কি করে বুঝবেন কী হয়েছে আপনার ? সাধারণ জ্বর নাকি করোনা সংক্রমিত জ্বর । আপাত দৃষ্টিতে দুক্ষেত্রে উপসর্গ অনেকটাই এক হলেও কীভাবে বুঝেনেবেন সাধারণ জ্বর এবং কোভিড19 র তফাৎ, জেনে নিন ।

2020 সালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল করোনা ভাইরাস অথবা কোভিড19 । প্রথমদিকে এই ভাইরাসটির সংক্রমণ শুধুমাত্র চীনে হলেও, ক্রমে ভাইরাসটি ছরিয়ে পরেছে সমগ্র বিশ্বে । ভারতর্ষেও দিন দিন বেরে চলেছে করোনা সংক্রমণের হার । এহেনো পরিস্থিতিতে সাধারন ঋতু পরিবর্তন ঘটিত জ্বর (influenza), সর্দি, কাশি হলেও, করোনা সংক্রমণ ভেবে উদ্বেগের সঞ্চার ঘঠছে মানুষের মনে । প্রাথমিকবস্তায় কোভিড19 এবং সাধারন জ্বরের লক্ষ্যন একই হওয়ার দরুন মানুষ অনায়সেই বিভ্রান্ত হচ্ছে । সেই বিভ্রান্তি দূরকরবার একটি প্রচেষ্টা করা হল এই প্রচ্ছদে । কোভিড19 এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটিত জ্বরের পার্থক্য আলোচনা করার আগে একটু আলোকপাত করা যাক তাদের সাদৃশ্যে ।
কোভিড19 এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটিত জ্বরের (influenza) সাদৃশ্য
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে শরীরে যে রোগের সঞ্চার হয় তাকে বলা হয় কোভিড19 (Coronavirus Disease 2019) এবং সাধারন ঋতু পরিবর্তনের ফলে যে জ্বর সর্দি, কাশি হয় তার জন্য দায়ি হল ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস । দুটিক্ষেত্রেই প্রাথমিকবস্তায় সংক্রমণজনিত লক্ষ্যন গুলি একই রকম । উভয়ক্ষেত্রেই লক্ষনগুলি হালকাবস্তা থেকে গুরুতরবস্তার দিকে যেতে পারে । দুটি ভাইরাস ই শরীরের শ্বাসযন্ত্রের ওপরে সবার আগে তার প্রভাব বিস্তার শুরু করে এবং ক্রমে সেই প্রভাবে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও জ্বর আসে । উভয়ক্ষেত্রেই কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে যদি সাধারন সুস্থ্য মানুষ আসে তাহলে তাদের মধ্যেও সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে অধিক । বৃদ্ধ এবং বাচ্চা দের মধ্যে এই উভয় ভাইরাসেরই সংক্রমণ আলাদাই উদ্বগের সৃষ্টি করে । তবে অনেকক্ষেত্রে শরীরের মধ্যে থাকা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা এই দুই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লরতে সাহায্য করে ।
:max_bytes(150000):strip_icc()/coronavirus-flu-differences-4798752-v1-46194f3009ac4f3d80b4078fd180bbb7.png)
কোভিড19 এবং ঋতু পরিবর্তন ঘটিত জ্বরের (influenza) পার্থক্য
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এবং করোনা ভাইরাস উভয়েই শরীরের শ্বাসযন্ত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করলেও কোভিড19 র ক্ষেত্রে ভাইরাসটি সংক্রমণ করে শ্বাসযন্ত্রের নীচের ট্র্যাক্টে যেই কারনহেতু আক্রান্ত রোগীর শুকনো কাশি, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট, নিউমোনিয়া জনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু গলায় ব্যাথা কখনই থাকে না কিন্তু সাধারন সর্দি কাশিতে গলা ব্যাথা অতি সাধারন একটি লক্ষ্যন । এখানে এটাও উলেখ্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমণ ছারাও সামান্য ঠান্ডা লেগে গলা ব্যাথা, কাশি এবং জ্বর হতে পারে । কাপুনী দিয়ে জ্বর সচরাচর ভাইরাস ঘঠিত জ্বরের ক্ষেত্রেই দেখা যায় ।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ইন্ক্যুবেশন সময় কোভিড র থেকে অনেকটাই কম । এই ইন্ক্যুবেশন সময়টি হল শরীরে ভাইরাস ঢোকা থেকে প্রথম উপসর্গ দেখা দেওয়া পর্যন্ত সময় । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ইন্ক্যুবেশন সময় 1-4 দিন সেখানে কোভিড র সময়সীমা হল 1-14 দিন । তবে কোভিডের থেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম । করোনা ভাইরাস রাইবোভিরিয়া পর্বের করোনাভিরিডি গোত্রের অন্তর্গত একটি আর এন এ (RNA) ভাইরাস । এই ভাইরাসটির উপরিভাগে থাকা প্রোটিন সমৃদ্ধ পেপলোমা স্পাইক গুলি সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে ।
করোনা ভাইরাসের আনুবীক্ষনিক গঠনে দেখা যায় যে স্পাইক, এনভেলপ, মেমব্রেন এবং নিউক্লিওক্যাপসিড নামক চার ধরনের প্রোটিন উপস্থিত থাকে । করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময় ভাইরাল স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন পরিপূরক বাহক কোষের রিসিপ্টরে যোগ হয় এবং বাহক কোষ থেকে নিঃসৃত প্রোটিয়েজ রিসিপ্টর-সংযুক্ত স্পাইক প্রোটিন গুলিকে বিদীর্ণবস্তায় সক্রিয় করে তুলতে সক্ষম হয় । বাহক কোষে অনুপ্রবেশের পর করোনা ভাইরাসের বাইরের আবরনী মুক্ত হয় এবং কোষ সাইটোপ্লাজমে এর RNA জিনোম প্রবেশ করে । এই RNA বাহক কোষের রাইবোজোম এর সাথে সংযুক্ত হয় এবং ক্রমে অগঠনমূলক প্রোটিন তৈরী হয় । ধীরে ধীরে প্রোটিন গুলি অনুলিপিকরন শুরু করে এবং সংক্রমিত শরীরের বাহক কোষ গুলি ক্ষতির দিকে এগিয়ে যায় । গবেষনাসুত্রে জানা যায় সার্স করোনা ভাইরাস অ্যাঞ্জিওটেনসিন রুপান্তরিত এনজাইম 2, মানবকোষে সংযুক্তির মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটায় ।

অপরদিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও রাইবোভিরিয়া পর্বের অর্থোনাভিরিডি গোত্রের অন্তর্গত একটি আর এন এ (RNA) ভাইরাস । চার ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মধ্যে তিনটি ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করে যেগুলো টাইপ এ, টাইপ বি, এবং টাইপ সি হিসেবে অভিহিত। তবে টাইপ ডি ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস মানুষকে সংক্রান্ত করার মত ক্ষমতা রাখে বলে কিছু গবেষকের ধারনা ।
এই ভাইরাসের আবরনে হিমোগ্লটানিন এবং নিউরোমিনিডেজ নামক দুটি প্রোটিন থাকে । এক্ষেত্রে হিমোগ্লটানিন পরিপূরক বাহক কোষের রিসিপ্টরের সাথে যোগ হয় এবং নিউরোমিনিডেজ বাহক কোষে RNA কে উন্মুক্ত করে । এরপর ভাইরাসের অনুলিপিকরন শুরু হয় এবং মানবদেহের গলা, শ্বাসনালী এমনকি নাকে এই সংক্রমণ ছরিয়ে পরে । সঠিক ওষুধের গুনে এবং একটু বিশ্রাম নিলে, শরীরে উপস্থিত রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতার সাহায্যে 2-3 দিনের মধ্যেই জ্বর সেরে যায় এবং কিছুদিনের মধ্যে রুগী সুস্থ্য হয়ে ওঠে । তবে ব্যাক্তিবিশেষে ইনফ্লুয়েঞ্জা ঘঠিত সংক্রমণও চিন্তার সৃস্টি করে । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায় অনায়াসে তাই এক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ঘঠিত জ্বর হওয়া রুগীদের মধ্যে উদ্বগের সঞ্চার একটু কম লক্ষ্যণীয় ।
তাই জ্বর হলেই এটা ভাবার কোনো কারন নেই যে আপনার বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্যের করোনা হয়েছে । সঠিক ল্যাব টেস্ট না করিয়ে অযথা না ঘাবরিয়ে সঠিক চিকিৎসা করুন এবং মানসিক ভাবে না ভেঙে পরে নিজের এবং আপনজনের যথাযথ খেয়াল রাখুন ।
এখানে অবশ্যই উলেখ্য যে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত ব্যাক্তির ঘ্রান শক্তি এবং খিদে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে এই বৈশিষ্ঠটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস সংক্রমিত অথবা সাধারন ঠান্ডা লেগে জ্বর আসা রুগীর মধ্যে দেখা যায় না । তবে গবেষনা শুত্রে দেখা গেছে ব্যক্তিবিশেষে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রুগীর জ্বর নাও আসতে পারে ।

সুতরাং বলাই বাহুল্য জ্বর এলেই যে করোনা হয়েছে সেই ভেবে ভয় পাবেন না । জ্বর না এলেও ঘ্রান শক্তি হ্রাস কিংবা মুখে অবসাদ অনুভব করলে এবং শরীরের অনান্য অস্থিরতা অনুভব করলে, এছারা জ্বর হলে 3-4 দিনে না কমলে, পেশীতে ব্যাথা থাকলে, মাথা ব্যাথা বা দুর্বলতা অনুভব করলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শরীরের বিশেষ যত্ন নিন । যেহেতু এখনও পর্যন্ত কোনোপ্রকার ভ্যাকসিন কোভিড19 র জন্য বাজারে আসেনি তাই যথাসম্ভব নিজেদের খেয়াল রাখুন, সরকার দ্বারা অনুমোদিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ কাজ সম্পন্ন করার চেষ্ঠা করুন ।
রোগ | উপসর্গ |
করোনা ভাইরাস | জ্বর, গায়ে ব্যাথা, শ্বাস কষ্ট, শুকনো কাশি, ডাইরিয়া, মাথা ব্যাথা, খাওয়ারে অবসাদ, ঘ্রাণ শক্তি হ্রাস ইত্যাদি |
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস | জ্বর (উচ্চ তাপমাত্রা সম্পন্ন), সর্দিতে মিউকাস, কাশি, নাক বন্ধ, গায়ে ব্যাথা, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা ইত্যাদি |
ঠান্ডা | সর্দি দিয়ে রঙবিহীন নির্গত মিউকাস, মাথা ব্যাথা, গলা ব্যাথা (সাধারনত এক্ষেত্রে উচ্চ তাপমাত্রা সম্পন্ন জ্বর আসে না ) ইত্যাদি |
অ্যালার্জি | হাল্কা জ্বর, শ্বাস কষ্ট, নাক দিয়ে জল, চোখ, মুখ বা নাকে চুলকোনি ইত্যাদি |
এক নজরে দেখেনিন করোনা না অন্য জ্বর
উপরোক্ত লেখাটি আপনাদের কেমন লাগল তা নীচের কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানান । এছারা করোনা ভাইরাস অথবা অন্য কোনো ভাইরাস সম্পর্কিত আরো তথ্য জানতে চাইলে তাও অবশ্যই উল্যেখ করুন ।
আরো পরুন :