ডিপফেক কী তা জানা আছে? এদিকে ওদিকে নামটা শুনে থাকবেন কিংবা ইতিমধ্যেই আপনিও সেটির উপভোক্তা। একটু স্পষ্ট করা যাক।
কেজরিওয়াল ভোটের আগে কি কি প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং পরে কতটুকু রাখতে পেরেছেন, তাই নিয়ে কিছুদিন আগে মনোজ তেওয়ারি কথা বলছিলেন, ভাষাটা ছিল হারিয়ানভি। এরপর সেই একই ভিডিওতে দেখা যায় তেওয়ারি কথাগুলো বলছেন ইংরিজিতে।
আবার, ন্যান্সি পেলোসি একটা প্রেস মিটিঙে বক্তব্য রাখছেন সেই ভিডিও সবাই দেখেছেন কিন্তু একই ভিডিওর আরেকটি সংস্করণ ভাইরাল হল যেখানে একই দৃশ্যে মনে হচ্ছে ন্যান্সি অতিরিক্ত মদ্যপান করে এসে কথা বলছেন । কিংবা হয়তো দেখে থাকবেন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের কোন এক প্রেস কনফারেন্সে দেওয়া স্পীচ খুব ভাইরাল হয়েছে। প্রেসিডেন্টের মুখ, কন্ঠ, পারিপার্শ্বিক সবকিছুই স্বাভাবিক, কিন্তু পরে জানলেন অন্য কারো শরীরে প্রেসিডেন্ট এর মস্তকটি সুপার ইম্পোস করা হয়েছে। প্রেস কনফারেন্সের ঘটনাটি আসলে ঘটেইনি বাস্তবে। কি বলবেন! অবিশ্বাস্য, তাই না ? এসবই আসলে ডিপফেকের কারসাজী।
কি এই ডিপফেক? আসুন জেনে নিই ডিপফেক সম্পর্কে দুচার কথা।
![সত্য বলি সত্য নাই ডিপফেক এল তাই! ডিপফেক কি? আসুন জেনে নিই 2-4 কথা। 1 ডিপফেক কি? জেনে নিন](https://banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/168939-manojweb.jpg)
ডিপফেক ( Deepfake) কি?
ডিপফেকের অন্তর্নিহিত শ্লেষ হলো ” গভীরভাবে জালি”। এটি এমন এক সংশ্লেষক মাধ্যম যা কোনো ছবি বা ভিডিওতে উপস্থিত কোনো মানুষের মুখে আপনার পছন্দমত মানুষের মুখ প্রতিস্থাপন করতে পারে। এর ফলে একটি গোটা ঘটনা আমূল বদলে যেতে পারে। যাকে বলতে পারেন রাতারাতি সত্য জাল করা, এটি একপ্রকার তাই।
ডিপফেকের জন্মকথা ও নামকরণ
নব্বইয়ের দশকে ব্যবহৃত মুখ অদলবদল বা ফেস স্যাপিং টেকনোলজিই পরবর্তীকালে ফিল্ম সি জি আই তে উন্নীত হয়ে একটি দৃশ্যের চরিত্রদের সর্বাঙ্গীণ বদলে সক্ষম নতুন একটি প্রযুক্তির জন্ম দেয় যার নাম ‘। ২০১৪ সালে আয়ান গুডফেলো নামের একজন আমেরিকান পি এইচ ডি গবেষক এই প্রযুক্তির উদ্ভব ঘটান। তবে ‘ডিপফেক’ নামটি জনপ্রিয় হয় ২০১৭ সালে। একদা একজন রেড্ডিট ব্যবহারকারী ‘ডিপফেক’ নামে একটি প্রোফাইল চালাতেন, সেখানে বিভিন্ন সেলেব্রিটির মুখ অন্যান্য শরীরে বসিয়ে পর্ণোগ্রাফিক ভিডিও আপলোড করতেন। রেড্ডিট কমিউনিটি থেকেও এই ধরনের অনেক ভিডিও ক্লিপ আপলোড করা হতো। এছাড়া বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্রের দৃশ্য কেটে নিয়ে সেখানে একজন অভিনেতার মুখের জায়গায় অন্য অভিনেতার মুখ বসিয়ে ভিডিও ক্লিপ বানানো হচ্ছিল।
এইভাবেই জাল ভিডিও তৈরির বিষয়টি জনপ্রিয় হয়ে ‘ডিপফেক’ নামে পরিচিত হতে শুরু করে। ২০১৮ সালে একটি ডেক্সটপ অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে ‘ফেক অ্যাপ ‘ লঞ্চ করে যাতে ডিপফেক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মানুষের মুখ অনায়াসে বদলে দেওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু পরে অডিও ডিপফেকের ব্যবস্থা হলে মানুষের কণ্ঠস্বরও ক্লোন করা হতে লাগলো। ২০২০ সালের মার্চ মাসে গুগল প্লেস্টোরে পৌঁছে গেল ‘রিফেস’ এর মত অ্যাপ। যারা ‘ফেসঅ্যাপ’ ব্যবহার করেন, এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, ডিপফেক কীভাবে রোবটিক্সের দুনিয়া অতিক্রম করে এখন সাধারনের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে !
![সত্য বলি সত্য নাই ডিপফেক এল তাই! ডিপফেক কি? আসুন জেনে নিই 2-4 কথা। 2](https://banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/190729_dt_deepfake_hpMain_16x9_992.jpg)
![সত্য বলি সত্য নাই ডিপফেক এল তাই! ডিপফেক কি? আসুন জেনে নিই 2-4 কথা। 2](https://banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/190729_dt_deepfake_hpMain_16x9_992.jpg)
কীভাবে কাজ করে ডিপফেক?
এই প্রযুক্তি মূলত জেনারেটিভ অ্যাডভারসারিয়াল নেটওয়ার্কস বা সংক্ষেপে ‘জ্যান্স’এর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। জ্যান্স একটি বিশেষ ধরনের আল্গরিথমের মাধ্যমে শ্রেণিবদ্ধ ডেটাগুলিকে নিয়মের বাইরে সংবর্তন করে নতুন বিন্যাস দিতে সক্ষম, যার ফলে সৃষ্টি হতে পারে নতুন চিত্র কিংবা আসল চিত্রটিও যথেচ্ছ মাত্রায় পরিবর্তন করা যেতে পারে। যেমন, একজন ব্যাক্তির একটিমাত্র ছবি থেকে জ্যান্স গোটা ভিডিও তৈরি করে ফেলতে পারে। আপাতত কেবল কথা বলা মানুষের মুখ প্রতিস্থাপনেই এই প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়েছে। ডিপফেক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেলেব্রিটি পর্ণোগ্রাফিক ভিডিওতে, ভুয়ো খবর এবং রাজনৈতিক বিদ্রুপ তৈরি করতে।
![সত্য বলি সত্য নাই ডিপফেক এল তাই! ডিপফেক কি? আসুন জেনে নিই 2-4 কথা। 3 সত্য বলি সত্য নাই, ডিপফেক এল তাই! ডিপফেক কি? জেনে নিন](https://muktopran.com/wp-content/uploads/2020/10/90446-Converted.jpg)
![সত্য বলি সত্য নাই ডিপফেক এল তাই! ডিপফেক কি? আসুন জেনে নিই 2-4 কথা। 3 সত্য বলি সত্য নাই, ডিপফেক এল তাই! ডিপফেক কি? জেনে নিন](https://muktopran.com/wp-content/uploads/2020/10/90446-Converted.jpg)
ডিপফেক ভাল না খারাপ?
ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক ত্রাশ নামে পরিচিতি পেয়েছে ডিপফেক। নেট দুনিয়ায় বিভিন্ন ভুয়ো খবর কারও মুখ দিয়ে বলিয়ে নিতে ডিপফেকের জুরি নেই। ভোটের মরশুমে একজন নেতার মুখে বসিয়ে দেওয়া যায় অন্য দলের নেতার বিরুদ্ধে কটুক্তি কিংবা বিকৃত নানা মন্তব্য। বিখ্যাত মানুষদের একদিনে অপদস্ত করতে ভাইরাল হয়ে যেতে পারে তাঁদের মুখে বসানো অবাঞ্ছিত বক্তব্যের ভিডিও। এছাড়া, ডিপফেক রমরমিয়ে চলছে পর্ণোগ্রাফির বাজারেও। সেলেব্রিটি পর্ণ তৈরি করা এখন আর কোন ব্যাপারই নয়, নিখুঁতভাবে আপনার পছন্দের তারকার মুখ বসে যেতে পারে অন্য কোনও পর্ণ-অভিনেতার শরীরে। এরপর আর যা কিছু অনুমান করছেন সেসবও শুরু হয়ে গেছে সমাজের আনাচে-কানাচে, তাই ডিপফেকের যাত্রাপথ বিশ্বের একাংশের কাছে অত্যন্ত আতঙ্কের অধ্যায়।
কোন ভার্চুয়াল দৃশ্য বা শ্রব্য উপাদানই এখন আর বিশ্বাসযোগ্য নয়, নেটদুনিয়ায় শুরু হয়ে গেছে সাইবার যুদ্ধ। ছোটবেলায় রচনা লিখতেন কিন্তু বুঝতে পারতেন না , বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ, এখনও কি পারেন? বিজ্ঞানের আধুনিক পরিচিতি যদিও ‘ওয়েপন’ বা অস্ত্র হিসেবেই খ্যাত, আর তাতে ভর করেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে একজন আরেকজনকে টেনে নিচে নামানোর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। ডিপফেক সেখানে প্রতিনিয়ত সত্যপ্রমাণ সহ বিভিন্ন নতুন সত্যের নির্মাণ করে চলেছে , যার মূল কথা -“ আসলে সত্যি বলে সত্যিই কিছু নেই’’।
আরও পড়ুনঃ
[…] […]
[…] […]