নিজস্ব সংবাদদাতা: একসময় তাঁর ভরা সংসার ছিল। দুই ছেলে, পুত্রবধূ, নাতি-নাতনি নিয়ে খুশিতেই ছিলেন। কিন্তু কপালে যদি কষ্ট লেখা থাকে, সেই বিধির বিধান খণ্ডাবে কে? মহারাষ্ট্রের বৃদ্ধ অটোচালক দেসরাজের জীবনের গল্পও খানিকটা সেরকমই। দিনভর অটো চালান, আর তারপর রাতে সেই অটোতেই শুয়ে পড়েন। কারণ? দেসরাজের কোনও বাড়ি নেই! নাতনির স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি নিজের বসত বাড়িটা বেঁচে দিয়েছেন!

এত কিছুর পরেও দেসরাজের চোখমুখ ভাবলেশহীন। কষ্টের ছাপ নেই। মুখে দরাজ হাসি, নেই কোনও অভিযোগ, নেই কোনও নালিশ… তার এহেন জীবনীশক্তি দেখে ফিদা নেটিজেনরাও! সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেসরাজের কাহিনী ভাইরাল হয়েছে। সেই গল্প সামনে আসার পর তারাও সাহায্য করতে চান বৃদ্ধ ও তাঁর পরিবারকে। কিন্তু সুখের পরিবারে এমন দুঃখ নেমে আসার কারণ কী?

দেসরাজ জানিয়েছেন, তাঁর প্রতি জীবন সদয় ছিল না! কয়েক বছরের ব্যবধানে দুই ছেলের মৃত্যু হয়। বড় জন ৬ বছর আগে বাড়ি থেকে কাজের জন্য বেরিয়েছিলেন, আর ফেরেননি। পরে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনার ২ বছর পর আত্মঘাতী হন ছোট ছেলেও। আর তারপরই দুই পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনিদের দায়িত্ব এসে পড়ে একা দেসরাজের ওপর। একই সঙ্গে ছিল অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ বহন করা।

মুম্বইয়ের খার এলাকায় অটো চালান দেসরাজ। মাসে সব মিলিয়ে হাজার দশেক উপার্জন করেন। এর মধ্যে ৬,০০০ টাকাই চলে যায় নাতি-নাতনিদের পড়াশোনার খরচ চালাতে। বাড়িতে সদস্য ৭ জন। বাকি ৪,০০০ টাকায় কোনওক্রমে চলছিল সংসার! কিন্তু সমস্যা হল যখন দেসরাজের বড় নাতনি দ্বাদশের পরীক্ষায় দারুণ ফল করার পর দিল্লীতে বি.এড কোর্স করতে যেতে চায়। দেসরাজ জানতেন, সাধ থাকলেও তাঁর সামর্থ নেই! তাই বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিলেন মাথার ওপর ছাদটুকুও!

বাড়ি বিক্রির সেই টাকায় নাতনিকে পড়তে পাঠিয়ে দিলেন দিল্লীতে আর পরিবারের বাকি সদস্যদের ঠাঁই হল গ্রামে। তাঁদের তিনি পাঠিয়ে দেন গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু পেট চালাতে দেসরাজ থেকে গেলেন শহরেই। ছাদ হারিয়ে তাঁর নতুন ঠিকানা হল অটো! বৃদ্ধ দেসরাজের কথায়, ”আমার সব কষ্ট নিমেষে মুছে যায়, যখন নাতনি ফোন করে বলে ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে।” দেসরাজ বলছেন, “নাতনির গ্র্যাডুয়েশন পাশ হয়ে গেলে পুরে হফতে সবকো ফ্রি রাইড দুঙ্গা।” তাঁর এই জীবনীশক্তি দেখে অবাক নেটিজেনরা। তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চান এই গর্বিত দাদুর দিকে। যাতে আবার নিজের পরিবারকে নিজের শহরে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসতে পারেন।