এবার চতুর্থ দফার ভোট। রাজ্যে আট দফার ভোটের মাঝপর্ব। শনিবার রাজ্যের ৪৪টি আসনে হবে ভোটগ্রহণ। ধারাভারে, আসন সংখ্যার বিচারে আগের তিন দফার চেয়ে চতুর্থ দফার ভোটের আকর্ষণ অনেক বেশি। চলতি বিধানসভা নির্বাচনে এই প্রথম ভোট ঢুকছে উত্তরবঙ্গে। পাশাপাশি তৃতীয় দফার পর এবার চতুর্থ দফাতেও হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণার ৩০টি আসনে হবে ভোট। তৃতীয় দফায় এই তিন জেলার ৩১টি আসনে ভোট হয়েছিল। চতুর্থ দফায় ভোটে তৃণমূল-বিজেপি-র মধ্যে জোর লড়াই হবে। উত্তরবঙ্গে যে ১৪টি আসনে ভোট হচ্ছে, সেখানে ২০১৯ লোকসভায় বিজেপি ১২টি-তে এগিয়ে ছিল, তৃণমূল মাত্র ২টিতে। আবার দক্ষিণবঙ্গে যে ৩০টি আসনে ভোট হচ্ছে সেখানে তৃণমূল এগিয়ে ছিল ২৩টি-তে, বিজেপি ৭টিতে। একটিতেও সংযুক্ত মোর্চা এগিয়ে ছিল না।

উত্তরবঙ্গে ৫৪টি আসনের মধ্যে শনিবার ১৪টি আসনে ভোট। বাবুল সুপ্রিয় থেকে লকেট চ্যাটার্জি। শ্রাবন্তী চ্যাটার্জি, অঞ্জনা বসু থেকে পায়েল সরকার। মনোজ তিওয়ারি থেকে কাঞ্চন-যশ দাশগুপ্ত-র মত সেলেবদের ভাগ্য পরীক্ষা হতে চলেছে চতুর্থ দফায়। সেলেবদের পাশাপাশি রাজ্যের বড় নেতামন্ত্রীদেরও ভাগ্যপরীক্ষা হতে চলেছে চতুর্থ দফায়। যার মধ্যে আছেন- পার্থ চ্যাটার্জি (বেহালা পশ্চিম), অরূপ বিশ্বাস (টালিগঞ্জ), রবীন্দ্রনাথ ঘোষ (নাটাবাড়ি), বেচারাম মান্না (সিঙ্গুর), উদয়ন গুহ (দিনহাটা) নিশীথ প্রামাণিক (দিনহাটা), সুজন চক্রবর্তী (যাদবপুর), মহম্মদ সেলিম (চণ্ডীতলা), রাজীব ব্যানার্জি (ডোমজুড়), রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (সিঙ্গুর)। নজরকাড়া কেন্দ্র হিসেবে থাকছে সিঙ্গুর, টালিগঞ্জ, ডোমজুড়। সব মিলিয়ে হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রী, সেলেব প্রার্থী, নজরকাড়া কেন্দ্র সবই বেশি অনেক সংখ্যায় থাকছে চতুর্থ দফায়।

আরও পড়ুন: চতুর্থ দফায় যে কেন্দ্রগুলোতে ভোট হবে সেখানে বেশ কয়েকটি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতেই হবে তৃণমূল এবং বিজেপিকে

লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে দারুণ ফল করেছিল বিজেপি। এবার বাংলায় ক্ষমতায় আসতে হলে উত্তরবঙ্গে ভাল ফল বজায় রাখতে হবে বিজেপিকে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ডুই আর ডাই অবস্থা। এই ১৪টি আসনের বেশিরভাগ কেন্দ্রেই লোকসভায় বিজেপির বড় লিড ছিল। সিতাই আর দিনহাটা কেন্দ্র বাদে বাকি ১২টি আসনেই এগিয়ে বিজেপি। তবে ২০১৬ বিধানসভায় তৃণমূলের ভাল হয়েছিল। ২০১৯ লোকসভার পর রাজ্যে রাজনৈতিক সমীকরণে বড় বদল ঘটার পর উত্তরবঙ্গে কী হয় সেটাই দেখার। বিজেপির টার্গেট উত্তরবঙ্গে ৫৪টি আসনের মধ্যে ৫০টি জয় ছিনিয়ে নেওয়া। আর তৃণমূলের লক্ষ্য অন্তত ৪টি আসন। দুই ফুলের এই বড় টার্গেট পূরণ করতে হলে শনিবার উত্তরবঙ্গের যে ১৪টি আসনে ভোট সেখানে ভাল ফল করতেই হবে।

অন্যদিকে, হাওড়ার যে ৯টি কেন্দ্রে ভোট হবে সেখানে একমাত্র হাওড়া উত্তর কেন্দ্র ছাড়া সবতেই এগিয়ে তৃণমূল। তবে লোকসভা ভোটের পর হাওড়া জেলার রাজনীতিতে বড় সমীকরণের বদল হয়েছে। মন্ত্রী রাজীব ব্যানার্জি ও বালির বিধায়ক বৈশালি ডালমিয়া দল ছেড়েছেন। এই দফাতেই রাজীব, বৈশালীর ভাগ্য পরীক্ষা হবে। তৃণমূলের হেভিওয়েটদের দল বদলে বিজেপির এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু প্রার্থীপদ নিয়ে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব কিছুটা হলেও পদ্মশিবিরকে অস্বস্তিতে রাখছে।

শনিবার হুগলিতে ১০টি কেন্দ্রে ভোট। এই ১০টি আসনের মধ্যে লোকসভায় ৬টি আসনে এগিয়ে ছিল বিজেপি। সবার নজর সিঙ্গুরের দিকে। সিঙ্গুরে তৃণমূলের প্রার্থী সেই বেচারাম মান্না, প্রতিপক্ষ মাস্টার মশাই। যে রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ক্ষোভে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে টিকিট পেয়েছেন। হুগলির চুঁচুড়া থেকে প্রার্থী হয়েছেন লকেট চ্যাটার্জি। যে লকেট এই চুঁচুড়া থেকে লোকসভা ভোটে ২০ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এই জেলার আরও একটা আসনের দিকে নজর থাকবে, যেখানে লড়াই ত্রিমুখী। সেটি হল চণ্ডীপুর। এখানে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়েছেন বিধায়ক স্বাতী খন্দকর, সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিম আর বিজেপি প্রার্থী করেছে টলি তারকা যশ দাশগুপ্তকে।

দক্ষিণ ২৪ পরগণার ১১টি কেন্দ্রে ভোট। এখানে সংযুক্ত মোর্চা ফ্যাক্টার হবে। টালিগঞ্জ কেন্দ্রের দিকে সবার নজর। এখান থেকে লড়ছেন বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস, প্রতিপক্ষ হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, লড়াইয়ে আছেন বাম প্রার্থী দেবদূত ঘোষও। ভাঙড়ে আরাবুল ইসালমকে প্রার্থী না করার পরেও তৃণমূল জেতে কি না দেখার। যাদবপুরে সুজন চক্রবর্তীর বড় পরীক্ষা। এই সব কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে সেভাবে দাগ কাটাতে পারেনি বিজেপি। এবার পদ্মের ছাপ কতটা থাকে সেটাই দেখার। দুই বেহালায় দুই নায়িকা কতটা ফাইট দেন সেটাও দেখার।

যে সব জায়গায় ভোট: উত্তরবঙ্গ (১৪টি আসনে) -মেখলিগঞ্জ, মাথাভাঙা, কোচবিহার উত্তর, কোচবিহার দক্ষিণ, শীতলকুচি, সিতাই, দিনহাটা, নাটাবাড়ি, তুফানগঞ্জ, কুমারগ্রাম, কালচিনি, আলিপুরদুয়ার, ফালাকাটা, মাদারিহাট।

দক্ষিণবঙ্গ (৩০টি আসনে) -সোনারপুর দক্ষিণ, ভাঙড়, কসবা, যাদবপুর, সোনারপুর উত্তর, টালিগঞ্জ, বেহালা পূর্ব, বেহালা পশ্চিম, মহেশতলা, বজবজ, মেটিয়াবুরুজ, বালি, হাওড়া উত্তর, হাওড়া মধ্য, শিবপুর, হাওড়া দক্ষিণ, সাঁকরাইল, পাঁচলা, ডোমজুড়, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর, চাঁপদানি, সিঙ্গুর, চন্দননগর, চুঁচুড়া, বলাগড়, পাণ্ডুয়া, সপ্তগ্রাম, চণ্ডীতলা।