আমরা আজকাল সবচাইতে বেশি হারিয়ে ফেলছি মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা। সময়টা ভীষণ দ্রুত কাটছে আমাদের সবার । কারোর কোনও দিকে ভালোভাবে তাকানোরই সময় যেন নেই। নতুন প্রজন্ম তো আরও ভীষণভাবে এই ফাস্ট লাইফের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হারিয়ে ফেলছে ধীরস্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে কোনও জিনিসের প্রতি মনোযোগ দেবার ক্ষমতা। আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে যেমন শরীরে, তেমনই মানুষের মনেও বড্ড বেশি। ঘুম কমে যাচ্ছে, চোখের তলায় কালি পড়ছে, মেদ বৃদ্ধি হচ্ছে, নানান রোগব্যাধি জাঁকিয়ে বসছে শরীরে।
এই প্রজন্মের মানুষজন সবচাইতে বড়ো যে সমস্যায় ভুগছেন তা হল মনঃসংযোগের অভাব। পড়াশোনা বা অন্য যেকোনো কাজ করতে হলে শান্ত ভাবে মনঃসংযোগ করা ভীষণই জরুরি। না হলে কোনও কাজেই নিজের একশ শতাংশ দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে উন্নতির ক্ষেত্রেও ঠিক যেমনটি চাই তেমনটি পাওয়া সম্ভব হয় না আর। কিন্তু তা হলে তো বেশিদিন চলে না। আর সমস্যাও এমন গুরুতর কিছুই নয়। বরং মনঃসংযোগ বাড়াবার জন্য হাতের কাছেই রয়েছে অব্যর্থ কিছু অস্ত্র। জেনে নেওয়া যাক তাদের কথা-
পর্যাপ্ত ঘুম
ঘুমের সঙ্গে মনঃসংযোগের একটা বড়সড় যোগাযোগ রয়েছে। কম ঘুম হলে বা ঘুম ঠিকমতন না হলে পরবর্তী সময়ে কেউই কাজে মন দিতে পারেন না। ওই জন্য অনেক সময়ে দেখা যায় রাতের শিফটে মানুষ চাকরি করতে খুব বেশি আগ্রহী হন না কারণ ঘুম বারবার পেলে কাজের দিক থেকে ফোকাস নড়ে যেতে বাধ্য। তাই বলে এটাও ভাবা ভুল হবে যে ঘুম বেশি হলেই কাজে মন বসবে ভীষণভাবে। মূলত বয়সের অনুপাতে প্রয়োজনীয় ঘুম শরীরের জন্য এনার্জি বাড়াবার কাজটা করে। আর সেই এনার্জি কাজে মন বসাতে সবচাইতে বেশি সহায়ক।

মেডিটেশন আর যোগাসন
https://www.artofliving.org/in-en/meditation/meditation-for-you/how-to-improve-concentration
মনোযোগ বাড়াতে এই সময়ে প্রাণায়াম, যোগাসন, মেডিটেশন ম্যাজিকের মতন কাজে দিচ্ছে। দিনের মধ্যে অল্প কিছু সময় কোনও শোরগোল নেই এমন কোনও জায়গায় গিয়ে যদি নিঃশ্বাসের এক্সারসাইজ করা সম্ভব হয়, অল্প কিছুক্ষণ ধ্যান বা মেডিটেট করা যায়, তা মানসিক অস্থিরতা কমাতে ভীষণ সাহায্য করে। সমস্ত সেলিব্রিটিরাও ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যে থেকে তাই যোগাসন আর মেডিটেশনের জন্য অল্প সময় বের করে নেন। আর তাঁদের ফলো করে অনেক কিছুই তো করা হয়, এটুকুও তাই চেষ্টা করা যেতেই পারে।

সুষম খাদ্য
ইদানিং আমাদের সবারই বাড়ির বাইরের তেল মশলা দেওয়া খাবারের প্রতি ঝোঁক ভীষণ বেড়ে গিয়েছে। বিশেষ করে এখনকার ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা দিন কাটায় পিজ্জা, বার্গার, নুডলস, মোমো, পাস্তা, সুশি, এসবের উপরেই। আর এ সব শরীরে মেদ বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রভাব ফেলে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও। যার অনিবার্য ফল হচ্ছে মনঃসংযোগে ঘাটতি। বোঝাই যাচ্ছে ফাস্ট ফুড বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য গ্রহণ করলেই এই সমস্যা খুব সহজে মিটে যাওয়া সম্ভব।

মিউজিক থেরাপি
পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশেই এখন শরীর সুস্থ রাখতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে মিউজিক থেরাপির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। নামটা শুনে খুব জটিল প্রক্রিয়া বলে মনে হলেও আসলে এটা যে কেউ যে কোনও সময়েই নিজের উপর প্রয়োগ করতে পারে। খুব মনোযোগ প্রয়োজন এমন কোনও কাজ করার সময় খুব হালকা কোনও গান বা ইন্সট্রুমেন্টের বাজনা সেই সময় ফোকাসড হতে আর মনঃসংযোগ বাড়াতে ভীষণ সাহায্য করে। মনকে শান্ত করতেও মিউজিক থেরাপির জুড়ি মেলা ভার!

No Gadgets
https://banglakhabor.in/2020/11/18/%e0%a6%95%e0%a7%81%e0%a6%96%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%a4-%e0%a6%8f%e0%a6%95-%e0%a6%ae%e0%a6%b0%e0%a6%a3%e0%a6%ab%e0%a6%be%e0%a6%81%e0%a6%a6/?preview_id=4332&preview_nonce=f5d0039345&preview=true&_thumbnail_id=4448
আমরা সবাই এখন যন্ত্রের দাসত্ব করছি। ঘুম ভাঙ্গার পর থেকে রাতে ঘুমোতে যাবার আগে পর্যন্ত কোনও মানুষ নয়, শুধু যন্ত্রই আমাদের সঙ্গী। মোবাইল, কম্পিউটার, স্পিকার, হেডফোন, ট্যাব, নোটপ্যাড এই সমস্তই আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রন করছে। ফলে আশেপাশের মানুষের দিকে, এমনকি নিজের দিকেও আমরা নজর দিতে ভুলে যাচ্ছি। মনঃসংযোগ নষ্ট হবার জন্য এইই যথেষ্ট। অথচ আজকালকার দিনে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট ছাড়া জীবন চলে না। কিন্তু দিনে অল্প কিছুক্ষণ নিজেকে এই সমস্ত যন্ত্রের থেকে দূরে রাখা খুব অসম্ভব নয়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে আর রাতে ঘুমোতে যাবার আগে যেন কোনও ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট আমাদের কাছাকাছি না থাকে। ক্রমশ এটা করতে পারলে মনঃসংযোগ বজায় রাখতে একটুও অসুবিধা হবে না আর।

ফলে বোঝাই যাচ্ছে মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্য প্রবল পরিশ্রম করার বা কঠিন কিছুই করার তেমন দরকার নেই। শুধু রোজকার অভ্যাসে একটু বদল আনলেই এটা সহজে সম্ভব, তাই না? আপনারা কি বলেন? মতামত জানান আমাদের কমেন্ট সেকশনে।