বিদেশে পড়াশোনার আগে জেনে নিন

আমাদের পরিচিত অনেকেই , বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখে।‌ তবে এক্ষেত্রে সঠিক তথ্য না জানার কারণে বহুদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় না। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য সব বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। দেশের বাইরে পড়াশোনার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি দরকার পড়ে‌। আর তাতে শুধুমাত্র পরীক্ষার ভালো ফল না , ভালো কাঠামোর দরকার পড়ে‌। কিছু বিষয় সম্পর্কে আগে থেকে জানা থাকলে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।‌
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চমাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বা ডক্টরেট করতে লোকেরা বিদেশে যায়। প্রসারিত দক্ষতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে চাইলে বিদেশে উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

বিদেশ
ecampusnews

উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে কেন যাবেন ?





১. আত্মসমৃদ্ধি – যারা বিদেশে পড়তে যান, তারা নানা ধরনের অভিজ্ঞতা, বুদ্ধিমত্তা, মননশীলতার দিক থেকে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠেন। স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার জন্য দক্ষভাবে কাজ করতে পারে ও চিন্তাধারা উন্নত হয়। যেকোনো চ্যালেঞ্জিং কাজ সফল হওয়ার জন্য তাদের গুণ বিকশিত হয়।‌ বিদেশে নতুন একটি সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ও সেখান থেকে অর্জিত জ্ঞান পড়ুয়াকে অধিকতর আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

২. নতুন দৃষ্টিভঙ্গি – বিদেশে অবস্থানের ফলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক দিক সম্পর্কে জ্ঞানভান্ডার বাড়বে। ভিন্ন সংস্কৃতির লোকজন, তাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা, সমস্যা সমাধানের রীতিনীতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন। বিদেশে বসবাসকালীন আপনি বিদেশি ভাষা শেখার গুরুত্ব উপলব্ধি করবেন। ফলত, আপনি বিশ্ব সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হবেন।

৩. পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি – বিদেশে উচ্চশিক্ষা ব্যক্তিত্বকেই সমৃদ্ধ করবে না, ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি এবং চাকরির ক্ষেত্রে আপনার পেশাগত দক্ষতা খুবই মূল্যবান ভূমিকা রাখবে। চাকরির বাজারে আপনার চাহিদা ও বিশেষ গুরুত্ব থাকবে। বিদেশফেরত গ্র্যাজুয়েটরা আন্তর্জাতিক জ্ঞান ও কৃষ্টি–কালচারে সমৃদ্ধ এবং মাতৃভাষা ছাড়াও এক বা একাধিক ভাষাতে দক্ষ—মূলত এই দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়োগ করে।

images 40 5
the statemam

লক্ষ্য নির্ধারণ

বিদেশে যাওয়ার আগে নিজের লক্ষ্য স্থির করুন। এর সাথে জড়িয়ে আছে আপনার ভবিষ্যৎ। বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার অনেক দিক থাকতে পারে‌। তবে তা যেন সার্থক হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, একটি ভিন্ন দেশের মাটিতে জীবন যাপন এবং শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়াটা অনেক সময় কঠিন ও শ্রমসাধ্য হয়ে ওঠে। তাই নিজের লক্ষ্যের ব্যাপারে যত বেশি সচেতন ও উদ্যোগী হবেন, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তত বেশি লাভবান হবেন।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি

১| নিজেকে প্রস্তুত করুন – যেকোনো পেশায় সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজন সৃষ্টিশীল গুণ। এ ক্ষেত্রে প্রথম প্রস্তুতি হতে পারে পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রস্তুত করা।শুধু পড়াশোনাই যথেষ্ট নয়, এ ক্ষেত্রে বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটির সঙ্গেও জড়িত থাকা প্রয়োজন। সেটা হতে পারে নাচ, গান, আবৃত্তি, খেলাধুলায় পারদর্শী, স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করার অভিজ্ঞতা, বিতর্ক বা ডিবেট, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, ফিজিকস অলিম্পিয়াডের মতো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার বিষয় ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো বাইরে পড়তে যাওয়ার জন্য বিশেষ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এসবের পাশাপাশি কোথাও পার্টটাইম কাজ করার অভিজ্ঞতাও একটি ভালো যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়।

২| ইংরেজি ভাষায় দক্ষ – বিদেশে পড়তে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ইংরেজি ভাষায় ভালো দখল থাকতে হবে।ইংরেজিতে দক্ষতা যাচাই করার জন্য বিশ্বজুড়ে সাধারণত দুটি পদ্ধতি বেশি প্রচলিত, একটি হচ্ছে আইইএলটিএস এবং অন্যটি হচ্ছে টোফেল। যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে পড়তে যেতে চাইলে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আপনাকে আইইএলটিএস স্কোরের তথ্য দিতে হয় আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা প্রভৃতি দেশে টোফেল স্কোর প্রয়োজন হয়। আবার কোনো কোনো দেশে দুটি পদ্ধতিই গ্রহণযোগ্য। আর ইংরেজি ভাষা দক্ষতার এসব স্কোরের মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকে। তবে চিন, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে যেতে চাইলে ওই সব দেশের ভাষা আগে শিখে নেওয়াটা ভালো। এইসব ভাষা জানা থাকলে এই ভাষাভাষীর দেশগুলোতে বৃত্তি পাওয়া অনেক সহজ হয়, আবার পার্টটাইম কাজের ক্ষেত্রেও এই ভাষার দক্ষতা বিশেষ উপকারে আসে।

৩| প্রোগ্রাম নির্ধারণ – পেশাগত উন্নতি ও লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য কোন ধরনের প্রোগ্রাম বা কোর্স আপনার জন্য উপযুক্ত তা আগে খুঁজে বের করুন। বর্তমানে উচ্চশিক্ষা কোর্সের মধ্যে এমন কোর্স বাছতে হবে যা ভবিষ্যতে পেশাগত দক্ষতার প্রস্তুতি হিসেবে গণ্য হয়। তবে সাধারণত বিদেশের পাশাপাশি আমাদের দেশেও যথেষ্ট চাহিদা আছে, এমন কোনো কোর্সকে উচ্চশিক্ষার জন্য নির্বাচন করাই ভালো।

images 39 6
topuniversities



৪| দেশ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচন– বিদেশে পড়াশোনার জন্য দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিন সময় নিয়ে। কারণ, সব দেশে পড়াশোনার সুযোগসুবিধা এক রকম নয়। যেমন কোন দেশে টিউশন ফি বেশি আবার কোনো দেশে টিউশন ফি কম। আবার, কোথাও পার্টটাইম কাজ করা যায়, কোথাও পার্টটাইম কাজ করা নিষিদ্ধ। কোনো দেশের স্কলারশিপ সংক্রান্ত তথ্য। নির্দিষ্ট দেশের আবহাওয়া বা নাগরিকত্ব তথ্য জেনে তা সময় নিয়ে ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে দেশ নির্বাচন করুন। আপনি যে দেশে পড়ালেখার জন্য যেতে চাইছেন সেই দেশে আপনার পরিচিত কেউ থাকলে,তাদের কাছ থেকে বিশদে জেনে নিন। বর্তমানে প্রত্যেকটি দেশেরই বিভিন্ন বিভাগের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইট আছে।

৫| প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি – বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে অবশ্যই আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (যেমন: সার্টিফিকেট, ট্রান্সক্রিপ্ট ইত্যাদি) ইংরেজি ভাষায় হতে হবে। সাম্প্রতিককালে দেশের সব শিক্ষা বোর্ড কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই পরীক্ষার সনদপত্র বা নম্বরপত্রগুলো ইংরেজিতে করে থাকে। তবে যেসব কাগজপত্র ইংরেজিতে করা নেই সেগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করে নিতে হবে।উল্লেখ্য, ছবি এবং প্রয়োজনীয় সব ফটোকপি অবশ্যই সত্যায়িত করে নিতে হবে। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ শাখা থেকে সব কাগজপত্রের মূল কপি দেখানো সাপেক্ষে বিনা মূল্যে সত্যায়িত করা যায়।