একটা সুন্দর হাসিতে যেমন মানুষকে কুপকাত করা যায় তেমনই একটি বিশ্রী হাসিতেও মানুষকে কুপকাত করা যায়।
এই দুই হাসি আর কুপকাত শব্দ দুটি এক হলেও অর্থবহ সম্পুর্ন আলাদা। সুন্দর হাসিতে কুপকাত এর অর্থ সুন্দর দাঁতের হাসি দেখে মোহীভুত হওয়া অর্থাৎ এখানে কুপকাতটা আনন্দের। আবার অন্যদিক বিশ্রী হাসিতে কুপকাতের অর্থ কুচসিৎ দাঁতের হাসি দেখে মুর্ছা যাওয়া। এতএব স্পষ্ট এই দুই হাসি সম্পুর্ন ভিন্ন। কারণ দাঁতের গঠন ভেদেই হাসির সৃষ্টি হয়। প্রত্যেকের মুখের আসল সৌন্দর্য্য ফুটে ওঠে তাঁদের হাসির মাধ্যমে , আর হাসি তখনি সুন্দর হবে যখন দাঁত সুন্দর হবে।
হ্যাঁ আজ পুরো প্রতিবেদন জুড়ে থাকবে দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যা নিয়ে তথ্য। কি জন্য দাঁতের ক্ষয় ঘটে। তাই প্রতিবেদনটি খুব ভালো করে পড়তে হবে।
দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না“
উক্তিটি কম বেশী সকলকেই শুনতে হয়েছে, কাউকে ছোট বয়সে কাউকে আবার প্রাপ্ত বয়সে। উক্তিটি কিন্তু ১০০ ভাগ খাটি। যারা বর্তমানে দাঁতের ক্ষয়জনিত সমস্যায় ভুগছেন তারা অবশ্যই স্বীকার যাবেন। এখন তারা ভাবছেন যদি গুরুজনদের এই কথাটি একটু আগে শুনতাম তালে আজ দাঁত নিয়ে এই সমস্যায় ভুগতে হত না।
দাঁতের সমস্যার ধরন?
ছোট হোক কিংবা মাঝারি বা প্রাপ্ত বয়ষ্ক সকলেরই দাঁতের ক্ষয় হয়, কারোর দাঁতে পোকা আছে, কারোর আবার গর্ত, কারোর ঠাণ্ডা বা মিষ্টি খেলে দাঁত সির সির করে, কারোর পাইরিয়া আছে, কারোর মাড়ি ফুলে যায়, কারোর মাড়ি ফেটে রক্ত পড়ে, কারোর বাজে গন্ধ হয়, কারোর দাঁতের মাঝে ফাঁকা, আবার কারোর দাঁত হলুদ, তো কারোর দাঁতে পাথর, নয়তো দাঁতে মোটা কালো পুরু দাগ। এই ধরনের সমস্যা সকলের। কিন্তু এই সমস্যাগুলির উৎপত্তি কিভাবে তা অনেকেরই অজনা। আজ আপনাদের জানাব এই সমস্যা গুলি কেন হয়, যাতে ভবিষ্যতে দাঁতের আরও ক্ষতির করার হাত থেকে বিরত থাকতে পারেন।
‘ডেন্টাল ক্যারিজ’ কি ?
দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার প্রধান কারণ এটি। দাঁতের গঠন নিয়ে ভাবলে দেখা যাবে দাঁতে দুটি জিনিষ বিধ্যমান প্রথম এনামেল, এরপর ডেনটিন। এই দুই স্তরের যদি ক্ষতি হয় তাহলে দাঁতের সর্বনাশ। আমাদের দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ দাঁতের প্রথম স্তর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। । দ্বিতীয়ত, দ্বিতীয় স্তর ডেনটিন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। একেই বলে দাঁতে ক্যারিজ হচ্ছে অর্থাৎ ক্ষয় হচ্ছে।
এই ডেন্টাল ক্যারিজ হয় ভুলভাবে ব্রাশ করার ফলে। আবার আমরা যে খাবার খাচ্ছি এতে কার্বোহাইড্রেট বা সুগার থাকে। যদি খাবার আটকে থাকে এবং একে বের না করা হয় এখানে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ কবে আর ক্যারিজ হয়।
এনামেল ক্ষয় কি ?
ছোটবেলায় দাঁত অনেকের সাদা ছিল তবে এখন হলুদ হয়ে যাচ্ছে। দুধের রঙ্গের মতো সাদা দাঁত পরিনত হচ্ছে গাদা ফুলের মতো হলুদে। এটা ৯০ ভাগ মানুষের সমস্যা। আর এই সাদা থেকে হলুদে পরিণত হওয়াই হল এনামেল ক্ষয়।
কিভাবে বুজবেন এনামেল ক্ষয় হচ্ছে ?
আমাদের দাঁতের এনামেলের রং সাদা আর এনামেলের নিচের যে অংশটুকু রয়েছে সেটা হলুদ। এনামেল যখন ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে ডেনটিন বের হচ্ছে। তখন স্বাভাবিক ভাবেই হলুদ রং বের হয়ে আসছে। তখন সেই হলদেভাবকে নির্মূল করার জন্য জোড়ে জোড়ে ব্রাশ করি কারণ আমরা ভাবি দাঁত ঠিকমতো ব্রাশ করছি না বলেই হলুদ হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। জোড়ে ব্রাশ করার ফলে তখন আরো ক্ষয় হয়ে যায় সাদা হওয়ার বদলে দাঁত আরো হলুদ হয়ে যায়। যখনই ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যাচ্ছে, এর কারণ এনামেল ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে ।
কী কী কারণে দাঁতের ক্ষয়রোগ হতে পারে?
১) সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ না করার কারণে দাঁতে ক্ষয় হয়। আমরা দাঁত ব্রাশ করি একে যত্নে রাখার জন্য। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, ভুলভাবে ব্রাশ করার কারণে দাঁত ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে।
২) ঘন ঘন স্ন্যক্স ও ড্রিঙ্ক্র খাওয়ার ফলে দাঁতের ক্ষয় হয়। এই ধরনের খাবার খেয়ে আমরা সহজে মুখ ধুই না, ফলে দাঁতের মধ্যে সেগুলি লেগে থাকে আর ফলে দাঁতের ক্ষয় হয়।
৩) দাঁত দিয়ে হাতের নখ কাটছেন। সে ক্ষেত্রেও দাঁত ক্ষয় হয়ে যায় সাথে নখের সকল ময়লা পেটে যায়। পেটের সমস্যা থেকেও দাঁতের সমস্যা হয়।
৪) অনেক সময় দাঁত দিয়ে সুতো কাটি, এতে দাঁতে দাঁতে ঘর্ষণের সৃষ্টি হয় এতে দাঁত ক্ষয়ে যায়।
৫) ঘুমের মধ্যেও অনেকের দাঁত কামড়ানোর অভ্যাস থাকে, এই বদ অভ্যাসগুলোর কারণেও অনেকের দাঁতের সমস্যা হয়। মাড়ি আলগা হয়ে যায়।
৬) মানুষ পান-সুপারি, জর্দা ইত্যাদি খায়। অথবা শক্ত কোনো খাবার ইচ্ছামতো চিবিয়ে খায়, এ ক্ষেত্রেও দাঁত ক্ষয় হয়।
৭) দাঁতের এবরেশনের কারণে সমস্যা হচ্ছে। দাঁতের ফাঁকে খাদ্যকণা জমে থাকলে, এটি যদি আমরা বের করতে না পারি সে ক্ষেত্রে পরবর্তী কালে এটি ধীরে ধীরে পাথর হয়ে যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও দাঁত ক্ষয় হয়ে যায় এমনকি গর্ত হয়ে যেতে পারে।
৮) অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্ত ধরনের ব্রাশ ব্যবহার করছে। আর দির্ঘ্যকালীন শক্ত ব্রাশ ব্যাবহারের ফলে দাঁতের উপর চাপ পড়ে, অনেক সময় মাড়ি কেটে যায়, এমন কি দাঁতের গোঁড়ায় আঘাত পড়ে।
৯) ফ্লোরাইড আর অপর্যাপ্ততার ফলে মুখ শুষ্ক হয়ে যায় এর থেকে ক্ষয়জনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়।
১০) শরীরে পুষ্টির ঘাটতির ফলে যেমন বিকাশে বাঁধা সৃষ্টি হয় ঠিক তেমনই দাঁতের বিকাশ ঠিকভাবে হয় না।
১২) অনেক সময় গ্যাস বা হজমের সমস্যা থাকলে ক্ষয় হয়, গ্যাসের ফলে যে অ্যাসিডের সৃষ্টি হয় তার থেকেই দাঁত ক্ষয়ে যায়।
১৩) দাঁতের মধ্যে ময়লা, খাদ্যকনা জমতে জমতে ক্ষয়ের পারদ পরতে থাকে।
১৪) মিষ্টি জাতীয় খাবার, কফি, আঠালো খাবার, অম্লযুক্ত খাবার থেকে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
১৫) ধূমপান, গুটখা, জর্দা এই ধরনের হানিকর পদার্থ থেকেও দাঁতের ক্ষতি হয়,এগুলি একপ্রকার দাঁতের ক্ষেত্রে বিষ , এতে দাঁত কালো হয়ে যায়, মাড়ি থেকে দাঁত আলগা হয়ে যায়, দাঁত একে ওপরের থেকে সরতে থাকে ফলে ফাঁকা হয়ে যায়। যার দরুন সেই দাঁতে যে কেউ হাসলে তার হাসি কদাকার লাগে।
তাহলে দেখলেন তো আমাদের দাঁত কিভাবে দিনের পর দিন ক্ষয় হচ্ছে। অনেকে জেনে বুঝে করছে, আবার অনেকে অগোচরেই ক্ষতি হচ্ছে। এই এই সকল বিষয় থেকে দূরে থাকুন। কারণ নিজস্ব দাঁত চলে গেলে সেটি হাজারো চেষ্টায় ফিরিয়া আনা সম্ভব নয়, যতই লকল দাঁত বসান। তাই নিজের দাঁতের খেয়াল নিন। এই বিষয়ক কোন মতামত থাকলে আমাদের অবশ্যই জানান। বা আপনি এই সমস্যার ভুক্তভুগি কিনা তাও আমাদের সাথে ভাগ করে নিন। অবশেষে বলব সুস্থ থাকুন, দাঁতের যত্ন নিন।
[…] আরও পড়ুনঃ দাঁত ক্ষয়ে যাচ্ছে, মাড়ি দিয়ে… […]