সাল থেকে পদ্মফুল চিহ্নে ভোট দিয়ে আসছেন, তা কি শুধুই নরেন্দ্র মোদীর জন্য? বলা বাহুল্য, নেপথ্যে বড় ভূমিকা আছে অমিত শাহেরও। চা বিক্রেতা থেকে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের ইতিহাস তো সকলের জানা, আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং অন্যতম স্তম্ভ অমিত শাহের উত্থানের কাহিনী।

গুজরাটের সাংসদ অমিত শাহ গত অক্টোবরেই পা দিলেন ৫৬ বছর বয়সে। ১৯৬৪-তে মুম্বাইতে জন্ম হলেও অমিত শাহের যৌবন কেটেছে গুজরাটেই। তিনি হলেন গুজরাটি হিন্দু বৈষ্ণব পরিবারের ছেলে। তাঁর বাবা অনলচন্দ্র শাহ ছিলেন সফল ব্যবসায়ী। আমেদাবাদের সিউ শাহ সায়েন্স কলেজ থেকে অমিত শাহ বায়োকেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করেন। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পরে প্রাথমিক ভাবে বাবার ব্যবসায়ে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস (RSS)-এর ছাত্র সংগঠন এবিভিপির (ABVP) সক্রিয় সদস্য হিসেবে কলেজ জীবন থেকেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন অমিত শাহ।

নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে অমিত শাহের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৮২ সালে আরএসএস রাজনীতির সূত্রেই। এবিভিপির সেই তরুণ ছাত্রনেতা ১৯৮৭ সালে নরেন্দ্র মোদীর এক বছর আগেই যোগ দেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। দশ বছরের মধ্যেই পার্টির অন্যতম নির্ভরযোগ্য নেতা হয়ে ওঠেন তিনি। বস্তুত নেতৃত্বের ক্ষমতা ছিল তাঁর স্বভাবসিদ্ধ। ১৯৯৭ সালে আমেদাবাদ ও সরখেজের কিছু অঞ্চলের এমএলএ নির্বাচিত হন অমিত শাহ। বিজেপির ছত্রছায়ায় সেটাই ছিল তাঁর প্রথম জয়।

সেই থেকে যে উত্থান শুরু হয়েছিল, তার ধারা আজও সমভাবে বহমান। রাজনীতিতে তাঁর কেরিয়ারের গ্রাফ ক্রমশই উর্দ্ধমুখী। ৯৭-এর পর থেকে একটানা দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার এমএলএ-র দায়িত্ব পালন করে এসেছেন অমিত শাহ। ক্রমে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে হয়ে ওঠেন গুজরাট রাজ্য সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কান্ডারী।

২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে দলের তরফে ভারতের অন্যতম জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্বলিত উত্তর প্রদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁর হাতে। সেবার ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছিল ৭৩টি আসন। এই সাফল্যের পরেই অমিত শাহকে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে বিজেপি নেতৃত্ব।

লোকসভা নির্বাচনের পর একে একে রাজ্য গুলিতেও সাফল্য আসতে থাকে বিজেপির ঘরে। তবে সাফল্যের নেপথ্যেই বরাবর থেকেছেন অমিত শাহ। আজ তিনি পৌঁছেছেন সাফল্যের শিখরে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি। বিজেপিতে একাধিক হেভিওয়েট নেতার আনাগোনা থাকলেও দেশব্যাপী প্রভাব বিস্তারকারী এই দলের অনেকটাই যে নির্ভর করছে অমিত শাহের উপর তা বলাই বাহুল্য।