নিজস্ব সংবাদদাতা: বাঙালিদের শৈশব-কৈশোর জুড়ে রয়েছে হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে কিংবা বাঁটুল দ্য গ্রেটের কাণ্ডকারখানা৷ কেল্টুদার খুনসুটি, সুপারিন্টেন্ডেন্ট হাতিরাম পাতি বা ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু, বাহাদুর বেড়াল, একের পর এক অমর সৃষ্টি। ছোটবেলার কথা উঠলে এসব মনে পড়তে বাধ্য৷ এই হাঁদা ভোদা, নন্টে ফন্টে, বাঁটুলেরা তাঁর কলমেই আমাদের মননে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। যা পড়েই বড় হয়ে উঠেছে আপামার বাঙালি। আবার হয়ত বড় হয়েও হতে চায়নি। এবার সেই সৃষ্টিকর্তা নারায়ণ দেবনাথই ভূষিত হতে চলেছেন পদ্মশ্রী সম্মানে

পদ্মশ্রী
Wikipedia

আমাদের ছোটবেলায় রবিবার মানেই ছিল সকালে অথবা বিকেলে হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে কিংবা বাঁটুল দ্য গ্রেটের কাণ্ডকারখানার চোখ ডুবিয়ে বসে থাকা। আজও ছোট্টবেলার নস্ট্যালজিয়ায় সেই কমিকসের পাতা। সেই কেল্টুদা-র বজ্জাতি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা৷ এখনও ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করতে গেলে এসব মনে পড়তে বাধ্য৷ শুধুই কি চরিত্রগুলো, এদের সৃষ্টিকর্তার নামও তো বাঙালির মুখে মুখে। হ্যাঁ, প্রবাদপ্রতীম নারায়ণ দেবনাথ। বাঙালির এই প্রিয় মানুষকেই দেওয়া হচ্ছে পদ্মসম্মান।

এবছরও রীতি মেনেই সাধারণতন্ত্র দিবসের আগের দিন পদ্ম পুরস্কারের তালিকা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। প্রতি বছরই এমনটাই হয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, ২০২১ সালে সর্বোচ্চ পদ্ম সম্মান পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন সাত জন। ১০ জন পাচ্ছেন পদ্মভূষণ। আর পদ্মশ্রী পাচ্ছেন ১০২ জন। এ বছর শুধু বাংলা থেকেই পদ্মশ্রী পাচ্ছেন সাত জন। তার মধ্যেই শিল্পজগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য রয়েছেন প্রবীণ লেখক ও কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথ।

12 53 17 images
anandabazar

প্রসঙ্গত, নারায়ণ দেবনাথের পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের বিক্রমপুরে। তবে তাঁর জন্ম ১৯২৫ সালে হাওড়া জেলার শিবপুরে। ভর্তি হন ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের চিত্রকলা বিভাগে। সময়টা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের৷ আর এই টালমাটাল সময়ের কারণে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি তিনি। কিন্তু তত দিনে অপার উৎসাহে রপ্ত করেছেন আঁকাআঁকির যাবতীয় কলাকৌশল আর দর্শন।

কেরিয়ার শুরু প্রসাধনসামগ্রীর লোগো, মাস্টহেড আর সিনেমা কোম্পানির বিভিন্ন লিফলেটের কাজ জুটতে লাগল টুকটাক করে। কাজের মান দেখে বাজারে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়তে মোটেই দেরি হয় নি। কিন্তু এটুকুতে সাধ ভরছিল না তাঁর। নতুন কিছু করার স্বপ্ন তাঁকে ভাবিয়ে চলছিল। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তাঁর হাতে এসে যায় শুকতারা পত্রিকা। ব্যস, সেখানেই প্রথম তাঁর হাত থেকে সৃষ্টি হয় বাঁটুল দ্য গ্রেট৷ তারপর একে একে নন্টে-ফন্টে ও হাঁদা ভোঁদা। যা কিনা বাঙালির ছোটবেলাকে এখনও মাতিয়ে রাখে। এতদিনে বাঙালির সেই চিরাচরিত আবেগ, নস্ট্যালজিয়া পেল জাতীয় স্বীকৃতি।