গাছ প্রাণীকূলের জন্য কতটা অপরিহার্য সেটি বলার বা কাউকে জানানোর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। এই জীবকূলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অক্সিজেন একটি অপরিহার্য বস্তু। জীবকূলের অক্সিজেনের সামঞ্জস্য বজায় থাকে একমাত্র গাছ বা উদ্ভিদের দ্বারা। কিন্তু যুগের অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ গাছের অপরিহার্যতা দিন দিন ভুলতে বসেছে। সময়ের সাথে সাথে মানুষ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাথেই অবনতির পথও অনুসরণ করে চলেছে। কিন্তু আপনি যদি গাছকে কেবলমাত্র অক্সিজেনের জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন, তবে আপনার ধারনাটি সম্পুর্ন ভুল। বাইরে হওয়া গাছের বিভিন্ন রকমের উপকারিতা রয়েছে তা তো আমরা সবাই জানি কিন্তু বাড়িতে রাখা যায় যে গাছগুলি তাদেরও নানান উপকারিতা রয়েছে তা কি আপনি জানেন? তাহলে চলুন দেখে নেই কোন গাছ বাড়িতে রাখা সহজ ও তাদের কি কি উপকারিতা রয়েছে।
১. এয়ার প্ল্যান্টস
এয়ার প্ল্যান্টস খুবই ছোট প্রকৃতির উদ্ভিদ হয়। সাধারণত এই উদ্ভিদ বাড়িতে রাখা হয়। এই উদ্ভিদ গুলিও কিছুটা ক্যাকটাস এর মত দেখতে হয়। এয়ার প্ল্যান্টসের খুব বেশি দেখাশোনা করার প্রয়োজন পড়ে না। সপ্তাহের যেকোনো একদিন এই গাছকে জলে ভিজিয়ে রাখতে হয় অন্তত 10 মিনিটের জন্য আর তার সাথে সাথেই সূর্যের আলো যেই জায়গায় সবথেকে ভালো আসে অর্থাৎ জানালা, ব্যালকনি এই সমস্ত জায়গায় এটি রাখতে হয়।এয়ার প্ল্যান্টস বাড়িতে রাখলে বাড়ির ভেতরের যে বাতাস থাকে তাকে কিছুটা পরিমাণেও পরিশুদ্ধ করে তোলে। এয়ার প্ল্যান্টস সাধারণত একটি কাঁচের পাত্রে রাখলে ভালো থাকে।
২. লাক্কি বাম্বু প্ল্যান্টস
চীনা সংস্কৃতিতে বাম্বু প্ল্যান্টস সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। এই কারণেই চীনে বাড়িতে বাড়িতে বাম্বু প্ল্যান্টস দেখতে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র চীনেও নয় ইদানিং ভারতের মার্কেটেও বাম্বু প্ল্যান্টস এর চাহিদা বেড়েই চলেছে। বাম্বু প্ল্যান্টস যেখানে খুশি রাখা যেতে পারে, এই গাছের সবথেকে বড় সুবিধা হল এই গাছে মাটির প্রয়োজন পড়ে না। বাম্বু প্ল্যান্টস জলের উপরেই নির্ভরশীল। তাই এই গাছগুলির যত্ন করা খুবই সহজ প্রকৃতির হয়। তাহলে একবার বাড়িতে নিয়ে এসেই দেখুন লাক্কি বাম্বু প্ল্যান্টস।
৩. মানি প্ল্যান্টস
চীনা সংস্কৃতি মতে মানি প্ল্যান্টসও সুখ সমৃদ্ধি ও শান্তির প্রতীক। লোকমুখে শোনা যায় মানি প্ল্যান্টস বাড়িতে পজিটিভ এনার্জি ছড়ায়। মানি প্ল্যান্টসের যত্ন করা বা বাড়িতে রাখা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। সাধারণ সমস্ত গাছকে যেভাবে দেখাশুনা করতে হয়, মানি প্ল্যান্টসেরো ঠিক সেইভাবে দেখাশুনা করতে হয়। মানি প্ল্যান্টসের পাতাগুলি ঠিক পান পাতার আকৃতির মত হয়, চীনা মতে এই গাছ বাড়িতে রাখা খুবই উপকারী হয়।
৪. অ্যালোভেরা প্ল্যান্টস
আমরা সবাই জানি অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য কতটা উপকারী। কিন্তু অ্যালোভেরা শুধুমাত্র ত্বকের জন্যই নয় বাড়িতে রাখাও সমানতালে খুবই উপকারী। লোকমুখে শোনা যায় অ্যালোভেরা গাছ যত বড় হবে বা বাড়বে ততই বাড়ির সুখ-সমৃদ্ধি বাড়বে। সাধারণত একটি অ্যালোভেরা গাছ থেকে অনেক গুলি অ্যালোভেরা গাছ জন্ম নেয়। অ্যালোভেরা প্ল্যান্টস দেখাশোনা করা খুবই সহজ। সপ্তাহে একদিন এই গাছকে জল দিতে হয় ও সূর্যের আলোর দিকেই রাখতে হয়। অ্যালোভেরার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত ছিলাম কিন্তু গাছটি বাড়িতে রাখার উপকারিতা জানা ছিল না।
৫. তুলসী গাছ
পুরাণ থেকে তুলসী গাছের কাহিনী সর্বত্রই প্রচলিত। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তুলসী গাছকে পুজো করার রীতি রয়েছে। ভারতীয় পুরাণে তুলসী গাছের অপরিহার্যতা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। সাধারণত তুলসী গাছ তুলসী দেবী নামে প্রচলিত ও পূজিত হন। ভারতের, শ্রীলংকার ঘরে ঘরে তুলসী দেবীর নিত্য পুজো হয়ে থাকে। তুলসী গাছের মাহাত্ম্য শুধুমাত্র পুরাণ মতেই নয় বৈজ্ঞানিক মতেও অপরিহার্য। তুলসী বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্ত রাখে। তুলসী গাছ বাড়িতে রাখলে যে কোন বাজে আকর্ষণ থেকে বাড়ি মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত তুলসী মধুসহ সেবন করলে সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৬. পিস লিলি প্ল্যান্টস
পিস লিলি প্ল্যান্টস খুবই সুন্দর ছোট্ট প্রকৃতির হয়। এগুলি সহজেই বাড়িতে রাখা যেতে পারে। এই গাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই গাছের সুন্দর ফুল। ফুলগুলি সাদা রংয়ের হয় এবং এই গাছগুলি যত্ন করা খুবই সহজ হয় এবং এই গাছগুলি কৃত্তিম আলোতেও বেড়ে ওঠে। আমেরিকান মতে পিস লিলি খুবই শান্তি প্রদায়ক একটি গাছ। সাদা শান্তির প্রতীক অবশ্যই এই গাছ বাড়িতে রাখলে বাড়ির শান্তিপূর্ণতা বজায় থাকে। সপ্তাহে একদিন এই গাছকে জল দিতে হয়, একদিনের বেশি এই গাছে জল দিলে গাছটির মরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফুল সমেত গাছগুলি দেখতে খুবই সুন্দর লাগে। যদি আপনি আপনার ব্যালকনির সৌন্দর্যতা আরো বাড়াতে চান তবে অবশ্যই পিস লিলি প্ল্যান্টস বাড়িতে রাখুন।
৭. অর্কিড প্ল্যান্টস
সবথেকে সুন্দর ফুলের গাছ হলো অর্কিড। শুধুমাত্র সুন্দর ফুল বলেই নয়, অর্কিডের একটি বৈশিষ্ট্য হলো যে ভালোবাসায় সৌভাগ্য নিয়ে আসে অর্থাৎ ফরচুন ইন লাভ প্ল্যান্টস বলা হয়। লোকমুখে শোনা যায় অর্কিড মানুষের জীবনে সঠিক পার্টনার খুঁজে দেয়ার কাজও করে। এছাড়াও অর্কিড বাড়িতে রাখার একটি প্রধান কারণ হলো এই গাছ রাত্রিবেলা অক্সিজেন ছারে। যার ফলে রাত্রে বাড়ির পরিবেশ যথেষ্ট সুন্দর থাকে। অর্কিড বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে ছোট-বড়, তবে বাড়িতে রাখার জন্য ছোট অর্কিড অথবা পোটেড অর্কিড রাখা বেশি উপকারী ও সহজ হয়।
৮. স্নেক প্ল্যান্টস
স্নেক প্ল্যান্টস সাধারণত সাপের মতো ও লম্বা প্রকৃতির দেখতে হয়। এই গাছ বাড়িতে রাখলে খুবই সুন্দর দেখতে লাগে। এই গাছের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দুটি বৈশিষ্ট্য হল এক নম্বর যে বাড়িতে লোক সংখ্যা প্রচুর সেই বাড়িতে এই গাছ রাখা খুবই উপকারী এবং দুই নম্বর এই গাছ বাড়ির বাতাসকে টক্সিন মুক্ত করতে খুবই সাহায্য করে। এছাড়াও এই গাছের যত্ন করা খুবই সহজ সপ্তাহের যেকোনো একদিন এই গাছে জল দিতে লাগে ও এই জায়গায় সূর্যের আলো তীক্ষ্ণ নয় সেইখানে একে রেখে দিতে হয়।
৯. সুইটহার্ট প্ল্যান্টস
সুইটহার্ট প্ল্যান্টস দেখতে খুবই সুন্দর হয়। এই গাছগুলির আকৃতি কিছুটা হার্ট অ্যাঙ্গেলের হয়। এই গাছের উপকারিতা হলো এগুলি বাতাসের দূষিত পদার্থ শুষে নিতে সক্ষম হয় এবং এগুলি বাড়িতে রাখলে খুব সুন্দর দেখতে লাগে। এই গাছ গুলির দেখাশুনা করাও খুবই সহজ। ৩-৪ সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এই গাছে জল দিতে হয়। এই গাছগুলি আপনি যেখানে সেখানেই রাখতে পারেন ও চাইলে কাউকে উপহারও করতে পারেন।
১০. জাডে প্ল্যান্টস
জাডে প্ল্যান্টস সাধারণত বাড়িতে রাখা হয় সুখ-সমৃদ্ধির জন্য। এই গাছগুলি বাড়িতে বা কাজের জায়গায় রাখলে অনেক ক্ষেত্রে লাভদায়ী হয়ে থাকে। জাডে প্ল্যান্টস রাখার সবথেকে সঠিক জায়গা হল বাড়ির প্রবেশের দরজার সামনে। লোকমুখে শোনা যায় এই গাছ যে কোন জায়গার প্রবেশ এর সামনে রাখলে সেই জায়গার মালিকের অনেক উন্নতি হয়। সেটি বাড়ি হোক বা কাজের জায়গা। এই গাছগুলির যত্ন করাও খুবই সহজ হয়।
তাহলে আর দেরি না করে নিজের বাড়ির পরিবেশ সুন্দর বজায় রাখতে, নিজের জন্য ও সমগ্র জীবকূলের জন্য গাছ লাগান। যে সমস্ত গাছ বাড়িতে লাগানোর উপযোগী ও তাদের কিছু উপকারিতা রয়েছে সেগুলি বিশ্লেষন করার চেষ্টা করলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে, কোন কোন গাছ আপনাদের বাড়িতে রয়েছে বা আরো অনান্য গাছের উপকারিতা আমাকে কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।